মায়ের গর্ভেও শেখে শিশু

 


ODD বাংলা ডেস্ক: গর্ভে সন্তান থাকাকালীন মা যা করেন, সন্তানের মধ্যেও নাকি সেই অভ্যাসগুলো জন্মের পর দেখা যায়। আসলেই কি তাই?


অনেক ছোটো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের কথা বলার ধরণ, উচ্চারণ ভঙ্গি, তার বয়সী ১০ টা বাচ্চার চেয়ে একটু আলাদা। কেন এমন হয়? খোঁজ নিয়ে দেখা গেলো, গর্ভাবস্থায় সেই বাচ্চার মা প্রচুর উপন্যাসের বই পড়তেন। শুধু পড়তেনই না, সেগুলো জোরে জোরে উচ্চারণ করতেন, যাতে করে নাকি তার পেটের বাচ্চার কাছেও শব্দগুলো পৌঁছে যায়! 


সম্প্রতি এক গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে, গর্ভধারণের দশ সপ্তাহ থেকেই শিশুরা মায়ের মাধ্যমে ভাষা শিখতে শুরু করে। আর এজন্যই সিয়াটলের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের মতে, মাতৃভাষা আর বিদেশী ভাষার মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে পারে শিশুরা জন্মের পর থেকেই। মস্তিষ্ক জন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করে না এক্ষেত্রে। বরং শেখার প্রক্রিয়া শুরু করে দেয় তার আগ থেকেই। কীভাবে এই গবেষণা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষকেরা?


গবেষণাটি তারা পরিচালনা করেন ৮০ জন শিশুর উপরে যাদের বয়স ৩০ ঘণ্টার কাছাকাছি। মায়ের ভাষা এবং বিদেশী ভাষা দুটোই তাদের সামনে বলা হয় এবং এর প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। দুই সময়েই প্যাসিফায়ার মুখে ছিল শিশুদের। প্রত্যেকবারই মায়ের ভাষা বলার পর শিশুরা প্যাসিফায়ার চোষা বন্ধ করে দেয়, যেখানে বিদেশী ভাষার ক্ষেত্রে তাদের কোনোরকম পরিবর্তন দেখা যায়নি। গবেষকদের মতে, মায়ের ভাষা শিশুর কাছ পর্যন্ত যায়, কারণ সেক্ষেত্রে ভাষার তরঙ্গ মায়ের শরীরের মাধ্যমে বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। শুধু তা-ই নয়, গর্ভধারণের শেষ ট্রাইমেস্টারে চিকিৎসকেরা মাকে গর্ভের সন্তানের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রেও এজন্যই বেশি উৎসাহ দিয়ে থাকেন। কারণ, পরবর্তীতে ভাষার উন্নয়নে এটি বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।


খেলতে খেলতে শিখবে শিশুখেলতে খেলতে শিখবে শিশু

তবে শুধু মায়ের কণ্ঠ শুনতে পায় শিশুরা- এমনটা ভেবে যে বাবাদের কষ্ট হচ্ছে, তাদের জন্য বলছি। ব্যাপারটা এমন নয় যে গর্ভের শিশু শুধু মায়ের কথাই শুনতে পায়। গর্ভধারণের ২৩তম সপ্তাহ থেকে একজন শিশু মায়ের পাশাপাশি বাইরের অন্যান্য শব্দও শুনে থাকে। শব্দের পাশাপাশি খাবারের স্বাদটাও চেনা হয়ে যায় তার। এ সময় শিশুর সাথে গান গাওয়া বা কথা বলা তার পরবর্তী যোগাযোগ দক্ষতাকেও বৃদ্ধি করে বহু গুণে।


মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সন্তানেরা যে শুধু শব্দ শিখে বিষয়টা এমন নয়, খাবারের স্বাদ, নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ, অর্থাৎ কোনো গানের সুর বা ছন্দ। এমনকি গর্ভে একজন শিশু যখন মাকে নির্দিষ্ট কোনো শব্দের পর কাঁদতে দেখে বা কোনো কিছুর পর হাসতে, খুশি হয়ে যেতে দেখে, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে তার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটতে দেখা যায়। কোনো উঁচু গলায় কথা কাটাকাটির পর মা যদি কান্না করে, শিশু সেই অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়ে যায়। আর সেখান থেকে তৈরি হয় উঁচু আওয়াজের প্রতি তার ভয় আর নেতিবাচক অনুভূতির সম্পর্ক।


সবমিলিয়ে গর্ভে থাকা একজন শিশুর শেখার পুরো প্রক্রিয়া গড়ে ওঠে একই ঘটনা বার বার ঘটার মাধ্যমে। একই অভিজ্ঞতা বার বার পেয়ে এবং সেই অভিজ্ঞতার ফলে মায়ের কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটা দেখে শিখতে শুরু করে শিশু।


তাহলে অভিভাবক হিসেবে মা-বাবা বা পরিবারের বাকী সদস্যদের করণীয় কি হতে পারে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়, যেমন দক্ষিণ কোরিয়ায় মা গর্ভধারণের সময় যোগব্যায়াম সহ বিভিন্ন কার্যক্রম করে থাকেন। ফ্রান্সে হ্যাপ্টোনমি পদ্ধতির জনপ্রিয়তা ব্যাপক। এই পদ্ধতি মূলত তলপেটে স্পর্শের মাধ্যমে সন্তানকে জানান দেয়া, যে সে-ও একই পরিবারের অংশ। আর এই দুই পদ্ধতিতেই সাথে মেনে চলা হয় ঝামেলাহীন, সুষম খাবারসহ নির্ভেজাল একটা জীবনপদ্ধতি। গল্প করার অভ্যাস, শরীরচর্চা করা, রোদে বাইরে বের হওয়া, সুষম খাবার খাওয়া, বই পড়া, গান শোনা ইত্যাদি অভ্যাস তাই গড়ে তুলুন গর্ভকালীন মাসগুলোতে। কারণ অল্প হোক বা বেশি, স্থায়ী হোক বা অস্থায়ী, আপনি যে অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, আপনার গর্ভের শিশুও তো সেটার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাই না?

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.