রংপুরের দেবী চৌধুরাণী: যার ইতিহাস পুরো ভারতবর্ষে খ্যাতি অর্জন করেছে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: দেবী চৌধুরাণী ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে যে কয়জন নারী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

তার বাবার নাম ব্রজ কিশোর চৌধুরী এবং মাতা কাশীশ্বরী দেবী। মন্থনার জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে দেবী চৌধুরাণীর বিবাহ হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর জমিদারির দায়িত্ব তার ওপর এসে পড়ে। তিনি প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন।


তার সময় রংপুর অঞ্চলের কালেক্টর হয়ে আসেন জনাথন গুডল্যাড এবং তার দেওয়ান নিযুক্ত হন দেবীসিংহ। দেওয়ান দেবীসিংহ ও তার কর্মচারী হয়ে রামের ওপর রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। রাজস্ব আদায়ে সময় তাদের অত্যাচারে কৃষক এমনকি জমিদাররাও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এছাড়া সেই সময় ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচার বেড়ে যায়, তারা জোরপূর্বক উর্বর জমিতে কৃষকদের নীল চাষ করতে বাধ্য করা শুরু করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেবী চৌধুরাণী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। আর তার কারণে তিনি ব্রিটিশদের রোষানলে পড়েন। তাকে দমন করার জন্য মীর কাশিমের নেতৃত্বে একদল ইংরেজ সৈন্যবাহিনী পাঠানো হয়। এ যুদ্ধে দেবী চৌধুরাণীর সঙ্গে রংপুরের নূর উদ্দিন বাকের মুহাম্মদ জং, ভবানী পাঠক এবং দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া অঞ্চের শত শত কৃষক অংশ নেয়। ১৭৬০ সালে ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে দেবী চৌধুরাণী জয়লাভ করেন। যুদ্ধে ইংরেজ ক্যাপ্টেনসহ অনেকে নিহত হন এবং মীর কাশিম পিছু হটতে বাধ্য হন। দেবী চৌধুরাণীর যুদ্ধে জয়লাভের স্থানটি এখনো মানুষের কাছে ‘জয়পুর’ নামে পরিচিত। 


তার নামে রংপুরে দেবী চৌধুরাণী ডিগ্রি কলেজ, চৌধুরাণী রেলস্টেশন, চৌধুরানী উচ্চ বিদ্যালয়, চৌধুরাণী বাজার রয়েছে। তার খননকৃত বিশাল চৌধুরাণী দীঘি, চন্ডিপুর দীঘি এবং মন্থনার রাজবাড়ি আজও টিকে আছে কালের সাক্ষী বহন করে। দেবী চৌধুরাণী ক্ষণজন্মা এক জনহিতৈষী নারী ও তেজস্বী বিপ্লবী। তিনি তার জীবনেও যেমন আলোচিত প্রথমে সংসারী ছিলেন পরে সন্ন্যাসী হিসেবে। তাকে নিয়ে করা উপন্যাস, গল্প, সিরিয়াল, নাটক ও সিনেমা তৈরি হয়।


রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন পার হলে চন্ডীপুর বাজারে নাপাই চণ্ডীর বৈশাখী মেলা হয়। এই স্থানটিতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুদ্ধ করেন দেবী চৌধুরাণী। চৌধুরাণী বাজারটিও এলাকায় বেশ বড় বাজার হিসেবে পরিচিত। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম রূপকার ও খ্যাতিমান নেত্রী দেবী চৌধুরাণীর অবাধ বিচরণস্থল ছিল পীরগাছা । নওয়ার দেবীগঞ্জও তার স্মৃতির এলাকা। করতোয়া, তিস্তা, আত্রাই ও কুড়ুম নদীতে ঘেরা এখানকার ঘন বনাঞ্চলে ব্রিটিশদের সঙ্গে তিনি কয়েক দফা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বিজয়ী হন। তার স্মৃতি থেকেই এর নামকরণ হয় দেবীগঞ্জ।


১৭৮৩ সালে এপ্রিল মাসে পহেলা বৃহস্পতিবার (বর্তমান পীরগাছা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রাম) লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংসের নেতৃত্বে একদল ইংরেজ বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত এবং নিহত হন দেবী চৌধুরাণী। এই যুদ্ধে দেবী চৌধুরাণীর সঙ্গে অন্নদানগরের জমিদারও নিহত হন। দেবী চৌধুরাণীর পরাজিত স্থানে বাংলা বৈশাখ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার মেলা বসে, যা ‘নাপাইচন্ডি’ মেলা নামে পরিচিত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.