যতবার আপনি এআই চ্যাটবট ব্যবহার করেন, ততবারই এ চ্যাটবটকে পয়সা খোয়াতে হয়!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্বারা পরিচালিত চ্যাটবটগুলোর বড় একটা অসুবিধা রয়েছে: প্রতিটি চ্যাটের জন্য এগুলোর মালিক প্রতিষ্ঠানকে অর্থ ব্যয় করতে হয়।


বর্তমান যুগে বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোকে পরিচালনা করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হয়। এছাড়া এসব মডেলগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটার চিপের দুষ্প্রাপ্যতাও এক্ষেত্রে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা।


মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক টম গোল্ডস্টেইন বলেন, 'বর্তমানে যেসব মডেল দেখা যাচ্ছে, এগুলো যতই আশ্চর্যজনক হোক না কেন, এ মডেলগুলো এখনো তাদের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে পারেনি।'


প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনে তাদের খরচের কথা প্রকাশ করতে চায় না। চ্যাটজিপিটি'র নির্মাতা ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, এবং গুগল — কেউই এ বিষয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে কোনো তথ্য দিতে চায়নি।


‌এআই চ্যাটবটগুলো পরিচালনা করতে প্রচুর কম্পিউটারশক্তির দরকার হয়। এ কারণেই ওপেনএআই এর শক্তিশালী নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল জিপিটি-৪ বিনা খরচে সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেনি।


জিপিটি-৪ পরিচালনা করার পেছনে খরচের পরিমাণ এত বেশি যে, যারা এটি মাসিক ২০ ডলারের বিনিময়ে কিনেছেন, তারাও প্রতি তিন ঘণ্টায় কেবল ২৫টি প্রশ্ন বা অনুসন্ধান পাঠাতে পারেন।


এ বিপুল খরচই হয়তো গুগলের এখনো এর সার্চ ইঞ্জিনে এআই চ্যাটবট যোগ না করার একটি বড় কারণ। এ বছরের মার্চে উন্মুক্ত করা গুগলের এআই চ্যাটবট বার্ড-এর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বৃহৎ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করেনি।


সেমিকন্ডাক্টর গবেষণা ফার্ম সেমিঅ্যানালাইসিস-এর প্রধান বিশ্লেষক ডিলান প্যাটেলের তথ্য অনুযায়ী, গুগলে একজন ব্যবহারকারী সাধারণ একটি তথ্য খুঁজলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির যে পরিমাণ খরচ হয়, তার চেয়ে প্রায় ১,০০০ গুণ বেশি খরচ হয় চ্যাটজিপিটির সঙ্গে একবার আলাপ করতে গেলে।


সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক এক রিপোর্টে বাইডেন প্রশাসন জেনারেটিভ এআই-এর কম্পিউটেশনাল খরচকে জাতীয় উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। হোয়াইট হাউসের মতে, এ প্রযুক্তির কারণে 'কম্পিউটেশনাল চাহিদা ও এর সম্পর্কিত পরিবেশগত প্রভাব নাটকীয়হারে বৃদ্ধি পেতে পারে'।


অন্য যেকোনো ধরনের মেশিন লার্নিং পদ্ধতির তুলনায় জেনারেটিভ এআই-এর জন্য বৃহৎ পরিমাণে কম্পিউটার ক্ষমতার দরকার হয়। পাশপাশি এর জন্য জিপিইউ নামক এক ধরনের বিশেষায়িত কম্পিউটার চিপও লাগে। এ পরিমাণ খরচ কেবল সবচেয়ে ধনী কোম্পানিগুলোই করতে পারে।


একসময় সিলিকন ভ্যালি ইন্টারনেট অর্থনীতির একটা অংশে রাজত্ব করেছিল অনলাইনে অনুসন্ধান, ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইত্যাদি সেবা বিনামূল্যে দেওয়ার মাধ্যমে। প্রথমে আর্থিকভাবে কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরবর্তীসময়ে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিপুল লাভ করেছিল এ কোম্পানিগুলো।


এআই চ্যাটবটগুলোতে‌ও ভবিষ্যতে হয়তো বিজ্ঞাপন দেখা যাবে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, কাটিং-এজ এআই প্রযুক্তিগুলোকে লাভজনক করা বিজ্ঞাপনের একার পক্ষে খুব একটা সম্ভব হবে না।


এআইকে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য করার চেষ্টায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা চিপ নির্মাতা ও ক্লাউড কম্পিউটিং কোম্পানিগুলোর। আর যেসব কোম্পানি বর্তমানে এআই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল করছে, তাদের নিজস্ব বৃহৎ ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা রয়েছে।


গতমাসে এক সিনেট শুনানিতে ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালনার এ সীমাবদ্ধতার কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছিলেন। শুনানিতে তাকে বলা হয়, যদি তার কোম্পানি চ্যাটজিপিটিকে এমনভাবে সমৃদ্ধ করে যা শিশুদের আসক্তির কারণ হবে, তাহলে সিনেট এ ব্যাপারে কঠিন পদক্ষেপ নেবে।


উত্তরে স্যাম অল্টম্যান নিশ্চিত করেন, এরকম কিছু ঘটবে না। 'আদতে আমরা জিপিইউ'র এমন ঘাটতিতে আছি যে, যত কম মানুষ আমাদের পণ্য ব্যবহার করবেন, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল,' বলেন তিনি।


এআই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোর খরচ শুরু হয় এগুলো তৈরি ও প্রশিক্ষণের পর্যায় থেকেই। ভাষার মধ্যে প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণ ডেটা, ও সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। আর এআই কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ বেতনও দেন এসব কাজের গবেষকদেরকে। ফলে সব কোম্পানির পক্ষে নিজের মডেল তৈরি করা সম্ভব হয় না।


একজন ব্যবহারকারী যখন চ্যাটজিপিটির মতো কোনো এআই চ্যাটবটের কাছে কোনো কিছু জানতে চান, তখন তা প্রথমে ডেটা সেন্টারে যায়। সেখানে সুপারকম্পিউটার অসংখ্য দ্রুতগতির ক্যালকুলেশন করে। প্রথমে ব্যবহারকারী যা জানতে চেয়েছেন (প্রম্পট) তার ব্যাখ্যা তৈরি করে কম্পিউটার, তারপর সে অনুযায়ী সবচেয়ে সম্ভাব্য উত্তরটি প্রদান করে।


এ ধরনের কম্পিউটিং কাজের জন্য প্রয়োজন হয় গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট তথা জিপিইউ'র। এগুলো সাধারণত ভিডিও গেমের জন্য তৈরি করা হলেও এখন বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলো রান করতে পারার সক্ষমতা কেবল এই চিপগুলোরই রয়েছে।


বর্তমানে কেবল এনভিডিয়া সবচেয়ে ভালো জিপিইউ তৈরি করে। আর এসব জিপিইউ'র দামও চড়া। এনভিডিয়া খুব শীঘ্রই এক ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটির সমকক্ষ আরেকটি জিপিইউ নির্মাতা কোম্পানি হলো তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি।


সম্প্রতি নিজের এআই উদ্যোগের জন্য প্রায় ১০,০০০-এর মতো জিপিইউ ক্রয় করেছেন ইলন মাস্ক। গত ২৩ মে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক সামিটে তিনি বলেন, 'এ মুহূর্তে মাদকের চেয়েও জিপিইউ সংগ্রহ করা বেশি কঠিন।'


চ্যাটজিপিট উন্মুক্ত করার কিছুদিন পরে গত ডিসেম্বরে স্যাম অল্টম্যান বলেছিলেন, প্রতি চ্যাটে চ্যাটজিপিটির খরচ হয় এক অঙ্কের সেন্ট (১০০ সেন্টে এক মার্কিন ডলার)। শুনলে এ পরিমাণ অর্থ তেমন বেশি বলে মনে হবে না। কিন্তু প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন। অর্থাৎ সার্বিকভাবে এ খরচের পরিমাণ বিশাল অংকে দাঁড়ায়।


গত ফেব্রুয়ারিতে সেমিঅ্যানালাইসিস এক হিসাবে দেখিয়েছে, কেবল কম্পিউটিংয়ের খরচেই চ্যাটজিপিটির জিপিটি-৩.৫-এর জন্য ওপেনএআইকে প্রতিদিন সাত লাখ ডলার খরচ করতে হচ্ছে।


এত পরিমাণ অর্থব্যয়ের কারণেই বর্তমান প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো এআই মডেলগুলোকে সর্বোচ্চ সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে বেশ অনাগ্রহী।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.