মনের প্রশান্তিতে ধ্যান



 ODD বাংলা ডেস্ক: যাপিত জীবনের নানা জটিলতায় আমাদের মনজুড়ে প্রায়ই বয়ে যায় অস্থিরতার ঝড়। কাছের মানুষের স্বার্থপরতা আর অকৃতজ্ঞতায় মনে ভর করে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশা। কোনো কাজে মন বসে না। জগত্ সংসারের সবকিছু হয়ে রূপহীন, বিবর্ণ আর বিরক্তিকর। তোলপাড় করা মনে প্রশান্তি এনে দেওয়ার অনন্য উপায় হতে পারে মেডিটেশন ও এক্সারসাইজ। এ নিয়ে এবারের আয়োজনে লিখেছেন শারমিন রহমান। 


আমাদের স্বপ্ন-প্রবণ মন যে জীবনের আকাঙ্ক্ষা করতে শেখায়, চেষ্টার অভাব অথবা দুর্ভাগ্য যে কারণেই হোক না কেন, বাস্তবের সঙ্গে তার সৃষ্টি হয় আকাশ-পাতাল ব্যবধান। এই উপলব্ধিটা যখন হঠাত্ আমাদের জীবনের দুঃসহ বোঝা হয়ে নেমে আসে তখন যেন আমরা তার ভারে নুয়ে না পড়ি, এ জন্যই দরকার মনের জোর। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে মেডিটেশন। মেডিটেশন বা ধ্যান হলো এক ধরনের সাধনা। যার মাধ্যমে আত্মোপলব্ধিতে পৌঁছানো যায়। ধ্যান আসলে মনঃসংযোগের এক সুসংবদ্ধ রূপ।


ধ্যানের মাধ্যমে মনকে নিয়ে যাওয়া হয় সুগভীর প্রশান্তির এক রাজ্যে যেখানে কাম নেই, ক্রোধ নেই, লোভ নেই, লালসা নেই, জ্বালা নেই, যন্ত্রণা নেই। সেই রাজ্যে পৌঁছাতে গেলে প্রথমে মনকে কোনো বস্তুর প্রতি স্থিরভাবে নিবদ্ধ করতে হবে। সেটা হতে পারে কোনো ব্যক্তি অথবা কোনো ইমেজ, কাল্পনিক কোনো চরিত্র, কোনো আলোর বিন্দু, অথবা কোনো শব্দ কিংবা যেকোনো বস্তু। এমনিভাবে বেছে নেওয়া যেকোনো কিছুর ওপর মনটা স্থিরভাবে নিবদ্ধ রেখে কিছুক্ষণ বসে ধ্যান করলে মন কখন যে সেই গভীর প্রশান্তির রাজ্যে চলে যাবে ধ্যানকারী নিজেও টের পাবে না। আমাদের মনকে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণাবিদ্ধ ও ক্ষতবিক্ষত করে তোলে ষড়রিপু। মেডিটেশনের মাধ্যমে সেগুলো দমন করতে পারলেই মন এক অনির্বচনীয় প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। খুঁজে পাওয়া যাবে সুন্দর, সহজ, ক্লেদহীন জীবনযাপনের সত্যিকারের উপকরণ। জীবনধারায় ঘটে যাবে পরিবর্তন। দেশে দেশে যুগে যুগে মহাপুরুষরা ধ্যানের মাধ্যমে যেমন ইন্দ্রিয় জয় করেছেন, তেমনি সন্ধান পেয়েছেন সত্যোপলব্ধির।


মেডিটেশন মনের উন্নতি ঘটায়। দেহের উন্নতি ঘটায়। ’৬০-এর দশকে প্রাচ্যে বিভিন্ন রকমের ধ্যান পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যে পাশ্চাত্যেও এর প্রভাব পড়ে। ১৯৬৪ সালে সাইকো কেরারনেটিক্স, ১৯৬৬ সালে সিলভা মেথড, ১৯৬৮ সালে ইএমটিসহ মেডিটেশনের প্রায় অর্ধশত পদ্ধতি চালু হয়। তবে এরমধ্যে সিলভা মেথড সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই মেথড বর্তমানে বিশ্বের ১৩১টি দেশে ৩০টি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। 


প্রয়োজন


মেডিটেশনের জন্য খুবই প্রয়োজন, একটা খোলা জায়গা। বাগান, বারান্দা বা খোলা ছাদ মেডিটেশনের জন্য খুবই উপযোগী। বড় জানালা দেওয়া বড় ঘরেও মেডিটেশন করতে পারেন।


একটা মাদুর বা বিছানা।

সুগন্ধি মোমবাতি বা ধূপ।

ঢোলা আরামদায়ক জামা-কাপড়।

হাতে অন্তত আধা ঘণ্টা সময়। মেডিটেশনের সময়টুকু সেলফোন বন্ধ করে রাখুন।


কী করবেন


সুগন্ধি মোমবাতি বা ধূপ জালিয়ে দিন। বিছানা বা মাদুর বিছিয়ে বসুন।

আপনি যেভাবে বসতে আরামবোধ করেন, সেভাবে বসুন। হাঁটু মুড়ে বা পদ্মাসনে বসতে পারেন।

শিরদাঁড়া সোজা রাখুন। এবং কোলের উপর হাত দুটো রাখুন।

লম্বা শ্বাস নিন। কিন্তু শ্বাসের গতি বাড়াবেন না।

চোখ বন্ধ করে মনঃসংযোগ করুন। সাংসারিক বা জাগতিক চিন্তা মাথায় আনবেন না। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের কথা ভাবতে পারেন।

মোটামুটি ২০-২৫ মিনিট সময় এভাবেই কাটান।

শরীরের জন্য উপকারী


ব্লাড সার্কুলেশন ইমপ্রুভ করে এবং রেসপিরেটরি রেট বাড়িয়ে দেয়, যা হার্টের রোগীদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

ব্লাড প্রেসার নর্মাল রাখতে সাহায্য করে।

মাসল রিলাক্স করে এবং মাথাধরা কমিয়ে দেয়।

ব্লাড ল্যাক্টেট লেভেল কমিয়ে আংজাইটি অ্যাটাক হতে দেয় না।

মস্তিষ্কে সেরোটনিন উত্পাদনে বৃদ্ধি ঘটায়। সেরোটনিন কমে গেলে ডিপ্রেশন, ইনসমনিয়া দেখা দিতে শুরু করে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.