৬০ কোটি বছর আগের পৃথিবী

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ১৮৫৯ সালে, যখন ডারউইন ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস’ প্রকাশ করেন, তখন তিনি কোনো ক্যামব্রিয়ান পর্যায়ের (মোটামুটি ৫৩ কোটি বছর আগে থেকে) আগের ফসিল রেকর্ডকে সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারেননি। 

ডারউইনের বই প্রকাশের ৯৮ বছর পরে ১৯৫৭ সালের এপ্রিল মাসে তিনজন স্কুলের ছাত্র ইংল্যান্ডের চার্নউড ফরেস্টের একটি খনিতে দড়ি ধরে নামছিল। সেই সময়ে তারা শিলার উপরে একটা পুরোনো ফার্নের মতো পাতার ছাপ দৈবাৎ দেখে ফেলে। ‘আমাদের মনে হয়েছিল এটা একটা পাতার ছাপ,’ বলেছেন বর্তমানে চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওসায়েন্সের অধ্যাপক রজার ম্যাসন। ইনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে চার্নউড ফরেস্টের ফসিল আবিষ্কার করেছেন। ‘আমরা অবাক হয়েছিলাম, কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি এই আবিষ্কার জীবের ইতিহাস বিষয়ে জানা-বোঝার জগতে কতটা পরিবর্তন আনবে।’


কিশোর রজার লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ট্রেভর ফোর্ডকে বিষয়টি জানায়। ফোর্ড ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ ক্যামব্রিয়ান যুগের আগের জীবাশ্ম দেখে হতবাক হয়েছিলেন। পরে জানা যায় এই আবিষ্কার যুগান্তকারী। এই হলো ক্যামব্রিয়ান পর্যায়ের আগের স্পঞ্জ বাদে পৃথিবীর প্রথম বড় প্রাণী জীবাশ্ম।


পৃথিবীর বয়স ৪৫৪ কোটি বছর। আর প্রায় ৬০ কোটি বছর আগে পর্যন্ত পৃথিবীতে ছিল শুধুই স্পঞ্জ, লাল এবং সবুজ শ্যাওলা, আর প্রোটোজোয়া এবং ব্যাকটিরিয়া। এই হলো মাত্র ৬০ কোটি বছর আগে পর্যন্ত, সাকুল্যে জীববৈচিত্র্য! 


তখন পৃথিবী ছিল শান্ত, মূল স্থলভূমিতে প্রাণের কোনো স্পষ্ট আভাস নেই, সমুদ্রের তীর ঘেঁষে ছিল সামুদ্রিক শ্যাওলা। অগভীর সমুদ্রতলে ছিল রঙিন চলচ্ছক্তিরহিত পাতা বা সঞ্চারমান সরুচাকলি আর পুলিপিঠের মতো দেখতে প্রাণীর সম্ভার। 


চার্নউড ফরেস্টে পাতার মতো দেখতে যে জীবের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল তা আসলে এক প্রাণীর। ওই ফসিলের নাম দেওয়া হয় চার্নিয়া ম্যাসনি। ছোট চার্নিয়া ম্যাসনি শরীরের উপরের দিকে শাখা যোগ করে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে দৈর্ঘের বৃদ্ধি থেমে যায়, পরিবর্তে যে শাখাগুলো এরই মধ্যে শরীরে আছে শুধু সেগুলোই বাড়তে থাকে। আজ্ঞে হ্যাঁ, পাতার মতো দেখতে চার্নিয়া আসলে প্রাণী। ফার্ন এবং অন্যান্য উদ্ভিদ তখনো বহু দূরে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.