এক ভাতখেকো হাতির বারবার ফিরে আসা!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ভাতের সন্ধানে বারবার লোকালয়ে ছুটে যেত হাতিটি। এতে তার নামকরণ হয়ে যায় আরিকোম্বান (মালায়ালাম ভাষার শব্দ- যার অর্থ ভাতখেকো হাতি)। এই ভাতপ্রেমই হাতিটির জীবনে বয়ে আনে দুঃসহ বেদনা।


এক মাসের ব্যবধানে বন্য হাতিটিকে দুইবার আটক করা হয়। ওষুধ দিয়ে একাধিকবার অচেতন করা হয়। লোকালয় থেকে দূরে রাখতে নিজ আবাস থেকে আরিকোম্বানকে ২৮০ কিলোমিটার দূরের এক সংরক্ষিত বনে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর বিবিসির। 


তবে হাতিটি আবারও লোকলয়ে ফিরে আসায় শুরু হয় সমস্যা। এখন কেরালা ও তামিলনাডুতে প্রাণীটি নিয়ে চলছে আইনি লড়াই। প্রাণী অধিকারকর্মী থেকে রাজনীতিবিদ, রাজ্য সরকার ও আদিবাসীরাও জড়িয়ে পড়েছে এ ঘটনায়।


পিপল ফর অ্যানিম্যালের সদস্য অধিকারকর্মী শ্রীদেবী এস কার্থা বলেন, কেরালায় আরিকোম্বান 'অবিচারের মুখে ঘাতসহিষ্ণুতার প্রতীক' হয়ে উঠেছে। একটি হাতির জন্য স্থানান্তর প্রক্রিয়া কতটা নৃশংস হতে পারে তা এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে।


আরিকোম্বানের আদি আবাস্থল কেরালার ইদুক্কি জেলার চিন্নাকানালে। চলতি বছরের শুরুতে কয়েকবার ঘন ঘন লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় হাতিটি স্থানান্তরের দাবিতে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে।


কর্মকর্তাদের দাবি, হাতিটি গত কয়েক বছরে কয়েকজনকে হত্যা করেছে। তবে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। অধিকারকর্মী কার্থা বলেন, হাতির মানুষকে হত্যা করার কোন প্রমাণ দেয়নি সরকার।


কেরালার বন বিভাগ ঘোষণা করে, তারা আরিকোম্বানকে ধরে নিয়ে একটি প্রশিক্ষিত হাতি বানানোর পরিকল্পনা করেছে। অধিকারকর্মীরা পরে পশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে উচ্চ আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন।


এপ্রিল মাসে আদালত-নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, আরিকোম্বানকে স্থানান্তর করাই ভাল সিদ্ধান্ত হবে।


আরিকোম্বানকে ধরতে চিন্নাকানালে দুইদিনব্যাপী অভিযান চালানো হয়। এতে সম্পৃক্ত ছিল ১৫০ জন। ২৯ এপ্রিল হাতিটিকে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকা পেরিয়ার টাইগার রিজার্ভে নিয়ে যাওয়া হয়।


তার একমাস পরই প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাডুর বন কর্মকর্তারা প্রাণীটিকে আবারো স্থানান্তরের জন্য অভিযান শুরু করে। কারণ ২৯ মে আরিকোম্বানকে রাজ্যের কাম্বুর শহরে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমের ভিডিওতে দেখা যায়, প্রাণীটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্য দিয়ে দৌড়াচ্ছে। ভবন এবং যানবাহনের ক্ষতি করছে। এসময় তিনজন আহত হয়। আহতদের একজন ৬৫ বছর বয়সী, যিনি দুই দিন পর মারা যান। কর্তৃপক্ষ হাতিটিকে ধরার চেষ্টায় কারফিউ জারি করে।


আরিকোম্বানকে নিয়ে এখন আদালতের আইনি লড়াই চলছে। হাতিটিকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য কেরালা হাইকোর্টে আবেদন করেছেন এক রাজনীতিবিদ।মাদ্রাজ হাইকোর্টে দাখিল করা এক পিটিশনে তামিলনাডুতে আরিকোম্বানের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।


কেরালার বনমন্ত্রী এ কে সাসেন্দ্রন বলেন, এই সংকট দেখিয়েছে, আরিকোম্বানকে পোষ্য বানানোর পরিকল্পনা সঠিক ছিল। হাতির স্থানান্তরের জন্য অধিকারকর্মীদের দায়ী করেন তিনি।


অধিকারকর্মী কার্থা বলেন, কাম্বানের ঘটনায় দেখা গেছে আরিকোম্বান মানুষের জীবনের জন্য হুমকি নয়। তাড়া করা হলেও হাতিটি মানুষের ওপর আক্রমণ করেনি।


৫ জুন তামিলনাডুর বন কর্মকর্তারা হাতিটিকে ধরে অচেতন করে। প্রাণীটিকে বারবার অচেতন করা ও খোলা ট্রাকে নিয়ে যাওয়ার কারণে আঘাত পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।


বন্যপ্রাণী কর্মী স্টিফেন ড্যানিয়েল বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের মূল্য দিতে হচ্ছে আরিকোম্বানকে। হাতির চলাচলের পথেই মানুষ বসতি গড়েছে। প্রাণীটি যে মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তা অকল্পনীয় এবং দুই রাজ্যের বন বিভাগকে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।


এদিকে চিন্নাকানালের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর দাবি, হাতিটিকে তার আসল আবাসে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। তারা আরিকোম্বানকে ফিরিয়ে আনতে আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।


তামিলনাড়ুর বন বিভাগ জানায়, আরিকোম্বানকে কাম্বান থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে স্থানান্তরিত করা হয়। জানা যায়, স্থান্তান্তরের সময় আশেপাশে বসবাসকারী স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ জানায়। লোকালয়ে এসে ক্ষতি করতে পারে এ আশঙ্কায় তারা প্রতিবাদ জানায়।


তামিলনাড়ুর বন কর্মকর্তা সুপ্রিয়া সাহু স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে সফল বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তার নতুন বাসস্থানে 'ঘন বন এবং যথেষ্ট জল মজুদ' ছিল। হাতিটি ঠিকমত খাচ্ছিল।


প্রথমবার স্থানান্তরের পর রাজ্যের বন কর্মকর্তা রিজার্ভের ভেতর ক্যাম্প করে আরিকোম্বানের শারিরীক অবস্থা ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন।


বন কর্মকর্তা শ্রীনিভাস রেড্ডি গত সপ্তাহে টুইট করে জানান, হাতিটির শারিরীক অবস্থা ভালো ও ক্ষত শুকিয়ে গেছে। তবে এরপরই হাতিটি আবার লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।


কেরালার বনমন্ত্রী বলেন, হাতির সর্বশেষ কাণ্ডে বুঝা গেছে, এটি গভীর বন থেকে আবারো লোকালয়ের দিকে যাবে। স্থানান্তর একটি সাময়িক সমাধান। আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি না যে হাতিটি আর কেরালায় ফিরবে না। কেরালা সীমান্তে বন কর্মকর্তারা এখন সতর্ক অবস্থায় আছে।


অধিকারকর্মী কার্থা বলেন, হাতিদের নিজ আবাসে ফিরে আসার একধরনের প্রবণতা আছে। প্রথমবার স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে আরিকোম্বান ফিরে আসার চেষ্টা করছে। যদি সে মানব বসতিতে আবারও আসে, তাহলে তাকে কেরালায় ফিরিয়ে আনুন। এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.