‘আরও বেশি পড়া দরকার’, চিরকুট লিখে ৬৫ বছর পর অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ লাইব্রেরিতে ফেরত

 


ODD বাংলা ডেস্ক: জর্জ অরওয়েলের কালজয়ী উপন্যাস '১৯৮৪'। ১৯৪৯ সালে বসে তিনি ভবিষ্যতের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কল্পনা করে লিখেছিলেন এই বই। যে রাষ্ট্রে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে বন্দী সবাই। ব্যক্তির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে সরকারের হাতে। 


উপন্যাসের একটি লাইন বর্তমানে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। সেখানে লেখা ছিল 'বিগ ব্রাদার ইজ অলওয়েজ ওয়াচিং ইউ'—অর্থাৎ বিগ ব্রাদার (কাল্পনিক চরিত্র) সবসময় আপনাদের ওপর নজরদারি করছে। বর্তমানে পরোক্ষভাবে হলেও তথ্যপ্রযুক্তির একই রকম নজরদারিতে আমরা বন্দী। নামের সাথে মিল রেখে ১৯৮৪ সালেই উপন্যাসটি নিয়ে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া হয়।


উপন্যাসটির এমন প্রাসঙ্গিকতা উপলব্ধি করেই ৬৫ বছর আগে একটি লাইব্রেরি থেকে ধার করা বইটি জরিমানা সমেত ফেরত দিলেন ৮৬ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। এটি ছিল উপন্যাসের প্রথম মুদ্রণের একটি কপি। 


মুল্টনোমাহ কাউন্টি লাইব্রেরি থেকে ১৯৫৮ সালের ১৬ মে উপন্যাসটি নেওয়া হয়েছিল। ৬৫ বছর পর ফেরত দেওয়ার সময় একটি চিরকুটও দিয়েছেন তিনি। 


নিজেকে ডব্লিউপি নামে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি চিরকুটে লেখেন, পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের সময় তিনি এটি ফেরত দিয়ে চেয়েছিলেন। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক সেটা করতে পারেননি। 


তিনি লেখেন, 'আবার পড়ার পর আমি বুঝতে পারি, বইটি আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। বইটি আবার মুদ্রিত হওয়া উচিত। বইটির উল্লেখযোগ্য অংশ আজও ততটাই প্রাসঙ্গিক যতটা ৬৫ বছর আগে ছিল...(ফেরত দিতে) এত দেরি হওয়ায় দুঃখিত। ৮৬ বছর বয়সে, অবশেষে আমি আমার বিবেককে দায়মুক্তি দিতে পেরেছি।'


বিশেষ করে উপন্যাসের ২০৭ নম্বর পৃষ্ঠার ওপরের অংশে ইঙ্গিত করে তিনি লেখেন, 'এখানে আপনি ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শব্দ দুটো যোগ করুন। মনে হবে ২০২৩ সাল নিয়েই পড়ছেন।'


১৯৪৯ সালে প্রকাশিত অরওয়েলের '১৯৮৪' বইটিতে একটি কাল্পনিক রাষ্ট্রের মাধ্যমে টোটালিটারিয়ানিজম সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এটি এমন এক সরকার ব্যবস্থা যেখানে জনগণের পুরো নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে থাকে। 


প্রধান চরিত্র উইন্সটন স্মিথের মাধ্যমে তিনি দেখান, সার্বক্ষণিক নজরদারি চালিয়ে যাওয়া একটি সরকার কীভাবে নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য জনগণকে ব্যবহার করে। 


২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বিভিন্ন বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হলে উপন্যাসটি আবারও আলোচনায় উঠে আসে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাজেটে অন্যান্য আরো সংস্থার পাশাপাশি ন্যাশনাল এনডউমেন্ট ফর দ্য আর্টের জন্য তহবিল কমানোর প্রস্তাব দিলে দেশটির প্রায় ২০০ সিনেমা হলে '১৯৮৪' চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। 


বই ফেরত দেওয়া নিয়ে লাইব্রেরিটি একটি ফেসবুক পোস্ট দেয়। এতে দেখা যায়, উপন্যাসের বাইরের অংশ এখনো ভালো অবস্থায় আছে। কোনায় হালকা দাগ। এত বছর পর ফেরত দেওয়ায় যে জরিমাা গুনতে হয়েছে, তা অবশ্য যৎসামান্যই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.