আয়রন কেন দরকার?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: আয়রন বা লৌহ আমাদের একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান। এটি একটি খনিজ পদার্থ। আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকার মূল খাদ্য উপাদান হলো ছয়টি—শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ ও জল। আর খনিজ নামক মূল উপাদানটির মূল হলো আয়রন। কিন্তু এই আয়রন আমাদের শরীরে কী কাজ করে? প্রতিদিন কতটুকু আয়রন আমাদের দরকার? তা জেনে নিতে এবারের আয়োজন—


কেন খাবেন আয়রন


রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে আয়রনের। হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে অক্সিজেন পুরো শরীরে বাহিত হয়। তাই আয়রনের ঘাটতি হলে হিমোগ্লোবিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়।


শক্তি, মাংসপেশির সুগঠন এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথাযথ কাজ সম্পাদনের জন্য আয়রন প্রয়োজন।


শরীরে যতটুকু আয়রন বা লৌহ থাকে, তার ৭০ ভাগই থাকে হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে। বাকি বেশির ভাগ থাকে অন্যান্য প্রোটিন, যেমন রক্তের ট্রান্সফেরিন বা অস্থিমজ্জার ফেরিটিন ইত্যাদির সঙ্গে। কিছু অংশ থাকে শরীরের বিভিন্ন কোষে।


হিমোগ্লোবিন থাকে রক্তের লোহিত কণিকায়। রক্তের লোহিত কণিকা কমবেশি ১২০ দিন বাঁচে। এরপর নতুন লোহিত কণিকা তৈরি হয়, পুরোনোগুলো ভেঙে যায়। লোহিত কণিকা যখন ভেঙে যায় তখন সেখানকার হিমোগ্লোবিনে থাকা আয়রন রক্তের আরেকটি প্রোটিন ট্রান্সফেরিনের মাধ্যমে অস্থিমজ্জা, লিভার, সিপ্লন ইত্যাদিতে যায়। অস্থিমজ্জায় জমা থাকা আয়রন আবার নতুন রক্তকণিকা তৈরিতে কাজে লাগে।


শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সাহায্য করে আয়রন।


প্রতিদিন প্রায় ১-২ মি.গ্রা. আয়রন আমাদের শরীর থেকে নিয়মিতভাবে বের হয়ে যায় মল, মূত্র ও ঘামের মাধ্যমে। শুনতে আশ্চর্যও লাগতে পারে প্রজননক্ষম বয়সী নারীদের প্রতি মাসিকে রক্তক্ষরণ হয় ৪০-৮০ মি.লি., আর এই পরিমাণ রক্তের সাথে যে আয়রন ক্ষরণ হয় তার পরিমাণ ২০-৪০ মি.গ্রা.। আবার প্রত্যেক গর্ভবতী মা তার প্রতিটি গর্ভধারণের জন্য আয়রন ঘাটতিতে ভোগে ৬০০-৯০০ মি.গ্রা.-এর।


নারীদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে আয়রনের ঘাটতি। সাধারণত ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের জন্য আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।


মেয়েদের ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়ার কারণ খাদ্যে লোহা ও প্রোটিনের সুষম বণ্টনের অভাব। তা ছাড়াও গৃহিণী তথা মায়েরা বেশিরভাগ সময়েই সংসারে সবার খাওয়ার পরে শুধুমাত্র উদ্বৃত্ত খাদ্যটুকুই অবলম্বন করে বেঁচে থাকেন। প্রায়শই নজর দেন না নিজেদের খাবারে প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান আছে কি না। তাই ক্রমাগত অপুষ্টির ফলে সহজেই এই রোগ দেখা দেয়।


পরিমিত খাবারের কারণে যে কেউ সুস্থ থাকবে—এই কথাগুলো সবসময়ই আমরা আমাদের চিকিত্সকদের কাছ থেকে শুনে থাকি। তবে সুস্থ থাকার জন্য যা বিশেষ প্রয়োজন তা হলো শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে আয়রনের সরবরাহ।


একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের খাবারের তালিকায় সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনদিন মাংস থাকা জরুরি। এর পাশাপাশি অবশ্যই শাক-সবজি থাকতে হবে, এবং সেসব সবজি যেগুলো আয়রনসমৃদ্ধ। না হলে তার পক্ষে সুস্থ ও সুন্দর হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।


মায়ের পেটে থাকা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.