লুই ভিতোঁ সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রতি মাসে সন্তানদের অডিশন নেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নো

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিলাসপণ্য কনগ্লোমারেট লুই ভিতোঁ মোয়েত এনেসি'র (এলভিএমএইচ) সিইও, বিশ্বের শীর্ষ ধনী বার্নার্ড আর্নো এবং তার এলভিএমএইচ সাম্রাজ্যের কথা প্রায় সবারই জানা। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এই ফরাসি বিলিয়নিয়ার প্রতি মাসে একবার তার ছেলেমেয়েদের এলভিএমএইচ-এর সদর দপ্তরে একটি ব্যক্তিগত ডাইনিং রুমে জড়ো করেন এবং তাদের অডিশন নেন।


বার্নার্ড আর্নোর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ঘড়ি ধরে ঠিক ৯০ মিনিট চলে তাদের এই দুপুরের খাওয়াদাওয়া। শুরুতেই আর্নো তার আইপ্যাডে তৈরি করে রাখা আলোচনার বিষয়গুলো জোরে জোরে পড়ে শোনান। এরপরে তিনি টেবিলে বসে থাকা তার পাঁচ সন্তানের কাছে যান এবং প্রত্যেকের কাছে উপদেশ চান। তিনি তার কোম্পানির নির্দিষ্ট ম্যানেজারদের বিষয়ে মতামত চান অথবা এলভিএমএইচ-এর অধীন অগণিত ব্র্যান্ডে কোনো পরিবর্তন আনা উচিত কিনা সে বিষয়ে। 


৭৪ বছর বয়সী আর্নো কয়েক দশক ধরে তার সন্তানদের গ্রুমিং করে আসছেন যাতে করে তারা এলভিএমএইচ পরিচালনার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে। তিনি ছেলেমেয়েদের গণিতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক ট্রিপ ও নেগোসিয়েশনে তিনি সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে যেতেন। বর্তমানে আর্নো এলভিএমএইচ-এর বিশাল সাম্রাজ্যের ওপর তার পরিবারের কর্তৃত্ব আরও শক্তিশালী করতে চাইছেন। নিজের সন্তানদের তিনি এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বড় পদে নিয়োগ দিয়েছেন এবং একদিন তাদেরকে নিজের যোগ্য উত্তরসূরি হওয়ার যোগ্য করে গড়ে নিচ্ছেন।


সন্তানদের উন্নতিসাধনে কাজ করার পাশাপাশি একটি বড় রকম 'উভয় সংকট' পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে বার্নার্ড আর্নোকে; তা হলো- আর্নোর পরে কে হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ লাক্সারি কনগ্লোমারেট এলভিএমএইচ-এর সিইও ও চেয়ারম্যান? কর্পোরেট টেকওভারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী লাক্সারি ফার্মগুলোকে তাড়া করার পাশাপাশি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফ্যাশন ডিজাইনারদের তুলে আনার মাধ্যমে এই এলভিএমএইচ সাম্রাজ্য গড়েছেন আর্নো, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪৮০ বিলিয়ন ডলার। আর এসকল প্রবৃত্তির কারণেই প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে 'উলফ অব ক্যাশমিয়ার' বলে ডাকেন।


চলতি বছরের জানুয়ারিতে বার্নার্ড আর্নো তার সবচেয়ে বড় সন্তান ডেলফিন আর্নোকে (৪৮) ক্রিশ্চিয়ান ডিওর এর এর সিইও ঘোষণা করার পর অনেকেরই নজরে আসেন তিনি। তার ভাই আতোঁয়া আর্নো যখন ডিওর এর সিইও হয়েছিলেন, তখনও কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই প্যারিসে গুঞ্জন চলছিল।


এর পরে রয়েছে আর্নোর দ্বিতীয় সংসারের তিন ছেলে। এদের মধ্যে আলেক্সান্দ আর্নো (৩০) এখন টিফানি অ্যান্ড কো. এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেই সঙ্গে টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি এবং জে-জেডের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে তার। আরেক সন্তান ফ্রেডেরিক আর্নো (২৮) ঘড়ির ব্র্যান্ড 'টাগ হোয়া' পরিচালনা করছেন, অন্যদিকে ২৪ বছর বয়সী জ্যঁ আর্নো লুই ভিতোরই ঘড়ি তৈরি শাখার মার্কেটিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর।


এদের তিনজনই শীর্ষ সারির ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। আর্নো নিজেও ফ্রান্সের শীর্ষ একটি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছিলেন এবং নিজের সফলতার পেছনে এটিকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখেন তিনি।


তবে নিজের পাঁচ সন্তানের মধ্যে কাকে নিজের উত্তরসূরি বানাবেন, সে ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দেননি আর্নো। তিনি শুধু বলেছেন, সন্তানদের মেধার উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


চলতি বছরের জানুয়ারিতে এলভিএমএইচ-এর একটি প্রেজেন্টেশনে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আর্নো এলভিএমএইচ-এর চেয়ারম্যান ও সিইওর অবসরে যাওয়ার বয়স ৮০ বছরে উন্নীত করার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ফরাসিদের অবসরে যাওয়ার বয়স ৬৪ বছরে উন্নীত করতে চাওয়ার বিতর্কিত প্রচেষ্টার সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেন।


"উত্তরসূরি নির্বাচনের বিষয়টির পাশাপাশি, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে অবসরে যাওয়ার বয়সসীমাও বৃদ্ধি করা হয়েছে", বলেন আর্নো।


আস্তে আস্তে ছেলেমেয়েদের ওপর দায়িত্ব অর্পণের ফলে নিজে অবসর সময়ে টেনিস খেলার দিকে মনোযোগী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন ফরাসি বিলিয়নিয়ার। তিনি বলেন, "শেষবার আমি রজার ফেদেরারের সঙ্গে খেলেছিলাম। আমি বোধহয় এক পয়েন্টও জিতেছিলাম।"


ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, গত বছরের শেষের দিকে টেসলার সিইও ইলন মাস্ককে পেছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর জায়গা দখল করেন বার্নার্ড আর্নো। এই ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত আর্নোর মোট সম্পদের পরিমাণ ২০৮ বিলিয়ন ডলার।


বিগত কয়েক দশক ধরে সিডনি টলেডানো, মাইকেল বার্কের মতো দক্ষ প্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন আর্নো। ৬৬ বছর বয়সী বার্ক চলতি বছরের জানুয়ারিতে লুই ভিতোর সিইওর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীর পাশে থাকতে। সেলাইন, লো, মার্ক জ্যাকবের মতো ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর নেতৃত্ব দেওয়ার পর ৭১ বছর বয়সী টলেডানোও কিছুদিনের মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


তারা দুজনেই বার্নার্ড আর্নোর সন্তানদের মেন্টরিং এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আর্নো নিজেই সন্তানদেরকে তার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে জুড়ে দিতেন, যাতে করে তারা সন্তানদের পারফরম্যান্সের ওপর নজর রাখতে পারেন।


টলেডানো জানান, তিনি বিশ্বাস করেন যে নিজেদের মধ্যে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও আর্নোর ছেলেমেয়েরা কোম্পানির জন্য কাজ করে যাবেন, কারণ তাদের বাবা খুব ছোটবেলা থেকে তাদের শিখিয়েছেন যে কোম্পানির স্বার্থই সবার আগে।


টলেডানোর ভাষ্যে, "আর্নো সর্বোপরি একজন বাস্তববাদী মানুষ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারবে, তাদেরকেই বেছে নিতে হবে। আর্নো তার ম্যানেজার, উপদেষ্টাদের সাথে এটাই করেন এবং সন্তানদের সাথেও তাই করবেন বলে আমি মনে করি।"


তবে টলেডানো জানান, "তিনি (বার্নার্ড আর্নো) কখনোই আমাকে বলেননি যে এলভিএমএইচ-এর উত্তরসূরি হিসেবে আমার ছেলেমেয়েদের প্রস্তুত করতেই হবে।"

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.