রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আসল পদবী কী, ভানুসিংহ ছাড়া আর কী কী ছদ্মনাম ছিল, রইল কবিগুরুর অজানা দিক

ODD বাংলা ডেস্ক: আজ ২৫ বৈশাখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ৭ মে, বঙ্গাব্দ অনুযায়ী ২৫ বৈশাখ।ভক্তকূলের কাছে তিনি হলেন ‘গুরুদেব’। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী-র জন্য নোবেল পুরস্কার পান তিনি। জেনে নিন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
  • জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের আদি পদবি ‘কুশারী’। ছিলেন শাণ্ডিল্য গোত্রের ব্রাহ্মণ। আগে নিটু শ্রেণির হিন্দুরা ব্রাহ্মণদের অনেক সময় ‘ঠাকুর’ বলতেন। এভাবেই তাঁদের পদবি ‘ঠাকুর’ হয়ে যায়। 
  • বাড়িতেই বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক আসতেন। তাঁদের কাছেই পড়তে বসতেন বালক রবি। পাশাপাশি চলত ছবি আঁকা, সঙ্গীত এবং শারীরশিক্ষাও। এমনকি সেই সময়ের বিখ্যাত কুস্তীগির হিরা সিংয়ের কাছে রবীন্দ্রনাথ কুস্তিবিদ্যা শিখেছিলেন। 
  • ঘুম ছিল খুব কম। গভীর রাতে ঘুমাতেন, উঠতেন শেষ রাতে। ভাই-বোনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সবার ছোট। তাঁর পড়াশোনার দায়িত্ব নেন তার বড় ভাই হেমেন্দ্রনাথ। তিনি রবীন্দ্রনাথকে জুডো, জিমন্যাস্টিক এবং কুস্তিও শেখাতেন। প্রথাগত শিক্ষার প্রতি উদাসীন রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনে মাত্র এক দিন স্থানীয় প্রেসিডেন্সি কলেজে গিয়েছিলেন।
  • রবি ঠাকুরেরদিন শুরু হতো ভোর ৪টায়। স্নান করে পূজা করতেন। তারপর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত একটানা লিখতেন। সকাল ৭টায় প্রাতঃরাশ সেরে আবার লেখা। ফাঁকে ফাঁকে চলত চা বা কফি পান। বেলা ১১টা পর্যন্ত লিখে আবার স্নান করতেন। তারপর দুপুরের খাওয়া। দুপুরে খাওয়ার পর বিশ্রাম বা ঘুম তাঁর ধাতে ছিল না। পত্রিকা বা বইয়ের পাতা উল্টিয়ে সময় কাটিয়ে দিতেন। বিকেল ৪ টেয় চা, সঙ্গে নোনতা কিছু। রাতের খাবার খেতেন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে। এ সময় তিনি ইংরেজি খাবার পছন্দ করতেন। অথচ দুপুরে খেতেন বাঙালি খাবার।  রাতে খাবার পর একটানা রাত ১২টা পর্যন্ত লিখতেন বা পড়তেন। এই ছিল তাঁর নিত্য রুটিন।
  • বাড়িতে পরতেন গেরুয়া বা সাদা রঙের জোব্বা (বুক খোলা অধিক ঝুলবিশিষ্ট ঢিলা জামা) আর পায়জামা। উপাসনা বা সভা সমিতিতে যাওয়ার সময় জোব্বা ছাড়াও সাদা ধুতি, জামা ও চাদর ব্যবহার করতেন। ঋতু উৎসবে ঋতু অনুযায়ী নানা রঙের রেশমী উত্তরীয় নেওয়া ছিল তাঁর শখ। যেমন বর্ষায় কালো বা লাল, শরতে সোনালি, বসন্তে বাসন্তী। আবার জোব্বার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে উত্তরীয় নিতেন অনেক সময়।
  • বৃক্ষপ্রেমী রবীন্দ্রনাথের গানে, কবিতায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য উদ্ভিদ আর ফুলের নাম। শুধু কাব্যেই উল্লেখ রয়েছে ১০৮ গাছ ও ফুলের নাম। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি ফুলের বাংলা নাম তিনি দিয়েছিলেন। অগ্নিশিখা, তারাঝরা, নীলমণিলতা, বনপুলক, বাসন্তী এগুলি তাঁরই দেওয়া নাম। ভানুসিংহ ঠাকুর যে রবীন্দ্রনাথের ছদ্মনাম সেটা অনেকেরই জানা। তার আরও কয়েকটি ছদ্মনাম ছিল। যেমন দিকশূন্য ভট্টাচার্য, অপ্রকটচন্দ্র ভাস্কর, আন্নাকালী, পাকড়াশি ইত্যাদি।
  • হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস ছিল। নিজের জমিদারির প্রজাদের তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। নিজেও হোমিওপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করতেন। ‘হেলথ কো-অপারেটিভ’ তৈরি করে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা ভারতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম চালু করেন।
  • ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘পতিসর কৃষি ব্যাংক’ চালু করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, নোবেল প্রাইজের টাকা দিয়ে তিনি কৃষকদের সুবিধার কথা ভেবে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখান থেকে কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হতো। এই ব্যাংক চলেছিল কুড়ি বছর।
  • রবীন্দ্রনাথ প্রথম অভিনয় করেন ১৮৭৭ সালে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘এমন কর্ম আর করব না’ নাটকে। নাটকে তিনি অলীকবাবুর ভূমিকায় মঞ্চে উঠেছিলেন। তখন তার বয়স ১৬ বছর। নিজের লেখা নাটকে রবীন্দ্রনাথ প্রথম অভিনয় করেন ‘বাল্মিকী প্রতিভা’য় বাল্মিকীর ভূমিকায়। নাটকটি মঞ্চস্থ হয় জোড়াসাঁকোয় ১৮৮১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। অভিনয়ের জন্যে রবীন্দ্রনাথকে মঞ্চে মোট ১০১ বার উঠতে হয়েছিল। তার অভিনয় দেখে নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথই দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা।’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.