মস্তিষ্কের সঙ্গে মেরুদণ্ডের ডিজিটাল সংযোগ; হাঁটতে পারছেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ১২ বছর আগে সাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন জার্ট-ইয়ান অসকাম। তবে সম্প্রতি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে ইমপ্ল্যান্ট সংযোগের মাধ্যমে ফের হাঁটতে পারছেন ৪০ বছর বয়সি এই ব্যক্তি। খবর সিবিএস নিউজ-এর।


বুধবার (২৫ মে) ন্যাচার-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, অসকামের ওপর প্রয়োগ করা 'ব্রেইন-স্পাইন ইন্টারফেস' (বিএসআই) প্রযুক্তিটি এক বছর ধরে কার্যকর রয়েছে। এখন তিনি দাঁড়াতে পারেন, হাঁটতে পারেন, এমনকি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা ও জটিল সব জায়গা অতিক্রম করতে পারেন। এছাড়াও বিএসআই-এর কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বর্তমানে তিনি পায়ের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেন।


এক সংবাদ সম্মেলনে অসকাম বলেন, "আমি আবারও হাঁটতে পারার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে এটা সম্ভব।"


অসকাম জানান, চীনে দুর্ঘটনার পর তিনি মনে করেছিলেন, স্বদেশ নেদারল্যান্ডে গেলে হয়তো চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি জানতে পারেন, তার চলাচলের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তখনো তৈরি হয়নি।


এরপর প্রথমে সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলজির নিউরোসায়েন্টিস্ট গ্রেগোয়া কোর্টিনের অধীনে অসকাম একটি ট্রায়ালে অংশ নেন। ২০১৮ সালে গ্রেগোয়া ও তার গবেষক দল মনে করেন, প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মেরুদণ্ডের নিম্নাংশ উজ্জীবিত করে চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলা ব্যক্তিকে সুস্থ করা সম্ভব। তবে দীর্ঘ তিন বছর চেষ্টা করা হলেও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।


পরবর্তীকালে গবেষক দল অসকামের মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মাঝে একটি ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন করেন। এর অংশ হিসেবে পুরো গবেষণায় অসকাম প্রায় ৪০টি নিউরো-রিহ্যাবিলিটেশন সেশনে অংশ নেন। বর্তমানে অসকাম একনাগাড়ে প্রায় ১০০ মিটার কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে এর থেকে বেশি দূরত্বও অতিক্রম করতে পারেন।


এ বিষয়ে গবেষক গ্রেগোয়া বলেন, "আমরা মূলত অসকামের চিন্তাগুলোকে আয়ত্ত করেছি এবং সেগুলোকে মেরুদণ্ডের উদ্দীপনায় রুপান্তর করেছি। যার ফলে তার মেরুদণ্ডে স্বেচ্ছায় চলাচলের সক্ষমতা পুন:স্থাপিত হয়েছে।"


গবেষকেরা জানান, পরবর্তী অগ্রগতির অংশ হিসেবে এ প্রযুক্তিটি চালাতে যে হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হয় সেটিকে ক্ষুদ্র আকারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। বর্তমানে অসকাম ব্যাকপ্যাকের সাহায্যে হার্ডওয়্যারটি বহন করে থাকেন। ঠিক একই পদ্ধতি হাতের নাড়াচাড়া করার সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করা যায় কি না সেটিরও চেষ্টা করা হচ্ছে।


গত কয়েক দশকে মেরুদণ্ডের আঘাতের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ন্যাচার-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, 'টার্গেটেড ইলেক্ট্রিক্যাল পালস' মেরুদণ্ডে পাঠানোর মাধ্যমে স্ট্রোকের পর হাতের নাড়াচাড়া করার সক্ষমতা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।


অসকামের চিকিৎসায় যুক্ত থাকা গবেষকেরা আশা করছেন যে, তাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তিটিও ভবিষ্যতে হাতের নড়াচড়ার সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে কাজে লাগানো যাবে। একইসাথে সময়ের সাথে সাথে নিজেদের রিসোর্স বৃদ্ধি করে স্ট্রোকের রোগীদের চিকিৎসায়ও প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.