অনলাইন প্রকাশনা শিল্পকে তছনছ করে দিতে চলেছে গুগলের এআই

 


ODD বাংলা ডেস্ক: গত বুধবার গুগলের বার্ষিক ডেভেলপার কনফারেন্সে বেশকিছু নতুন ফিচারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জিমেইলের নতুন রাইটিং টুল এবং গুগল ম্যাপের ইমার্সিভ দিকনির্দেশের সুবিধা সম্পর্কে এসময় জানানো হয়। পাশাপাশি এমন একটি ঘোষণাও ছিল- যা প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্যান্য মহলের মনোযোগ সেভাবে আকর্ষণ করেনি। অথচ ২০০০ এর দশকের শুরুতে গুগল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন হয়ে উঠে যে যুগান্তকারী বদল এনেছিল ইন্টারনেটে – কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত এই ফিচারটি তেমনই বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফোর্বস অবলম্বনে।


গুগল সার্চ যেভাবে অনুসন্ধানের তথ্য প্রকাশ করে তাতেই আমূল পরিবর্তন আনবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। জটিল ও কঠিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইন্টারনেটে বিদ্যমান সমস্ত সূত্র থেকে পড়ার পর- এআই তা সাধারণ সংলাপের মতোন করে জানাবে।


এই ঘটনা হবে অনলাইন প্রকাশনা শিল্পের ওপর মারাত্মক এক আঘাত। অনেকটা পারমাণবিক বোমা ফেলারই শামিল। এরমধ্যেই টিকে থাকার সংগ্রামে থাকা শিল্পটিকে এক কথায় অবধারিত বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাবে।


জেনারেটিভ এআই কীভাবে কাজ করবে, বুধবার তার নমুনাও দেখিয়েছে গুগল। যেমন প্রশ্ন করা হয়েছিল, 'তিন বছরের কম বয়সী শিশু ও পোষা কুকুর আছে এমন পরিবারের (বেড়ানোর) জন্য কোন (জাতীয় উদ্যান) ভালো, ব্রাইস ক্যানিয়ন নাকি আর্চেস?


বিদ্যমান গুগল সার্চ এ ধরনের প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব তুলে ধরে না। বরং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকাশিত নিবন্ধের লিঙ্ক দেয়। কিন্তু, এআই চালিত সার্চ ইঞ্জিন দিয়েছে সরল বাক্যালাপের মতোন করে। সে শিশুর বয়স ও কুকুর থাকার বিষয়টিও বিবেচনা করেছে। নিচের স্ক্রিনশটে সে উত্তর তুলে ধরা গেল।  


গুগল জানায়, জেনারেটিভ এআই জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করে এমন প্রশ্নের মুখে। কারণ তাকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট সব নিবন্ধ পড়ে তারপর যথাযথ উত্তর সাজানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর উত্তরেও যেন বাক্যালাপের ভঙ্গিমা থাকে, সেদিকটাই বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।


আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে স্ন্যাপশটে লিঙ্কও দেওয়া থাকবে।  


অনলাইন প্রকাশনা শিল্প কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে?


এর প্রধান কারণ, ইন্টারনেটে বিদ্যমান সমস্ত তথ্য দিয়ে কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর দেবে গুগল সার্চ। ফলে গুগল ব্যবহারকারীদের আর ওইসব তথ্য পরিবেশক ওয়েবসাইটে সরাসরি ব্রাউজ করতে হবে না। অথচ গ্রাহকরা যেন তাদের ওয়েবপেজে আসে সেটাই অনলাইন প্রকাশনা শিল্পের দরকার। এভাবে সাবস্ক্রিপশন ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের আয় হয়।


দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ফোর্বস থেকে শুরু করে বড় অনলাইন প্রকাশনার জন্যও এটা বাস্তব চাহিদা। পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিক ও লেখকদের জন্যও তা অপরিহার্য।


এখন কোটি ডলারের প্রশ্ন হলো – গুগল উত্তরের সাথে যে লিঙ্কগুলো দিয়েছে (নিচের ছবির ডানপাশে লাল বৃত্তে চিহ্নিত) সেগুলোতে আদৌ কি মানুষ আর ক্লিক করতে উৎসাহী হবে?


গুগল অবশ্য বলছে, তারা স্পষ্টভাবেই তথ্যসূত্র তুলে ধরায় তাদের উত্তর পরিবেশনের ধরন আরো বেশি ক্লিক জেনারেট করবে। কিন্তু, বেশিরভাগ মানুষ কি উইকিপিডিয়ার সূত্রগুলো চেক করে?  যারা একটু বেশি জানতে আগ্রহী তেমন ব্যক্তিরা হয়তো করেন, কিন্তু তারা সংখ্যায় অনেক কম।


ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, প্রতিটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য নিশ্চয় সবাই সার্চ দেন না। আমরা শুধু কোনো অজানা বিষয়ের সঠিক উত্তরটাই চাই।


ধরা যাক, কোনো মার্কিন নাগরিক জানতে চান ওয়াল্ট ডিজনি কোন শহরে জন্মেছিলেন। উইকিপিডিয়া মারফত তিনি জানতে পারলেন শিকাগো শহরে। কিন্তু, এই তথ্যটি যে ২০০৯ সালে শিকাগো সান-টাইমস সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র থেকে নেওয়া – ততোদূর অনুসন্ধান খুব কম মানুষই করেন।


আর ঠিক একারণেই অনলাইন গণমাধ্যম, ম্যাগাজিনের পাঠক সংখ্যায় পতন ঘটাতে পারে গুগল। অথচ তাদের দেওয়া তথ্য এআই ব্যবহার করবে।


অনেকেই একে কুম্ভিলকবৃত্তি বলবেন। প্রকাশনা সাইট সাবস্ট্যাকে করা পোস্টে গত বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ এনেছেন একজন প্রযুক্তি সমালোচকও।


যে বিশেষণই দেওয়া হোক না কেন, এর ফলে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের সাইট থেকে সরে মানুষের নজর যে আরো বেশি গুগলেই আবদ্ধ থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। আর গ্রাহকরাও তাতে করে গুগলের সেবাগুলোর বাইরে খুব একটা যাবেন না। বিজ্ঞাপন থেকে আয় বিপুল হারে বাড়বে প্রযুক্তি জায়ান্টটির।  নাহলে এসব বিজ্ঞাপনের একটি অংশ পেত অনলাইনের প্রকাশনাগুলো।


গ্রাহকের দৃষ্টিতে আসাই বাণিজ্যিক ইন্টারনেটকে কন্টেট প্রস্তুতকারকদের জন্য লাভজনক করেছে। অন্যদিকে, গুগলের সবচেয়ে বড় পরিষেবা তাদের সার্চ ইঞ্জিন। সেটাই যখন বিজ্ঞাপনে ভাগ বসাবে, তখন তাকে প্রকাশনা শিল্পের ওপর পারমাণবিক বোমা হামলার শামিলই বলতে হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৮৯ শতাংশ এবং বিশ্ববাজারে ৯৪ শতাংশ বাজারদখল আছে গুগল সার্চের।


গুগল কবে তাদের নতুন এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন চালু করবে - এবিষয়ে এখনও স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটিকে পরীক্ষামূলকভাবে বাজারে আনা হতে পারে। এবিষয়ে তারা ধীরে চলো নীতিই অনুসরণ করছে।


তবে চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী এআই যখন শোরগোল ফেলেছে, তারমধ্যে গুগল ধীরেসুস্থে চলে তাদের প্রত্যাশিত বাজারকে দখল হতে দেখবে - এমন আশা অবান্তর।  এরমধ্যেই অনেকে গুগল ছেড়ে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে চ্যাটজিপিটিকে গ্রহণ করেছেন, আর ঠিক এই বিষয়টি নিয়েই উদ্বিগ্ন গুগল। সেটাই তাদের নতুন সার্চ ইঞ্জিন তৈরিতেও উদ্বুদ্ধ করছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.