সর্বোচ্চ কত বছর বয়সেও বাবা হওয়া যায়?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: আধুনিক আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় দিন দিন বাড়ছে বয়স্ক বাবাদের সংখ্যা। কারণ, আরো দেরীতে জীবনসঙ্গীর সাথে গাঁটছড়া বাঁধছেন পুরুষরা। ফলে সন্তানের মুখ দেখতে হচ্ছে বেশি বয়সে। বিবিসি অবলম্বনে। 


এই সপ্তাহে বাবা হয়েছেন হলিউডের বিখ্যাত দুই অভিনেতা। এদের মধ্যে প্রথমজন হলেন– গডফাদার'খ্যাত অভিনেতা আল পাচিনো (৮৩)। অভিনেতার এজেন্ট জানান, আল-পাচিনোর ২৯ বছরের প্রেমিকা নূর আলফালাহ বর্তমানে ৮ মাসের গর্ভবতী। অর্থাৎ খুব শিগগিরই সন্তানের মুখ দেখবেন এই যুগল। 


দ্বিতীয়জন হচ্ছেন, ৭৯ বছরের দুবারের অস্কারজয়ী রবার্ট ডি নিরো। গত মাসেই তিনি সপ্তম সন্তানের বাবা হতে চলেছেন বলে জানান। 


এই অভিনেতারা স্রেফ উদাহরণ। বিখ্যাত অনেক অভিনেতা, গায়ক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেশি বয়সে বাবা হওয়ার ঘটনা একেবারে কম নয়। আসলে অনেক বছর ধরেই বাবা হওয়ার গড় বয়সটা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই বয়সটা ১৯৭২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বেড়েছে সাড়ে ৩ বছর। সে হিসাবে, গড়ে ৩০.৯ বছর বয়সে বাবা হচ্ছেন মার্কিন পুরুষরা। আর ৯ শতাংশ ৪০ বছর বয়সে দেখছেন প্রথম সন্তানের মুখ।  


গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস- এর মতে, সবচেয়ে বেশি বয়সে বাবা হন ৯২ বছরের একজন। তবে অনেক সময়েই লোকমুখে তার চেয়েও বেশি বয়সে কারো কারো বাবা হওয়ার কথা শোনা যায়। তবে বৃদ্ধ হয়ে বাবা হওয়ার বেশকিছু ঝুঁকিও আছে।   


বেশি বয়সের পিতৃত্ব নিয়ে একটি বিস্তৃত গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যুক্ত ছিল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বেশি বয়সে বাবা হওয়ার সাথে উর্বরতা, মায়েদের গর্ভধারণকালীন সমস্যা ও শিশুস্বাস্থ্যে তার প্রভাব নিয়ে করা গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। 


গবেষণায় দেখা গেছে, চল্লিশ বা পঞ্চাশের কোঠায় পা রাখা পুরুষদের শুক্রাণু সংখ্যায় যেমন কম; তেমনি উর্বরতায় ও পরিবর্তন ঘটানোর দিক থেকেও বেশ নিম্নমানের।


"অর্থাৎ এই পুরুষদের শুধু অনুর্বরতার ঝুঁকি বেশি তাই-ই নয়, তাদের শুক্রাণুতে গর্ভধারণকারী মায়েদের গর্ভাবস্থায় সন্তান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও থাকে"- গবেষণায় উল্লেখ করেন বিজ্ঞানীরা। অন্যান্য কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষের বয়স বেশি তাদের স্ত্রীদের মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের ঘটনা বেশি ঘটে।      


সন্তান জন্মের পর নানান অসুখ-বিসুখের ঝুঁকিও থাকে এক্ষেত্রে। তাছাড়া, ১৯৫০ এর দশক থেকেই বিজ্ঞান জানে, বয়স্ক পিতার সন্তানদের জেনেটিক ত্রুটি থাকতে পারে। পরবর্তীকালে, শিশুর আরো নানান শারীরিক সমস্যার সাথে তার বাবার বেশি বয়সের যোগসূত্র থাকার তথ্যপ্রমাণ সামনে এসেছে। 


উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, "বেশি বয়সের মাতৃত্বের মতোই– বেশি বয়সের পিতৃত্বের সাথেও সন্তানের দুর্বল স্বাস্থ্যের সংশ্লিষ্টতা দিন দিন আরো স্পষ্ট হচ্ছে।"


যেমন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, বেশি বয়সে যারা বাবা হন, তাদের সন্তানদের জন্মকালীন ওজন তুলনামূলকভাবে কম হয়। এছাড়া, এই নবজাতকদের খিঁচুনির মতো সমস্যা হতে পারে। শিশুর নানান ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। হৃদযন্ত্রে ত্রুটি নিয়েও জন্মাতে পারে সন্তান।


মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যগত এসব সমস্যার যোগসূত্র নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও, কীভাবে তা বয়সের কারণেই বেশি হচ্ছে সেই প্রক্রিয়াটা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। এক্ষেত্রে জীবনযাপনের ধরন  ও পরিবেশগত দূষণের মতোন অন্যান্য অনুঘটকের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা।


তবে গবেষকরা দেখেছেন, পুরুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের শুক্রাণুতে অভিযোজন বা ডিএনএ'র ক্ষতি করে এমন বৈশিষ্ট্য যোগ হতে থাকে, যা তাদের থেকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়াতে পারে। 


উর্বরতা বা সন্তান ধারণের বিষয়ে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের প্রথাগত ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তনের সূচনা করেছে এসব গবেষণা। যেমন আগে গর্ভধারণের সমস্যা হলে– চিকিসৎকরা নারীর বয়স ও তার উর্বরতার দিকে বেশি মনোযোগ দিতেন।  কিন্তু, এখন এটাও জানা যাচ্ছে যে, পুরুষের উর্বরতা তুলনামূলকভাবে ধীরে ধীরে কমলেও– তাদের বয়সটাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।  


আল পাচিনা বা রবার্ট ডি নিরোর মতো সত্তোরোর্ধ বয়োজ্যেষ্ঠদের বাবা হওয়ার ঘটনা যদিও ঘটে কদাচিৎ। কিন্তু, তাতে এটাও প্রমাণ হয়, পিতা শুধু তরুণরাই হতে পারে- সে ধারণা ঠিক নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫-৪৯ বছর বয়সীদের বাবা হওয়ার ঘটনা বেড়েছে ৫২ শতাংশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বাবা হওয়ার বয়স বাড়ছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানকেই খুঁজতে হবে মা ও শিশুর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব সমাধানের উপায়।     

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.