কলিকালে প্রচুর আয় সত্ত্বেও ঋণ জালে জড়িয়ে থাকবে জীবন! কেন? জানাচ্ছে বিষ্ণু পুরাণ
ODD বাংলা ডেস্ক: বিষ্ণু পুরাণে কলিযুগের বিভিন্ন ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়। এই পুরাণে কলিযুগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানানো রয়েছে। এই পুরাণে বিষ্ণুর অবতার ও চরিত্র ছাড়াও বিভিন্ন কালের রাজবংশ জনগণের অবস্থাও বর্ণিত রয়েছে। বিষ্ণু পুরাণের ষষ্ঠ অংশের প্রথম অধ্যায়ে কলিধর্মনিরুপণ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। মহর্ষি বেদব্যাসের পিতা মহর্ষি পরাশর মৈত্রেয় ঋষিকে কলিযুগের ঘটনার যে বিস্তৃত বিবরণ দিয়ে ছিলেন তা এখানে উল্লিখিত রয়েছে। এই পুরাণে কলিযুগে ব্যক্তির আয় সম্পর্কেও উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে মহর্ষি পরাশর স্পষ্ট সংকেত দিয়েছেন যে কলিযুগে লক্ষাধিক আয় সত্ত্বেও ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত থাকবে। কেন এমন বলেছেন তিনি জেনে নেওয়া যাক।
অর্থই হবে কলিযুগের ধর্ম-কর্ম
মহর্ষি পরাশর মৈত্রেয় ঋষিকে জানান যে, কলিযুগ অত্যন্ত বিচিত্র একটি যুগ হবে। সৎযুগ, ত্রেতাযুগ ও দ্বাপর যুগে যে ধর্মীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, তা এই যুগে এসে শেষ হয়ে যাবে। যেনতেনপ্রকারেণ অর্থ উপার্জনই ব্যক্তির ধর্ম ও কর্ম হয়ে থেকে যাবে। কলিকালে অর্থই শক্তি ও প্রভাব ব্যাখ্যা করবে। তাই সকলে নিজের প্রভাব ও শক্তি প্রদর্শনের জন্য ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্ম বিচার না-করেই যে ভাবেই হোক অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যাকুল থাকবেন। তবে প্রচুর অর্থ উপার্জন সত্ত্বেও ব্যক্তি সন্তুষ্ট থাকবেন না। ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত থেকে যাবে।
কলিযুগে লক্ষপতি ও কোটিপতিও ঋণ-জালে জড়িয়ে থাকবেন
কলিযুগের গুণ ধর্ম ব্যাখ্যা করে ঋষি পরাশর মৈত্রেয় ঋষিকে বলেন যে, কলিযুগে মনুষ্য যতই উপার্জন করুক না-কেন, তা তার কাছে কমই থাকবে, উন্নতির অনুভূতি থাকবে না সেই ব্যক্তির মনে। ব্যক্তি কোটি টাকা উপার্জন করলেও, নিজের জন্য বাড়ি বানাতে গিয়ে সমস্ত অর্থ ব্যয় করে দেবে। বর্তমানে আমরা বাড়ি কেনার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে থাকি এবং বছরের পর বছর ধরে সেই ঋণ শোধ করে যাই। একটি ঋণ শোধ হয়ে গেলে নতুন সম্পত্তির জন্য ঋণ নিয়ে থাকি। এ কারণে ব্যক্তি কলিযুগে যত উপার্জন করবে, তত ব্যয় করবে ও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে। বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী ঋণে ডুবে থাকা ব্যক্তিদের দেখে লক্ষ্মী দূরে থাকেন। এর ফলে ব্যক্তি যত উপার্জনই করুক না-কেন, তাঁদের কখনও উন্নতির অনুভূতি থাকে না। মানসিক অবসাদ বজায় থাকে।
অর্থ মানুষকে অহংকারী করে তুলবে
মহর্ষি পরাশর বলেছেন যে, ব্যক্তি সামান্য ধনী হয়ে গেলে ও কোনও পদ লাভ করলে অহংকারী হয়ে পড়বে। সামান্য অর্থবান হওয়ার পরই তাঁদের মনে অহংকার ভরে যাবে এবং তাঁরা অপর ব্যক্তিকে পায়ের তলায় রাখার চেষ্টা করবেন। নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত করার প্রতিযোগিতা শুরু হবে। সৎযুগ, দ্বাপর যুগ ও ত্রেতা যুগে ব্যক্তির কাছে যে পরিমাণ অর্থ থাকত, তাঁরা তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন, নিজেকে ক্ষুধার্ত রেখেকে অতিথিদের সৎকার করতেন। তবে কলিযুগে ব্যক্তি অতিথি, দান-পুণ্যে অর্থ ব্য়য় করার পরিবর্তে নিজের সুখ-বিলাসিতায় ব্যয় করবেন।
কলিযুগে অর্থের মাহাত্ম্য
কলিকালে অর্থই সব। বিবাহের জন্য ব্যক্তির গুণ, জ্ঞান ও কর্ম নয়, বরং তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি বিচার করা হবে। অর্থবানদের সঙ্গেই বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চাইবেন সকলে। নিন্দনীয় বা পাপকর্মে রত অর্থবান ব্যক্তিরাও সকলের সম্মান লাভ করবেন। দান-ধর্ম করার সময় বিস্তর হিসেবনিকেষ করবেন সকলে। কলিকালে স্বল্প দান করলেই ধর্মাত্মার তকমা পাবেন।
Post a Comment