মাত্র ৭ দিনে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য পরিদর্শন করেছেন তিনি! কিন্তু কিভাবে?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: মাত্র সাত দিনে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য পরিদর্শন করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছেন জেমি ম্যাকডোনাল্ড ওরফে অ্যাডভেঞ্চারম্যান। ঘোরাঘুরি জেমির কাছে নতুন কিছু নয়। বিশ্বের নানা প্রান্তের দর্শনীয় জায়গাগুলো দেখতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং ব্যাংকক থেকে সাইকেলে করে যুক্তরাজ্যে নিজের বাড়িতে পৌঁছেছেন। ভ্রমণের প্রতি দুর্দমনীয় নেশার জন্যেই তার নাম দেওয়া হয়েছে 'অ্যাডভেঞ্চারম্যান'। খবর ইউরোনিউজ ডট ট্রাভেল-এর।


যদিও জেমির ভাষ্যে, তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তিনি এত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য দেখে ফেলেছেন। "আমি নিজের গায়ে চিমটি কেটে বুঝার চেষ্টা করছি যে এটা সত্যি"- বলেন জেমি।


"এই সাত দিনের ব্যবধানে আমি বোধহয় ১২ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। এটা ছিল স্বপ্নের মতো। আমার শুধু মনে হচ্ছে, এটা কি আসলেই ঘটেছে?" বলেন জেমি ম্যাকডোনাল্ড।


পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য কি কি? 


চীনের মহাপ্রাচীর (গ্রেট ওয়াল অব চায়না) থেকে শুরু হয়েছিল জেমির এই রোমাঞ্চকর যাত্রা। এরপর দ্রুত তিনি একের পর এক সপ্তাশ্চর্যগুলো পরিদর্শন করতে পশ্চিমের দিকে চলে আসেন। তবে এই ভ্রমণ বাস্তবায়ন করতে খুবই বিচক্ষণতার সাথে পরিকল্পনা ও সময়সূচি ঠিক করতে হয়েছে তাকে। সাত দিনে ১৩টি ফ্লাইট, ১৬টি ট্যাক্সি, ৯টি বাস, ৪টি ট্রেন এবং একটি টোবোগ্যানে (স্লেজগাড়ির মতো এক ধরনের গাড়ি) যাতায়াতের মধ্যে সমন্বয় করতে হয়েছে তাকে।


জেমির দ্বিতীয় পরিদর্শনস্থল ছিল ভারতের আগ্রার তাজমহল। এরপরে তিনি গিয়েছেন জর্ডানের পেত্রাতে। এ বিষয়ে জেমি বলেন, "আমি আগে কখনো জর্ডানের পেত্রার কথা শুনিনি, তাই ওখানে গিয়ে কি দেখবো তা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না। কিন্তু যখন আমি সেখানে পৌঁছালাম, মনে হলো ম্যাজিক্যাল কিছু দেখছি!"


বিশ্বের 'চতুর্থ আশ্চর্য' ছিল আবারও সেই ইউরোপে, আর সাতটির মধ্যে শুধুমাত্র রোমের কলোসিয়ামই তিনি আগে একবার দেখেছিলেন।


এরপরে সোজা লাতিন আমেরিকার পথ ধরেন জেমি এবং পৌঁছে যান ব্রাজিলের 'ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার' এবং পেরুর 'মাচু পিচু' দেখতে। তার এই রেকর্ড ব্রেকিং ট্রিপ শেষ হয় মেক্সিকোর 'চিচেন ইটজা'তে গিয়ে।


জেমি বলেন, "আমি যখন মাচু পিচু দেখতে পাহাড়ের একদম চূড়ায় উঠি, ওই অবিশ্বাস্য মুহূর্তটা ছিল এই ট্রিপের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত। আমার মনে হচ্ছিল, আমার উচিত বাড়ি ফিরে গিয়ে সন্তানদের নিয়ে এসে এই জাদুকরী বিস্ময় দেখা।"


এ ধরনের রোমাঞ্চকর ভ্রমণের পরিকল্পনা করা কি কঠিন?


জেমি ম্যাকডোনাল্ডের ভাষ্যে, "আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে পরিকল্পনাকারী, তাই এ ধরনের চ্যালেঞ্জ আমার কাছে একটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল!"


কিন্তু জেমি এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন এবং এর জন্য তিনি ট্রাভেল টেক কোম্পানি ট্রাভেলপোর্ট এর সাহায্য নেন। জেমির পুরো ভ্রমণের মোট ৪৩টি ধাপের সবকিছু তারাই বুক করে দিয়েছে।


"একদিন আমি একটা টার্মিনালে হারিয়ে গিয়েছিলাম এবং রোম থেকে লিসবনের ফ্লাইট মিস করে ফেলেছিলাম। সেদিন আমার মনে হয়েছিল, এখানেই শেষ! আমি হয়তো আমার ভ্রমণ শেষ করতে পারব না", বলেন জেমি।


কিন্তু সৌভাগ্যবশত পরের ফ্লাইটেই তিনি একটি আসন বুক করেন এবং তার রেকর্ড গড়ার স্বপ্ন বেঁচে যায়!


কেন এই ভ্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন জেমি?


"আমি ভ্রমণ করতে ভালোবাসি, রোমাঞ্চকর অভিযানে যাওয়ার প্রতি আমার একটা নেশা আছে, কিন্তু এখন এটাকে অর্থবহ করে তোলা প্রয়োজন", বলেন জেমি।


ছোটবেলায় সিরিংগোমেলিয়া নামের একটি বিরল শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেক বছর হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল জেমিকে। খেলাধুলা এবং অনেক চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং এক পর্যায়ে তিনি সেরে ওঠেন।


এরপর অনেক বছর পর যখন তিনি নিজে বাড়ি কেনার জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন, তখন তার মনে হলো শৈশবের সেই হাসপাতালে একবার ঘুরে আসা দরকার।


হাসপাতালটি পরিদর্শন করে তাদের কাজ দেখে তার মন এতটাই বিচলিত হয়ে গেল যে, তিনি বাড়ি কেনার পরিকল্পনা বাতিল করে অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য টাকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দাতব্য সংস্থা খোলার পরিকল্পনা করলেন।


২০১৪ সালে 'অ্যাডভেঞ্চারম্যান' উপাধি পাওয়ার পর জেমি 'সুপার ফাউন্ডেশন' নামক দাতব্য সংস্থা খোলেন। এটা সেই সকল পরিবারকে সাহায্য করে যারা চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন, কারণ যুক্তরাজ্যের পাবলিক হেলথ সার্ভিস এসব চিকিৎসার খরচ দেয় না।


"আমি চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি কারণ ট্রাভেলপোর্ট বলেছে, আমি যদি বিশ্বরেকর্ড গড়তে পারি তাহলে তারা আমার প্রতি মাইল ভ্রমণের সমান একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা দান করবে", বলেন জেমি। 


আর জেমি ঠিক কত মাইল ভ্রমণ করেছেন জানেন? তার নিজের মুখেই শোনা যাক সেকথা, "২২,০০০ মাইল ভ্রমণ করেছি আমি। সুতরাং তারা সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত একটা শিশুর চিকিৎসার জন্য ২২,০০০ ডলার দেবে। ওই শিশুটির পায়ে ব্যথা এবং তার হাঁটাচলায় সমস্যা হয়। তাই এই অর্থসাহায্যের মাধ্যমে শিশুটির জীবন বদলে যাবে।"

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.