এক টিয়ার অভিশাপে অযোধ্যা ফিরে বনবাসে যেতে হয়েছিল সীতাকে, জানুন সেই অজানা কাহিনি

 


ODD বাংলা ডেস্ক:  রামায়ণের কাহিনি আমাদের প্রত্যেকের জানা। তবে আমরা যতটা জানি, তার চেয়েও বেশি আরও কিছু তথ্য রয়েছে যা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয় না। রামায়ণে সীতার অপহরণের পর রাম ও সীতাকে ১৪ বছর আলাদ থাকতে হয়েছিল। ১৪ বছর পর অযোধ্যায় ফিরেও খুব বেশি দিন একসঙ্গে থাকতে পারেননি তাঁরা। এক ধোপার কথায় সীতাকে একাই বনবাসে পাঠান রাম। কিন্তু কেন রাম-সীতাকে এই বিরহ বেদনা সহ্য করতে হয়েছিল তা কি জানেন? জানা যায় এক টিয়া পাখির অভিশাপের কারণেই রাম-সীতাকে লঙ্কা থেকে ফিরেও একা থাকতে হয়। কী সেই কাহিনি, তা তুলে ধরা হল এখানে।


ছোটবেলা সীতা নিজের বান্ধবীদের সঙ্গে বাগানে খেলছিলেন। তখনই টিয়াপাখির এক জুটির দিকে তাঁর নজর যায়। পুরুষ ও স্ত্রী টিয়া পাখি পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সীতা লুকিয়ে তাঁদের কথা শুনতে শুরু করেন। তারা বলছিল যে ভবিষ্যতে রাম নামক এক প্রভাবশালী রাজা হবে, যাঁর বিয়ে হবে সীতা নামক এক সুন্দর যুবরানির সঙ্গে। সীতা তাদের জিগ্যেস করেন যে, এ সব তারা কী ভাবে জানল। তখন টিয়া পাখির জুটি সীতাকে জানায় যে, মহর্ষি বাল্মিকী তাদের সব বলেছেন।


তখন সীতা জানান যে, যে যুবরানির কথা তারা বলছে, তিনিউ সেই সীতা। এই কথা শুনে টিয়া পাখির জুটি ভয় পেয়ে যায়। বলে যে, তারা উড়ে অনেক দূর চলে যাবে ও কখনও ফিরে আসবে না। কিন্তু সীতা তাদের পথ আটকে বলেন যে, তিনি নিজের সঙ্গেই তাদের রাখবেন। তখন টিয়া পাখি বলে যে তারা স্বাধীন, কোনও খাঁচায় বন্দি হয়ে থাকতে পারবে না।


সীতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তিনি তাদের কাছ থেকে আরও কাহিনি শুনতে চান। টিয়া জুটির কাকতিমিনতিতেও মন গলে না সীতার। অবশেষে সীতা বলেন যে তিনি পুরুষ টিয়া পাখিকে মুক্ত করতে রাজি। কিন্তু স্ত্রী টিয়াকে নিজের কাছে রাখবেন তিনি। তখন পুরুষ টিয়া জানায় যে তার স্ত্রী গর্ভবতী। তাই সীতা যেন তাকে আটকে না-রাখে, দুজনকে একসঙ্গে থাকতে দেয়। সীতা তাদের কোনও কথায় কান দেন না। পুরুষ টিয়াকে ছেড়ে দিলেও স্ত্রী টিয়াকে নিজের সঙ্গে রাজপ্রাসাদে খাঁচাবন্দি করে রাখেন।


স্ত্রীর বিরহ সহ্য করতে না-পেরে সেই টিয়া সীতাকে অভিশাপ দেয়, যে ভাবে সে আজ জীবনসঙ্গীর বিরহ বেদনা সহ্য করছে, ঠিক সে ভাবেই সীতাকেও এক দিন স্বামীর বিরহ সহ্য করতে হবে। কিছু দিনের মধ্যে পুরুষ টিয়া নিজের প্রাণত্যাগ করেন। এই কথা শোনার পর অত্যন্ত কষ্ট পান সীতা।


এই অভিশাপের কারণে লঙ্কা থেকে ফিরেও সীতাকে মহর্ষি বাল্মিকীর আশ্রমে থাকতে হয়। উল্লেখ্য ১৪ বছরের বনবাস সমাপ্ত করে রাবণবধের পর সীতাকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় ফেরেন রাম। তার পর এক ধোপা সীতার পবিত্রতায় প্রশ্ন তোলেন। রাজসভায় সীতার নিন্দা করেন সেউ ধোপা। প্রজার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে সীতাকে রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে জঙ্গলের বাস করার আদেশ দেন। এ সময়ে সীতা গর্ভবতী ছিলেন। মহর্ষি বাল্মিকীর আশ্রমে লব ও কুশের জন্ম দেন সীতা। কথিত আছে যে ধোপার অভিযোগে সীতাকে রাম থেকে আলাদা থাকতে হয়, সেই ধোপা পূর্বজন্মে টিয়া পাখি ছিল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.