রাবণের মৃত্যুর পর কী হয়েছিল স্ত্রী মন্দোদরীর? জানুন রামায়ণের অজানা তথ্য
ODD বাংলা ডেস্ক: রামায়ণের গল্প অবলম্বনে তৈরি সিনেমা আদিপুরুষ নিয়ে বিতর্ক চলছে সর্বত্র। এই ছবিতে বাল্মীকি রামায়ণকে সঠিক ভাবে তুলে ধরা হয়নি হলে অভিযোগ অনেকেরই। তবে এই আদিপুরুষ বিতর্কের মধ্যেই রামায়ণের বিভিন্ন চরিত্র সম্পর্কে আগ্রহ জেগেছে অনেকের মনে। রামায়ণের মূল যে চরিত্রগুলি - অর্থাত্ রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, রাবণ, হনুমান - এঁদের কথা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনেক সময় রামায়ণের মূল কাহিনির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় আরও কিছু উল্লেখযোগ্য চরিত্র। তেমনই একজন হলেন রাবণের পত্নী মন্দোদরী।
লংকেশ্বর রাবণের মতো প্রবল প্রতাপশালী ও অহংকারী স্বামী থাকা সত্ত্বেও নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও মত প্রকাশের ক্ষমতা ছিল রানি মন্দোদরীর। প্রথম থেকেই সীতা হরণের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। রাবণ যাতে সীতাকে সসম্মানে রামের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন, তার জন্য বারবার স্বামীকে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। এভাবে পরস্ত্রীকে বলপূর্বক অপহরণ করে রাবণ নিজের পাশাপাশি গোটা লংকার সর্বনাশ ডেকে আনছেন বলেও সাবধান করেছিলেন মন্দোদরী। কিন্তু তাঁর কথায় কান দেননি রাবণ।
রাবণের স্ত্রী হওয়া ছাড়াও আরও একটি উল্লেখযোগ্য পরিচয় রয়েছে মন্দোদরীর। একটি কাহিনি অনুসারে তিনি ছিলেন আসলে স্বর্গের অপ্সরা মধুরা। মহাদেবের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন এই মধুরা। একদিন পার্বতীর অনুপস্থিতিকে কৈলাশ পর্বতে গিয়ে মহাদেবকে প্রসন্ন করার চেষ্টা করেন তিনি। সেই সময় পার্বতী ফিরে এসে দেখেন যে মধুরার অঙ্গে মহাদেবের শরীরের ভষ্ম লেগে। প্রচণ্ড রেগে পার্বতী মধুরাকে অভিশাপ দেন যে তাঁকে ব্যাং হয়ে ১২ বছর একটি কূপের অন্ধকারে কাটাতে হবে।
১২ বছর অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করার পর একদিন মধুরা নিজের কষ্টের কথা ভেবে কূপের ভেতরে বসে কাঁদছিলেন। সেই সময় কাছেই কন্যা সন্তান প্রার্থনা করে মহাদেবের তপস্যা করছিলেন রাক্ষস রাজা মায়াসুর ও তাঁর স্ত্রী। মধুরার কান্না শুনে কূপের কাছে গিয়ে, সেখানে থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন মায়াসুর। মধুরার সব কথা শোনার পর তাঁকে নিজের কন্যা হিসেবে বরণ করে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসেন মায়াসুর। নতুন জন্মে তাঁর নাম হয় মন্দোদরী। এরপর একদিন মায়াসুরের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে এসে মন্দোদরীর দর্শন পান লংকার রাজা রাবণ।
মন্দোদরীকে দেখে মুগ্ধ রাবণ মায়াসুরের কাছে তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। মায়াসুর সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে মন্দোদরীকে বলপূর্বক অপহরণ করেন তিনি। দুই রাজ্যে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে মন্দোদরী দেখেন যে রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাঁর বাবা কখনোই জিততে পারবেন না। তাই যুদ্ধ থামাতে রাবণকে পতি হিসেবে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
একটি প্রচলিত কাহিনি অনুসারে রাবণকে বধ করার পর শোকাতুরা মন্দোদরীকে রাম আশীর্বাদ করেন এই বলে যে তাঁকে কখনও বৈধব্য জ্বালা সহ্য করতে হবে না। মন্দোদরীর সিঁথির সিঁদুর কখনও মুছতে হবে না বলে বর দেন রাম। সেই কারণে রামের আশীর্বাদে রাবণের চিতা কখনও নেভে না বলে প্রচলিত বিশ্বাস।
তবে অন্য একটি কাহিনি বলছে যে রাবণের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই বিভীষণকে বিয়ে করেছিলেন মন্দোদরী। বিভীষণকে বিয়ে করলে মন্দোদরী অনেক ভালো জীবন পেতে পারবে বলে তাঁকে বোঝান স্বয়ং রাম। রামের নির্দেশেই মন্দোদরী ও বিভীষণের বিবাহ হয় বলে অনেক জায়গায় পাওয়া যায়।
Post a Comment