লটে নয়, গরম ভাতের সঙ্গে মেখে খান বিলুপ্ত প্রায় ‘মাগুর মাছের ঝুরি’! একবার খেলে বারবার খেতে মন চাইবে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: অনেক দিন আগের কথা। বাংলাদেশে গিয়ে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একটি ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন সে কী খেয়েছে। বালক উত্তর দেয় দুই রকমের মাছ দিয়ে ভাত। ডাল ছিল কিনা জানতে চান লেখক। অবাক চোখে বালকের উত্তর, "ডাইল তো বড়োলোকেরা খায়।"


একেবারে খাঁটি কথা। খালবিল, নদীনালায় পরিপূর্ণ বাংলাদেশে মাছ যতটা সুলভ ততটা ডাল নয়। কারণ সেখানে ডালের চাষ সীমিত। তাই ভাতের সহচরি মাছই ভালো।


বাঙালি কবে থেকে মাছ খাওয়া শুরু করেছে তার কোনও হিসেব নেই। মঙ্গলকাব্য থেকে শুরু করে চর্যাপদ, সবেতেই মাছের উল্লেখ রয়েছে। মৌরলা, পুঁটি, কাচকির মতো চুনো মাছ থেকে রুই-কাতলা, শিঙি-মাগুর, শোল-বোয়াল, ইলিশ-চিংড়ি, পাবদা-গুরজালি– মাছের যে কত বৈচিত্র রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ওদিকে একেক মাছের রান্নার বৈচিত্রও একেক রকম। ভাজা, ঝোল, অম্বল, ঝাল, কষা, সর্ষে বাটা, কালিয়া, পাতুরি, ভাপা কিংবা ঝুরি যাই রান্না হোক তার স্বাদ অতুলনীয়। মশলার পরিমাণের তারতম্যের কারণে স্বাদেরও তারতম্য হয়।


‘ঝুরি’ শব্দটি হয়তো এসেছে ঝরঝরে শব্দ থেকে। মাছের ঝুরি বললে প্রথমেই লটে মাছের ঝুরির কথা মনে পড়ে। তবে অন্য মাছেরও যে ঝুরি হয় তা অনেকেই হয়তো জানেন না। মাগুর মাছের ঝুরি বাংলার একটি সাবেকি পদ। আজকাল অনেকেই হয়তো এর নাম শোনেননি। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন মাগুর মাছের ঝুরি রান্না হলে আর কোনও পদ লাগত না। রোগীর পথ্যকে যে কীভাবে মশলা মাখিয়ে অতি সুস্বাদু পদে পরিণত করা যায়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এই মাগুর মাছের ঝুরি।


সাবেকি এই পদ খেয়ে এবং খাইয়ে যদি বাড়ির সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে চান, তাহলে একদিন এই সুস্বাদু রান্নাটি করে ফেলতে পারে। রান্না করতে বিশেষ ঝামেলা নেই। (সব ছবি প্রতীকী, সৌজন্যে: istock)


মাগুর মাছের ঝুরির রেসিপি

মাগুর মাছের ঝুরির রেসিপিউপকরণ

মাগুর মাছ- ৫০০ গ্রাম

পেঁয়াজ- ২টি

আদা বাটা- ১ চামচ

রসুন বাটা- ১ চামচ

টম্যাটো- ১টি

ধনে পাতা- ১ মুঠো

কাঁচা লঙ্কা- ৪-৫টি

বেগুন- ১টি (ছোটো)

হলুদ গুঁড়ো- দেড় চামচ

লঙ্কা গুঁড়ো- ১ চামচ

জিরে গুঁড়ো- ১ চামচ

ধনে গুঁড়ো- ১ চামচ

গরম মশলা গুঁড়ো- ১ চামচ

গন্ধরাজ লেবুর পাতা- ৩-৪টি

সর্ষের তেল- প্রয়োজনমতো

জল- প্রয়োজনমতো

নুন- স্বাদ অনুসারে

প্রণালী


একেবারে প্রথমেই মাগুর মাছ ভালো করে ধুয়ে নিন।

কড়াইয়ে জল দিয়ে তাতে মাছ, অর্ধেক চামচ হলুদ, সর্ষের তেল এবং নুন দিয়ে সিদ্ধ করে নিন।

জল ঝরিয়ে মাছ ঠান্ডা করে নিন।

মাছের কাটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ মাছ হাত দিয়ে হালকা করে চটকে নিন। মাছ যেন একেবারে মিহি না হয়ে যায়। ছোটো ছোটো টুকরো থাকবে।

পেঁয়াজ খুব সরু ও ঝিরঝিরি করে কেটে নিন। টম্যাটো লম্বালম্বি এবং ঝিরিঝিরি করে কাটুন।

কাঁচালঙ্কা কুচিয়ে নিন।

বেগুন ছোটো ছোটো টুকরো করে নিন।

গন্ধরাজ লেবুর পাতা লম্বালম্বি করে কুচিয়ে নিন।

প্রথমে বেগুনের টুকরোগুলো নুন-হলুদ দিয়ে ভেজে তুলে রাখুন।

কড়াইয়ে একটু বেশি করে সর্ষের তেল দিয়ে গরম করুন।

এবার এতে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা ভাজুন।

একে একে টম্যাটো, কাঁচালঙ্কা এবং আদা-রসুন বাটা দিয়ে কষাতে থাকুন।

কাঁচা গন্ধ চলে গেলে এতে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো এবং জিরে গুঁড়ো দিয়ে কষাতে থাকুন।

মশলা যাতে পুড়ে না যায় তার জন্য সামান্য জল দিয়ে কষাতে হবে।

ক্রমে মশলা থেকে তেল বের হবে। তখন এতে দিয়ে দিন মাগুর মাছ মাখা।

ফের কষাতে থাকুন। প্রয়োজনে অল্প জল দিন।

ক্রমে রান্না থেকে তেল আলাদা হতে থাকবে।

মাছ ঝরঝরে হয়ে গেলে তাতে ভাজা বেগুন এবং ধনে পাতা কুচি দিয়ে মেশান।

এবার কুটি কুচি করে কাটা গন্ধরাজ লেবুর পাতা মিশিয়ে নিন। উপরে ছড়িয়ে দিন গরম মশলা গুঁড়ো।

সবকিছু ভালো করে মিশিয়ে কড়াই ঢাকা দিয়ে দিন। এই সময় গ্যাস বন্ধ করে দিন।

কিছুক্ষণ এভাবে ঢাকা দিয়ে রাখুন।

গরম ভাতে মাগুর মাছের ঝুরি মেখে খেয়ে দেখুন একবার। মাংসকেও হার মানাবে এই পদ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.