মাসিকের সময় যোনির চুলকানিতে জীবন যেন যায় যায়-এর অনুভূতি, কীভাবে সামলাবেন এই অস্বস্তি

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ভারতবর্ষে যৌনাঙ্গের সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যাটা কেমন? বছর কয়েক আগের এক সমীক্ষা দাবি করেছিল যে অন্তত ৯০ শতাংশ ভারতীয় মহিলা কোনও না কোনওভাবেই যৌনাঙ্গের সংক্রমণে আক্রান্ত। আর এর মধ্যে একটা বিশাল অংশ শুধুমাত্র সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনাতার অভাবে যৌনাঙ্গের সংক্রমণে সংক্রমিত হচ্ছেন। এই সমীক্ষাতে আরও বলা হয়েছিল যে এই সংক্রমণের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ-ই গাইনোলজিক্যাল সমস্যা। আরও গভীরে ঢুকলে বলতে হয় এর অনেকটাই সমস্যা মাসিকের সময় হওয়া যৌনাঙ্গের সংক্রণের। এই ধরনের সংক্রমণকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তার স্পষ্ট ধারণা না থাকায় সমস্যা বেড়ে যায়। মাসিকের সময় এবং তার কয়েক দিন পরেও পর্যন্ত মহিলারা যোনিপথে যে সংক্রমণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন তা হল যৌনাঙ্গের চুলকানি।


চিকিৎসকের মতে, মাসিকের সময় অনেকেই যোনিপথের ভিতরে সাবান বা ডিটারজেন্ট অথবা বাজার চলতি কিছু ভেজাইনাল জেল, ভেজাইনাল ওয়াশ অথবা ভেজাইনাল চুলকানি নিরোধক মলম লাগিয়ে থাকেন। এর ফল হিতে বিপরীত হয়। চিকিৎসকদের মতে, মাসিকের সময় অনেকেরই সাদা স্রাব বের হয়। তাতেও অনেকে ভয় পেয়ে এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে যান। তাতে চুলকানি সমস্যা গুরুতর হয়ে ওঠে।


চিকিৎসকদের মতে, মাসিকের সময় যোনিপথের ভিতরে বহিরাগত কোনও ঔষধ বা জেল অথবা সাবান দিয়ে পরিস্কার করার কোনও দরকারই নেই। কারণ, মাসিকের গঠন প্রণালি এবং নির্গমণ এতটাই বৈজ্ঞানিক যে এটা নারী শরীরের একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। মাসিকের সময় যোনিপথ এক্কেবারে পরিষ্কার এবং জীবাণুহীন থাকে।


যোনির চুলকানি আটকাতে কোনওভাবেই বেশি ক্ষারযুক্ত কোনও সাবান এই অঞ্চলে ব্যবহার করা উচিত নয়। এর অর্থ যে সার্ফ-এর ওয়াশ এখানে এক্কেবারে অনুচিত। এর বাইরে যে সব সফট ওয়াশ বা সফট জেল আছে তা যৌনাঙ্গে দেওয়া যেতে পারে, তবে তা বহিরাংশে, কোনওভাবেই ভিতরে নয়। যদি সাদা স্রাবের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাই জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।


এছাড়াও মাসিকের সময় অন্তবার্স সুতির এবং নরম কাপড়ের যেন হয় তার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে বড় কথা অন্তবার্স যেন ঢিলে-ঢোলা হয়। তাতে যেন বাতাস খেলা করার মত ঢিল থাকে। মাসিকের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনে এমনিতে যোনির উপরে মোটা চাদরের প্রলেপের মতো হয়ে থাকে। এর সঙ্গে যদি অন্তবার্সও টাইট-ফিট হয় তাহলে মহিলাদের অস্বস্তি এই সময় বেড়ে যেতে বাধ্য বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।


চিকিৎসকদের আরও সাবধানবাণী যে মাসিকের সময় অনেকে চুলকানির হাত থেকে বাঁচতে অযথা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ সেবন করেন। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যোনি-র অপরিচ্ছন্নতা যেমন খারাপ জীবাণুর জন্ম দেয়, তেমনি সেখানে আগে থাকতেই প্রচুর ভালো জীবাণু থাকে। অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধের প্রভাবে এই ভালো জীবাণুরাও মারা যায়। যা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতায় একটা ধাক্কা। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ কোনও বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেলে সমস্যা থেকে দ্রুত নিস্তার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিজে নিজে ডাক্তারি করতে গেলে ফল অন্যরকম হওয়ার আশঙ্কা ৯০ শতাংশ।


চিকিৎসকদের মতে, যৌনাঙ্গের চুলকানি গর্ভবতী মা অথবা গর্ভবতী হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা মহিলাদের ক্ষেত্রেও অনেক সময় বিপজ্জনক। তাই অবিলম্বে এঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা দরকার। এছাড়াও একটা কথা মাথায় রাখতে হবে গর্ভবতীরা যদি যৌনাঙ্গের চুলকানিতে ভুক্তভোগী তাহলে তাদের যে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ দেওয়া হয় তা খাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে যোনি পথে এই অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধকে প্রয়োগ করা হয়। তবে, যারা গর্ভবতী হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকেন, সেই সব মহিলাদেরকে মুখে খাওয়ার অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধই দেওয়া হয়।


এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা একটি ঘরোয়া টোটকার কথা বলেছেন, আর এটি হল- একটু ঈষৎ উষ্ণ গরম জল গামলায় ঢেলে তারমধ্যে কিছুক্ষণ বসে থাকে, দিনে দুই থেকে তিনবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে যৌনাঙ্গের চুলকানি থেকে অনেকটাই নিস্তার ঘটে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও চিকিৎসকরা একটি বিষয়ে এক্কেবারেই মত দেননি, আর সেটি হল যে অনেকে মধু ও দই-এর মিশ্রণে একটি ক্রিম তৈরি করে তা যৌনাঙ্গে লাগান, এর থেকে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ক্রিম অনেকবেশ ফলদায়ক এবং নির্ভরশীল বলেই মত। মধু ও দই-এর এই সংমিশ্রণে চিকিৎসকরা প্রবলভাবে আপত্তি করেছেন। চিকিৎসকদের মতে, যৌনাঙ্গের চুলকানি মোকাবিলায় অজ্ঞানতা যাতে গুরুতর না হয়ে ওঠে, তার জন্য বিশেষজ্ঞ-র পরামর্শ নেওয়াটাই বাঞ্চনীয়। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.