বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন ঘুমের পরিমাণ কমতে থাকে?
ODD বাংলা ডেস্ক: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কেন আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে, এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো এটি একটি শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া। আমাদের যত বয়স বাড়ে, ততই আমাদের কম ঘুমের প্রয়োজন হয়। একটি শিশু জন্মের পরের সময়টায় দিনে-রাতে প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটায়। যতই আমরা বড় হতে থাকি, ততই আমাদের ঘুমের সময় কমে আসে। কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময় বাচ্চারা রাতে প্রায় ৯ ঘণ্টার মতো ঘুমায় এবং দিনের বেলা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ন্যাপ নেয়। সেটা হতে পারে সকালে এবং বিকালে কিছুক্ষণ ন্যাপ নেওয়া।
কিন্তু এই ন্যাপ নেওয়াও একটা পর্যায়ে বাচ্চার জন্য 'বাড়তি কিছু' হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ, দিনেরবেলা ন্যাপ না নিলেও তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ৮ ঘণ্টায় নেমে আসে।
এরপরে যতই মানুষের বয়স বাড়তে থাকে, ততই ঘুম কম হয়। কিন্তু ঘুমেরও কয়েকটি ধাপ রয়েছে: হালকা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা, যেটিকে বলা হয় এন ওয়ান এবং এন টু; ঘুমাতে শুরু করার প্রাথমিক অবস্থা নির্দেশ করে এগুলো।
এরপরে আসে গভীর নিদ্রা বা এন থ্রি, যাকে সত্যিকার অর্থে ভালো নিদ্রা বলা যায় এবং এই ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। হালকা নিদ্রা ও গভীর নিদ্রা- এই দুটি পিরিয়ডকে নন-রেম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) বলা হয়ে থাকে। কিন্তু যখন র্যাপিড আই মুভমেন্ট হয়, ওই সময়টাতেই মানুষ স্বপ্ন দেখে।
মানুষের যত বয়স বাড়তে থাকে, ততই সে 'শ্যালো স্লিপ' বা অগভীর নিদ্রায় বেশি সময় ব্যয় করে এবং গভীর নিদ্রায় থাকে কম সময়; সেইসঙ্গে বারবার ঘুমও ভেঙ্গে যায়। দিনেরবেলা যদিও সেই একই সময় ঘুমাই আমরা, কিন্তু এই বয়সে রাতের ঘুম অনেক কমে আসে।
বয়স্ক ব্যক্তিরা দিনের বেলা একাধিকবার ন্যাপ নেন এবং সকালের দিকে হয়তো একটু ঘুমান তারা এবং বিকালে আবার ন্যাপ নেন। কিন্তু এই সময়টা যদি রাতের ঘুমের সঙ্গে যোগ করা হয় তাহলে ঘুমের সময় দাঁড়ায় ৮-৯ ঘণ্টা। এখানে বলে রাখা ভালো যে বয়স্করা বিছানায় যায়ও তাড়াতাড়ি। ফলে এই সবকিছু মিলিয়ে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায় তাদের এবং মনে হয় যে তারা খুব সকালে উঠে পড়েছেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো, মানুষের যত বয়স বাড়ে, ততই তার দিনের বেলা কাজকর্মের পরিমাণ কমে আসে, ফলে বিশ্রাম নেওয়ার তাড়নাও কম অনুভব হয়। উল্লেখ্য যে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক বয়স্ক ব্যক্তির শরীর এভাবেই কাজ করে থাকে; কিন্তু কেউ যদি অসুস্থতায় ভোগেন তাহলে বিষয়টা আলাদা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের সমস্যা বৃদ্ধি পায়; সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ইনসমনিয়া এবং অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)।
যখন একজন ব্যক্তি ঘুমাতে পারেন না বা শোয়ার পর প্রায়ই জেগে ওঠেন কিংবা অনেক তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়েন তখন ইনসমনিয়া দেখা দেয়। স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া থেকে এটা হয় না, বরং শরীরের কোনো সমস্যা থেকে এটা ঘটে। একজন ব্যক্তি যতক্ষণ ঘুমান তা যদি তার বিশ্রামের জন্য যথেষ্ট না হয়, তাহলে অবশ্যই অনুসন্ধান করে দেখা উচিত যে তার কোনো সমস্যা আছে কিনা; আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যাটা হলো ইনসমনিয়া।
দ্বিতীয় যে সমস্যাটি বেশি দেখা যায় তা হলো স্লিপ অ্যাপনিয়া। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাতের বেলা ব্যক্তির শরীরে 'রেস্পাইরেটরি পজ' বেশি ঘটে এবং এটা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে তারা জেগে ওঠে এবং বিশ্রাম নেওয়ার প্রক্রিয়াও থাকে ভাসা ভাসা। গভীর ঘুমে যে বিশ্রাম হয় শরীরের, এই সমস্যাগুলোর কারণে নিদ্রা বাধাগ্রস্ত হলে সেটা হয় না। নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের আগে এটা মোটামুটি ঠেকিয়ে রাখা যায়, কিন্তু মেনোপজের পর এই সমস্যা বারবার দেখা দিতে থাকে।
আবারও যদি সুস্থ-স্বাভাবিক মানবদেহের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার দিকে তাকাই, এ সময়টায় মানুষ এমন একটি লাইফস্টাইল থেকে দূরে সরে আসে যখন তার জীবনে ছিল কাজের উত্তেজনা এবং প্রচুর মানুষের সাথে মিথস্ক্রিয়া। সেখান থেকে সরে এসে, যখন সে অবসরে যায় তখন আরও গোছানো একটা পরিবেশে চলে আসে এবং এসময় বিশ্রামের দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠে সবাই। কিন্তু এই বয়সেই আমাদের আর দীর্ঘ সময় বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে না। শুধু ভালো ঘুম হলেই চলে এবং ঘুমের জন্য দীর্ঘক্ষণ বিছানায় পড়ে থাকার দরকার পড়ে না।
Post a Comment