এআই মানব সভ্যতাকে ধবংস করতে পারে - হকিং সতর্ক করেছেন বার বার

 


ODD বাংলা ডেস্ক: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে পা রেখেছে মানব সভ্যতা; এই পরিবর্তনের চালিকাশক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নও হচ্ছে তারই হাত ধরে। খবর গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস অবলম্বনে 


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে জোর আলোচনার এ সময়ে, যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা মানব কল্যাণে ব্যবহার হবে এমন আশাবাদ যেমন রয়েছে; তেমনি তা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে – এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত হচ্ছে।  


এআই-নিয়ন্ত্রিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন প্রযুক্তি দুনিয়ার হোমড়াচোমড়া ব্যক্তিত্ব টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এবং অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক। কিন্তু, তাদেরও অনেক আগে জগৎখ্যাত এক বিজ্ঞানী দিয়েছিলেন এমন ভবিষ্যদ্বাণী; তিনি হলেন ২০১৮ সালে প্রয়াত হওয়া তাত্ত্বিক পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং।   


২০১৪ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হকিং মতপ্রকাশ করেন  যে, প্রাথমিক ধরনের এআই এরমধ্যেই যথেষ্ট শক্তিশালী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই বাস্তবতায়, মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে চ্যালেঞ্জ করবে বা তাকে ছাড়িয়ে যাবে – এমন এআই তৈরি করা হলে তা মানবজাতির জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।    


হকিংয়ের লেখা শেষ গ্রন্থ- 'ব্রিফ এন্সারস টু দ্য বিগ কোয়েশ্চেনস'। বইয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তার উদ্বেগ উঠে এসেছে। হকিং লিখেছেন, আগামী ১০০ বছরের মধ্যেই বুদ্ধিমত্তায় মানুষকে পেছনে ফেলবে কম্পিউটার। এআই উন্নয়নের ঝুঁকিকে গুরুত্ব সহকারে না নেওয়াটা 'আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হবে' এমন সতর্কবাণীও দেন তিনি। 


বিজ্ঞান জগতে হকিং ছিলেন বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তার চিন্তাধারার প্রভাব আরো অনেকদিন ধরেই অনুভব করা যাবে। হকিং যে আশঙ্কা করেছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তারই ছাপ দেখা গেছে ইলন মাস্ক ও স্টিভ ওজনিয়াকের উদ্বেগ প্রকাশের ঘটনায়। 


গত মার্চে প্রযুক্তি দুনিয়ার এ দুই নেতা – ওপেনএআই এর জিপিটি-৪ চ্যাটবটের চেয়ে শক্তিশালী এআই তৈরির প্রচেষ্টা বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো একটি চিঠিতে সই করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, 'মানুষের সাথে প্রতিযোগীতায় সক্ষম এআই মানবজাতি ও সমাজের জন্য সুগভীর হুমকি তৈরি করতে পারে'।      


এদিকে জিপিটি-৪ এর চেয়ে শক্তিশালী এআই তৈরির গবেষণা স্থগিত রাখার আহ্বান সত্ত্বেও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তা কানে তুলছে না। বরং বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে আরো উন্নত এআই তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে।


গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনের খোলনলচে পাল্টাতে চায়; এর বদলে নতুন একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করতে চায়, যা এআই নিয়ন্ত্রণ করবে। মাইক্রোসফটের নতুন বিং সার্চ ইঞ্জিনে এআই যুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, 'ম্যাক্সিমাম ট্রুথ সিকিং' নামক একটি প্রতিদ্বন্দ্বী এআই সিস্টেম বাজারে আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইলন মাস্ক।  


আজকের এই বাস্তবতায়, হকিং যেন আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন। মৃত্যুর আগে তিনি সদুপেশ দিয়েছিলেন, 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে, বা তা মোকাবিলায় – মানুষকে প্রস্তুতি নেওয়া শিখতে হবে'। 


অবশ্য তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, ভবিষ্যৎ কী বয়ে আনবে তা এখনও অজানা। হয়ত সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত হলে এআই মানবকল্যাণেও লাগতে পারে।  


২০১৭ সালে পর্তুগালে ওয়েব সামিট টেকনোলজি কনফারেন্সে দেওয়া বক্তৃতায় হকিং বলেছিলেন, 'কার্যকর এআই তৈরির সাফল্য মানব সভ্যতার সর্বোচ্চ মাহেন্দ্রক্ষণ হতে পারে, অথবা হতে পারে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কোনটা সত্যি হবে আমরা এখনও জানি না। তাই আমাদের জানা নেই, এআই আমাদের চির-সহযোগী হবে, নাকি আমাদের অবজ্ঞা করবে এবং একপর্যায়ে আমাদের ধবংসের সূচনা করবে'।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.