একবিংশ শতকের মানুষের জন্য আইজ্যাক আসিমভের রোমহর্ষক ভবিষ্যদ্বাণী

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ১৯৩৯ সালে রোবট নিয়ে গল্প লিখতে শুরু করেন রুশ বংশদ্ভূত প্রখ্যাত মার্কিন সায়েন্স ফিকশন লেখক আইজ্যাক আসিমভ। এর দীর্ঘ ৮০ বছর পর আজ বিতর্ক চলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে। আসিমভ কিন্তু এই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেকটাই সঠিক অনুমান করে গেছেন তার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির পাতায়।


আসিমভের কল্পিত রোবটগুলো তিনটি আইন দ্বারা চালিত হতো: প্রথমত, কাজের মাধ্যমে হোক বা নিষ্ক্রিয়তায়– তারা এমন কিছু কাজ করবে না যা দ্বারা মানুষের ক্ষতি হয়; দ্বিতীয়ত, প্রথম আইনটির পরিপন্থি নাহলে – তারা মানুষের যেকোনো আদেশ পালনে বাধ্য থাকবে; এবং প্রথম ও দ্বিতীয় আইনের বিরুদ্ধে না গিয়ে রক্ষা করবে নিজ অস্তিত্ব।  


বিখ্যাত এই লেখক কল্পকাহিনির পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সম্ভাব্য নানান ব্যাখ্যা দিয়েও বই লিখেছেন। কোনো এক আঙ্গিকে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি আসিমভ। এভাবে ১৯৯২ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত পৃথিবীবাসীকে উপহার দিয়ে গেছেন অন্তত ৫০০ বই।


ফরাসী পরিচালক ম্যাথিয়াস থিঁয়েরি ২০২২ সালে 'আইজ্যাক আসিমভ, অ্যা ম্যাসেজ টু দ্য ফিউচার' শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এতে বিশিষ্ট এই চিন্তকের সেসব গুরুত্বপূর্ণ বার্তা তুলে ধরা হয়, যা তিনি বলেছিলেন তার অদেখা ২১ শতকের মানুষের প্রতি। প্রামাণ্যচিত্রের শুরুটা বেশ সোজাসাপ্টা। প্রথমেই আসিমভ দর্শকদের জানিয়ে দেন, তিনি কোনো ছদ্ম-বিনয় বা এমনকী কোনো বিনয়েরই ধার ধারেন না। আর এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই, কারণ সর্বকালের সেরা তিন কল্পকাহিনি লেখকদের একজন তিনি। এই ধারার সাহিত্যের মাধ্যমে আগামী দিনের বিতর্কগুলো যে তুলে ধরা সম্ভব– তা হয়তো সবচেয়ে ভালো বুঝেছিলেন আসিমভ। কিন্তু, গল্পের ছলে সুনির্দিষ্ট একটাই পথ না রেখে, ভবিষ্যতের (২১ শতকের) মানুষের জন্য বিভিন্ন উপায় রেখেছেন তিনি। যেন সম্ভাব্য যেকোনো সমাধান তারা নিজস্ব বিচারবুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বেছে নিতে পারে।   


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাগল বৈজ্ঞানিকের হাতে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব নাশের যে ধারা সাহিত্যে, চলচ্চিত্রে তৈরি হয়েছিল – তারও বিরোধিতা করেন আসিমভ। বরং তিনি সব সময়েই মনে করতেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণাই অগ্রগতি ও সামাজিক পরিবর্তনের মহত্তম চালিকাশক্তি।


আন্তঃযোগাযোগ থাকা কম্পিউটার পরিচালিত করছে এমন সমাজব্যবস্থা কল্পনা করেছিলেন তিনি। দূষণের কারণে বাস্তুসংস্থানের বিপর্যয়, বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তি নিয়েও ছিল তার গভীর উদ্বেগ। এই সংকট একমাত্র বৈশ্বিক পর্যায়ে সহযোগিতার ভিত্তিতেই সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করতেন। এছাড়া, মানুষ ও বুদ্ধিমান যন্ত্রের সহাবস্থানের ক্ষেত্রে যেসব বিপত্তি দেখা দিতে পারে, তাও দূরদৃষ্টিতে অনুধাবন করেছিলেন। শেষোক্ত এই বিষয়ে আসিমভ সম্ভাব্য দুটি পরিণতির অনুমান করেন: এআই আমাদের কর্মসংস্থান কেড়ে নিয়ে সহায়সম্বলহীন করবে; অথবা আমাদের কষ্টসাধ্য বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজের ভার থেকে মুক্তি দিয়ে আরও সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ দেবে। আমরা আজো নিশ্চিত নই, এরমধ্যে কোনটি আগামীতে বাস্তব রূপে দেখা দেবে।


এআই ব্যবসার প্রধানরা বর্তমানে সভ্যতা বিনাশের যেসব পূর্বাভাস দিচ্ছেন, হয়তো আসিমভ থাকলে তাদের সাথে একমত হতেন না। খেলায় থাকে হারজিৎ। সৃষ্টির ক্ষেত্রেও তাই। সৃষ্টিই যে একদিন স্রষ্টাকে ছাড়িয়ে যাবে – তা পেশাদার খেলোয়াড়ের মতোই কৌতূহল ও আনন্দের সাথে মানুষকে অনুধাবন করার উৎসাহ দিয়েছেন তিনি।


মানবজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদী হলেও আসিমভ অকপটে বলেছেন, যখন রোবটরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে, তারা আমাদের জায়গা দখল করবে, প্রকৃতিতে যেমনটা প্রাণীদের যোগ্যতর এক প্রজাতি অন্য প্রজাতিকে করেছে। "আমি মনে করি না, সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত থাকার কোনো দৈবিক অধিকার হোমো সেপিয়েন্সদের আছে।" এভাবে মানব-পরবর্তী দুনিয়ায় আসিমভ হয়তো আমাদের স্বাগতই জানিয়েছেন। বলেন, "অন্যান্য প্রাণীদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে আমরা (সার্বিকভাবে) নিকৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছি। তাই যত শিগগির রোবটরা আমাদের জায়গা দখল করবে, ততোই মঙ্গল।" তারা যদি আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল পড়ায়, তাহলে বিজ্ঞ এই লেখকের মতে, সেটা হবে আমাদের কর্মফলেরই পরিণতি।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.