মৌমাছিরা কীভাবে মধু তৈরি করে?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ‘মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই, ঐ ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময়তো নাই।’

ছড়াটি পড়ার সময় প্রশ্ন জাগতেই পারে, কীভাবে মৌমাছিরা মধু তৈরি করে?  আসলে মানুষ মৌচাক থেকে যে মধু আহরণ করে তা মৌমাছির সঞ্চয় করা মধু। মৌমাছিরা নিজেদের খাদ্য হিসেবে এই মধু ফুল থেকে ফুলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করে। সেই মধুর নাম বলেই আমরা সাধারণত মিষ্টির উপমা দিয়ে থাকি—‌‘মধুর মতো মিষ্টি।’


মৌমাছি তার নির্দিষ্ট মৌচাকে মধু সংগ্রহ করে এই কথা আমরা সবাই জানি। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই রহস্যে ভরপুর। সাধারণত তিন ধরনের মৌমাছি মিলে একটি মৌচাক তৈরি করে। রানি মৌমাছি, কর্মী মৌমাছি ও ড্রোন (পুরুষ মৌমাছি)। ক্ষুদ্র এই প্রাণীটি থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান পাওয়ার যাত্রাপথ অপার বিস্ময়ে ভরা।


জেনে রাখা ভালো, মৌমাছিরা নিজেদের খাদ্য হিসেবে ফুলের মধুগ্রন্থি থেকে সংগ্রহ করে মধু। এই পাকস্থলী পূর্ণ করতে মৌমাছিকে ১০০ থেকে ১৫০০ ফুল পর্যন্ত ভ্রমণ করতে হয়। আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এই রসে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ জল থাকে। আর মিষ্টি অংশ পুরোটাই চিনি বা সুক্রোজ। পুরো বিষয়টিকেই বলা হয় নেক্টার বা মধুরস।


মৌমাছির চোখেও রয়েছে বিস্ময়! এ কারণেই তারা ফুলের অতি ক্ষুদ্র অংশ থেকে মধু খুঁজে বের করতে পারে। মানুষের চোখে লেন্স সংখ্যা দুইটি। কিন্তু মৌমাছির ১টি চোখের লেন্সের সংখ্যা ৬ হাজার। অর্থাৎ ক্ষুদ্র এই পতঙ্গটির অতি ক্ষুদ্র দুই চোখেও রয়েছে ১২ হাজার লেন্স। মৌমাছি ফুলের এত ক্ষুদ্র অংশও দেখতে পারে যা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও দেখা সম্ভব নয়।


মৌচাকের দেড় দুই কিলোমিটারের কাছাকাছি ফুল না পেলে এই রস সংগ্রহের জন্য মৌমাছি ৭ থেকে ৯ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে যেতে পারে। কর্মী মৌমাছি ফুলের কাছে গিয়ে টিউবের মতো হুল দিয়ে রস শোষণ করে। মৌমাছির দুটি পাকস্থলীর মধ্যে একটিতে অর্থাৎ মধু পাকস্থলীতে জমা হয় এই রস, মধু পাকস্থলীর ধারণক্ষমতা প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম। পাকস্থলী পূর্ণ হলে তা প্রায় মৌমাছিটার সমান ওজনের হয়। 


মৌচাকে ফেরার পথেই, পেটে এনজাইমের সহায়তায় মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়ে যায়, অর্থাৎ সুক্রোজ- ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে থাকে। চাকে ফিরে পেটের রস প্রথমে ৪-৫টি কর্মী মৌমাছির মুখে দিয়ে দেয়। 


তারা প্রত্যেকে আবার সেগুলো ৮-১০টি করে অল্পবয়স্ক মৌমাছির কাছে বণ্টন করে। এবার সবাই মিলে আধা ঘণ্টা ধরে সেই রস চিবুতে থাকে। যা পৃথিবীর কোনো মেশিন করতে পারে না। চিবুনো হয়ে গেলে এই তরল- হানিকম্ব বা মধুকোষের একটি করে প্রকোষ্ঠে ঢালতে থাকে। 


সেখানেই চলে মধু তৈরি হওয়ার শেষ কাজটা। প্রকোষ্ঠগুলো সব ভরে গেলে, এর আর্দ্রতা ১৪ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসতে হয়। আর এই কাজ করতে কর্মী মৌমাছিরা সবাই মিলে ডানা ঝাপটিয়ে বাতাস করতে থাকে রাতদিন। বজায় রাখে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা। 


এ সময় চাকের ভেতর থেকে ভোঁ ভোঁ বা গুন গুন শব্দ শোনা যায়। এভাবে মৌ-রসের জল বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে থাকে। তখন এনজাইমের ক্রিয়ায় সুক্রোজের পরিমাণ পাঁচ শতাংশে পৌঁছে। তারপরও একটি দল আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডানা ঝাপটাতেই থাকে।


সব কিছু ঠিক থাকলে এর উপর মোমের একটি আস্তরণ দেয়া হয়। মোমের ঢাকনা না দেয়া পর্যন্ত মধুকে পরিপক্ব হিসেবে ধরা হয় না। আর পরিপক্ব মধু কখনও নষ্ট হয় না। কারণ এই আর্দ্রতায় কোনো ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না।


মৌমাছিরা মূলত নিজেদের খাদ্য হিসেবে মধু সংগ্রহ করে রাখে। আর এই মধুতে থাকে সেলুলোজ, ডেক্সট্রোজ, মন্টোজ, এনজাইম, ভিটামিন ও নানা খনিজ পদার্থ।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.