যেসব চাকরি আপাতত এআইয়ের দখলে যাবে না!
ODD বাংলা ডেস্ক: শিল্প বিপ্লবের শুরুর দিকে অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, যন্ত্রের ফলে হয়তো মানুষ চাকরি হারাবে। কিন্তু বৃহত্তর অর্থে এমনটা ঘটেনি। মানুষের আয়ত্তেই ছিল কল-কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অভূতপূর্ব উন্নতির ফলেও যেন একই শঙ্কা আবার দেখা দিয়েছে। বহু বিশেষজ্ঞের মতে, মানুষের চাকরির বাজারের একটা বড় অংশ দখল করে নিতে পারে এআই। খবর বিবিসির।
চলতি বছরের মার্চ মাসে বিখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, দ্রুতগতিতে কন্টেন্ট তৈরি করতে পারায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ চাকরি এআই দখল করতে পারে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে অটোমেশনের ফলে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন চাকরি এআইয়ের দখলে চলে যেতে পারে।
এমন পরিস্থিতি দাঁড়ালে তা খুবই 'শোচনীয়' হবে বলে মনে করেন 'রুল অব দ্য রোবট: হাউ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট উইল ট্রান্সফর্ম এভ্রিথিং' বইয়ের লেখক মার্টিন ফোর্ড।
মার্টিন ফোর্ড বলেন, "এআইয়ের প্রভাব শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে পড়বে বিষয়টা এমন নয়। বরং এটা খুবই পদ্ধতিগতভাবে হবে। খুব কম সময়ে আচমকা এর প্রভাব বহু মানুষের ওপর পড়তে পারে। কেননা প্রযুক্তিটি শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে প্রয়োগের জন্য নয়, বরং পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রয়োগের জন্য তৈরি করা হয়েছে।"
তবে সব চাকরির ক্ষেত্রেই যে একচেটিয়া বাজার দখল করে ফেলবে এআই, তাও নয়। এখনও এমন কিছু পেশা রয়েছে যেগুলো মানুষের স্বতন্ত্র নানা গুণাবলির ওপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। সেসব পেশার ক্ষেত্রে আপাতত এআই তেমন সুবিধা করতে পারবে না।
এ বিষয়ে ফোর্ড বলেন, "আমি মনে করি, তিন ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতেও মানুষের প্রাধান্য থাকবে। প্রথমটি হচ্ছে, যেসব কাজ সত্যিকার অর্থেই সৃজনশীল। এখানে শুধু সূত্র মেনে কাজ করলে হয় না বা আগের আইডিয়াগুলোকে সন্নিবেশ করলেই হয় না। বরং এখানে নিজ থেকে আইডিয়া তৈরি করে সৃজনশীলতার সাথে নতুন কিছু তৈরি করতে হয়।"
এর মানে সব 'সৃজনশীল' চাকরিতেই যে এআইয়ের প্রভাব থাকবে না ব্যাপারটি এমন নয়। যেমন, গ্রাফিক ডিজাইনিং বা ভিজুয়াল আর্ট সম্পর্কিত চাকরিগুলো সৃজনশীল হলেও, এআই এই বাজার দখল করতে পারে।
অন্যদিকে বেশকিছু সৃজনশীল কাজে আবার 'নিরাপত্তা'র বিষয়টি সম্পৃক্ত। ফোর্ড বলেন, "বিজ্ঞান, মেডিসিন, আইন থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণের মতো চাকরিগুলোর সাথে নিরাপত্তার ব্যাপারটি জড়িত। আমি মনে করি এসব চাকরি এআই নয়, মানুষই নিয়ন্ত্রণ করবে।"
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যেসব চাকরিতে খুবই প্রাণবন্তভাবে অন্য ব্যক্তির সাথে একটি কার্যকরী সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। উদাহরণস্বরূপ- নার্স, ব্যবসায়িক পরামর্শক, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ইত্যাদির কথা বলা যেতে পারে।
এ চাকরিগুলো সম্পর্কে ফোর্ড বলেন, "ব্যক্তিকে খুবই গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে হয় এমন সব চাকরিতে মানুষেরই প্রাধান্য থাকবে। মানুষের মতো করে গভীরভাবে অন্য ব্যক্তিকে পর্যালোচনা করার দক্ষতা অর্জনে এআইয়ের আরও অনেক সময় লাগবে।"
তৃতীয়টি হচ্ছে, যেসব চাকরিতে খুবই অপ্রত্যাশিত ও কঠিন পরিবেশে দক্ষতার সাথে জটিল সব সমস্যার সমাধান করতে হয়। এক্ষেত্রে ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, ওয়েল্ডার ইত্যাদি পেশার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
এ সম্পর্কে ফোর্ড বলেন, "এসব পেশাকে অটোমেশনের আওতায় আনা বেশ কষ্টসাধ্য। এই কাজগুলো অটোমেশন করতে সাইন্স ফিকশন রোবটের প্রয়োজন হবে। অনেকটা স্টার ওয়ারস এর সি-৩পিও চরিত্রের মতো।"
যদিও এসব চাকরি আপাতত মানুষের আয়ত্তেই থাকবে বলে অনুমান করা যায়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে এসব চাকরিতে একেবারেই এআইয়ের প্রভাব থাকবে না।
ইউনিভার্সিটি অফ বাফালোর লেবার ইকোনমিক্সের সহযোগী অধ্যাপক জোয়ান সং মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ চাকরিতেই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অটোমেশনের আওতায় আসার সুযোগ রয়েছে।
জোয়ান সং বলেন, "হয়তো বর্তমানে এআই'র কারণে মানুষের এসব চাকরি হারানোর সম্ভাবনা নেই। তবে কাজের ধরন পরিবর্তিত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মানুষের থেকে এআই হয়তো আরও ভালোভাবে ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারবে। ভবিষ্যতে এমন হতে পারে যে চিকিৎসকরা প্রযুক্তিটি ব্যবহার করবে। তবে চিকিৎসকদের সর্বোপরি যে ভূমিকা, সেটি এআই দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না।"
জোয়ান সং জানান, একটি রোবট চিকিৎসকের চেয়ে ভালোভাবে ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারলেও বেশিরভাগ মানুষ দিনশেষে চিকিৎসকের সহযোগিতাই নিতে চাইবে, কেননা চিকিৎসক একজন বাস্তব মানুষ। তাই তার কাছ থেকে সমস্যাগুলো শুনতে চাইবে। এমনটি প্রায় সকল চাকরির ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটবে।
জোয়ান সং বলেন, "আমি মনে করি, আমাদের চাকরির ঠিক কোন কাজটি এআই দখল করবে সেটি বিচক্ষণতার সাথে ভাবতে হবে। সেক্ষেত্রে পরিপূরক হিসেবে আমার দক্ষতা কী হতে পারে সেটাও ভাবতে হবে।"
ব্যাংকে গ্রাহকদের সাথে টাকা আদান-প্রদানের কাজে জড়িত কোনো ব্যক্তির কথাই চিন্তা করা যাক। একটা সময় ছিল, যখন টাকা গণনা করার জন্য ব্যাংকে মেশিন ছিল না। তখন ঐ কর্মকর্তাকে অর্থ আদান-প্রদানের সময় বেশ সচেতন থাকতে হতো।
কিন্তু বর্তমানে ব্যংকে টাকা গণনার ব্যাপারটি যন্ত্রের মাধ্যমেই করা হচ্ছে। কিন্তু তবুও গ্রাহকদের সাথে টাকা-আদান প্রদানের জন্য কর্মকর্তার দরকার হচ্ছে। জোয়ান সং এর মতে, "গ্রাহকের সাথে ব্যাংকের সামাজিক সম্পর্কের বিষয়টি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।"
উচ্চতর শিক্ষা বা বেশি বেতনে কর্মী নিয়োগ করে এআইয়ের চাকরির বাজার দখল ঠেকানো সম্ভব নয়। ফোর্ড বলেন, "একজন গাড়ি চালকের তুলনায় একজন অফিস ম্যানেজমেন্ট কিংবা কন্টেন্ট রাইটার এআইয়ের কারণে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেননা এআইয়ের অটোমেশনের ফলে বর্তমানে গাড়ি চালানো ততটা প্রচলিত না হলেও এআই দিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং ইতোমধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
ফোর্ড আরও জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তুলনামূলক বেশি শিক্ষিত চাকরিজীবীরাই এআইয়ের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে। হোটেলে যে লোকটি রুম পরিষ্কার করছে, তার এআইয়ের ফলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি কম। কেননা এই কাজ অটোমেশনের আওতায় আনা বেশ কঠিন।
Post a Comment