বজরংবলীর এই ১০ তথ্য অনেকেরই অজানা, চমকে যাবেন আপনিও!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: হিন্দু ধর্মে যে ৮ চিরঞ্জীবীর কথা বলা হয়, তার মধ্যে অন্তম হলেন বজরংবলী। তিনি কলিযুগের দেবতা। মনে করা হয় আজও পৃথিবীতে বজরংবলী জীবিত রয়েছেন। এমনকি যেখানে যেখানে রামচরিতমানস, সুন্দরকাণ্ড পাঠ বা রামের পুজো করা হয়, সেখানে বজরংবলী কোনও না-কোনও রূপে উপস্থিত থাকেন। ব্যক্তি নিজের ভয় দূর করতে সাহস ও শক্তি অর্জনের জন্য বজরংবলীর পুজো করে থাকেন। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে হনুমানকে অধিক বলশালী দেবতার আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে বজরংবলীর সম্পর্কে বেশ কিছু কথা আমরা এখনও জানি না। বজরংবলীর সঙ্গে জড়িত ১০টি চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরা হল এখানে।


১. পাঁচ ভাই ছিলেন বজরংবলী


আপনারা হয়তো জানেন না যে বজরংবলীর আপন ৫ ভাই ছিলেন। এই পাঁচ ভাইই বিবাহিত ছিলেন। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এই পুরাণে বজরংবলীর পিতা কেসরী ও তাঁর বংশের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই পুরাণ অনুযায়ী বানররাজ কেসরীর ৬ পুত্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন হনুমান। বজরংবলীর ভাইয়ের নাম হল- মতিমান, শ্রুতিমান, কেতুমান, গতিমান ও ধৃতিমান। এই ভাইয়েরা বিবাহিত ছিলেন ও এঁদের সন্তান-সন্ততিও ছিল।


২. শিবের অবতার ছিলেন বজরংবলী


একদা স্বর্গে বসবাসকারী অপ্সরা অঞ্জনাকে ঋণি অভিশাপ দেন যে, তিনি যখনই কাউকে ভালোবাসবেন, তাঁর মুখ বাদরের মতো হয়ে যাবে। তখন তিনি ব্রহ্মার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। ব্রহ্মার আশীর্বাদে তিনি পৃথিবীতে মানবরূপে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে বানররাজ কেসরীর সঙ্গে প্রেম করেন অঞ্জনা। পরে তাঁরা বিবাহ করেন। শিবের পরমভক্ত ছিলেন অঞ্জনা। অঞ্জনার ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে তাঁর গর্ভ থেকে পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করার আশীর্বাদ দেন।


কিছুদিন পর রাজা দশরথ পুত্রোষ্টি যজ্ঞ করেন। ঋষি দশরথের সমস্ত স্ত্রীকে খাওয়ার জন্য পায়েস দেন। কৌশল্যার পায়েস থেকে কিছুটা একটি চিল নিয়ে উড়ে যায়। শিবের আদেশে পবন দেব সেই পায়েস ধ্যানমগ্ন অঞ্জনার হাতে ফেলে দেন। সেটিকে শিবের আশীর্বাদ ভেবে গ্রহণ করেন অঞ্জনা। এর ফলে শিবের অংশরূপে জন্মগ্রহণ করেন পবনপুত্র হনুমান।


৩. বজরংবলী নাম হওয়ার কারণ


সীতাকে সিঁদূর লাগাতে দেখে অঞ্জনীপুত্রের মনে প্রশ্ন জাগে যে সীতা প্রতিদিন এটি কেন লাগান। জানকীর কাছ থেকে হনুমান উত্তর পান যে সিঁদূর লাগালে রামের আয়ু বাড়বে। তখন হনুমানও নিজের সারা শরীরে সিঁদূর লাগিয়ে নেন। তাঁর ধারণা এর ফলে রামের আয়ু বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। সিঁদূরের অপর নাম বজরং। সেই দিনের পর থেকে হনুমানকে বজরংবলী নামে ডাকা শুরু হয়। ঠিক এ কারণে বজরংবলীর পুজো সিঁদূর নিবেদনের রীতি প্রচলিত।


৪. সংস্কৃতে হনুমানের অর্থ বিকৃত চোয়াল


সংস্কৃতে হনুর অর্থ চোয়াল ও মান-এর অর্থ বিরূপিত করা। বজরংবলীর ছোটবেলার নাম ছিল মারুতি। একদা মারুতি শিবকে ফল ভেবে খেয়ে ফেলেন। এর ফলে সমগ্র জগতে অন্ধকার ছেয়ে যায়। এই ঘটনায় রেগে গিয়ে ইন্দ্র মারুতিকে বজ্র দিয়ে প্রহার করেন। যার ফলে তাঁর চোয়াল ভেঙে যায় ও তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এই ঘটনার পর থেকেই মারুতি হনুমান নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।


৫. ব্রহ্মচারী হওয়া সত্ত্বেও একটি পুত্র সন্তান ছিল বজরংবলীর


বজরংবলী ব্রহ্মচারী ছিলেন। তবে আশ্চর্য হবেন যে, তাঁর এক পুত্র ছিল, যাঁপ নাম মকরধ্বজ। এক মাছের গর্ভ থেকে জন্ম হয়েছিল তাঁর। লঙ্কা দহনের পর বজরংবলী যখন নিজের শরীরকে শীতল করার জন্য সমুদ্রে ডুব দেন, তখন তাঁর শরীর থেকে নির্গত ঘাম এক মাছ গিলে ফেলে। পরে সেই মাছ থেকেই মকরধ্বজের জন্ম হয়।


৬. বজরংবলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন রাম


একদা নারদের কথায় বজরংবলী বিশ্বামিত্র ছাড়া সমস্ত ঋষিমুনিদের আমন্ত্রণ করেন। বিশ্বামিত্রও একদা রাজা ছিলেন, এ কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হন। তখন তিনি রামকে বজরংবলীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার কথা বলেন। বিশ্বামিত্র রামের গুরু ছিলেন। তাই তিনি শেষ পর্যন্ত এই আদেশ মেনে নেন। বজরংবলীর ওপর তীর বর্ষণ করেন রাম। নিজের দিকে তীর আসতে দেখে রাম নাম জপ করেন বজরংবলী। তখন সমস্ত বাণ ফিরে যায়। তখন রাম ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করেন। কিন্তু এই অস্ত্রও ধ্যানমগ্ন বজরংবলীকে প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসে। এর পরই বজরংবলীর মৃত্যু দণ্ডের চিন্তাভাবনা ত্যাগ করেন রাম।


৭. বাল্মীকি ছাড়াও রামায়ণ রচনা করেছিলেন হনুমান


লঙ্কা বিজয় ও রামের রাজ্যাভিষেকের পর বজরংবলী হিমালয়ে চলে যান। হিমালয়ের দেওয়ালে নিজের নখ দিয়ে রামের কাহিনি লেখেন। বাল্মিকী যখন নিজের লেখা রামায়ণ বজরংবলীকে দেখাতে যান, তখন হনুমানের লেখা রাম কাহিনি দেখে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ বাল্মিকীর মতে বজরংবলীর রামায়ণ তাঁর লেখা রামায়ণ থেকেও বেশি ভালো। বজরংবলীর লেখা এই কাহিনি হনুমদ রামায়ণ নামে পরিচিত। তবে বাল্মিকী হতাশা দেখে তিনি এই রামায়ণ মুছে ফেলেন।


৮. ভাই ছিলেন ভীম ও বজরংবলী


পবনদেবের কৃপায় হনুমানের জন্ম হয়। এর পাশাপাশি ভীমের জন্ম হয়েছিল কুন্তীকে দেওয়া পবনপুত্রের আশীর্বাদে। তাই ভীম ও বজরংবলী একই পিতার পুত্র ও পরস্পরের ভাই।


৯. রামের শরীর ত্যাগ করার সময়ে অনুপস্থিত ছিলেন বজরংবলী


রাম মানব শরীর ত্যাগ করে বৈকুণ্ঠে প্রস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি জানতেন যে তাঁৎ পরমভক্ত বজরংবলী তাঁকে ধরাধাম ত্যাগ করতে দেবেন না। তখন রাম নিজের আংটি পাতাল লোকে ফেলে দেন এবং বজরংবলীকে তা খুঁজে আনার আদেশ দেন। তখন পাতাল লোকে আংটি খুঁজতে যান বজরংবলী এবং রাম সরযূ নদীতে ডুব দিয়ে নিজের মনুষ্যরূপী শরীর ত্যাগ করেন।


১০. সীতার উপহার অস্বীকার করেন বজরংবলী


রামের রাজ্যাভিষেকের পর সকলকে উপহার দেন সীতা। তখন তিনি বজরংবলীকে এক সুন্দর মুক্তোর হার দেন। কিন্তু বজরংবলী সেই হারের প্রতিটি মুক্তো ভেঙে তাতে রামের ছবির খোঁজ করতে থাকেন। তাতে রামের ছবি না-পাওয়ায় সেই উপহার অস্বীকার করেন এবং জানান, যে বস্তুতে রাম নেই, তা তাঁর কাছে অস্বীকার্য। তার পর তিনি নিজের বুক চিড়ে সকলকে দেখান যে তাঁর মনে রাম-সীতা বাস করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.