অ্যাসপার্টামে ক্যান্সারের ঝুঁকি ক্ষীণ, ডায়েট কোক প্রেমীদের ভয়ের কারণ নেই

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ব্রিটিশ মডেল কেট মস একবার বলেছিলেন, চর্মসার (অতি চিকন) হওয়ার মতো ভালো অনুভূতি আর নেই। কোকের চিনি-মুক্ত সংস্করণ ডায়েট কোক পান করা ব্যক্তিরা তার সঙ্গে একমতই হবেন। কারণ শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা না বাড়াতেই যে অনেকে বেছে নেন ডায়েট কোক। 


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অঙ্গ সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) গত ১৪ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অবশ্য ডায়েট কোক প্রেমীদের খানিক সময়ের জন্য শঙ্কিত করে দিতে পারে। কারণ ডায়েট কোক তৈরিতে কৃত্রিম মিষ্টি (আর্টিফিসিয়াল সুইটেনার) হিসেবে ব্যবহার করা উপাদান অ্যাসপার্টামকে 'পসিবলি কার্সিনোজেনিক' হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে আইএআরসি। অর্থাৎ অ্যাসপার্টামে গ্রহণে ক্যান্সারের 'ঝুঁকি' তৈরি হতে পারে। 


তবে দৈনিক যে পরিমাণ অ্যাসপার্টাম গ্রহণে ক্যান্সারের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে তা ভেবে স্বস্তির নিশ্বাসই ফেলবেন ডায়েট কোক প্রেমীরা। কারণ অ্যাসপার্টাম গ্রহণে ক্যান্সারের সম্ভবনা নিয়ে যে আশঙ্কার কথা এতদিন ভেসে বেড়িয়েছে তা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে সর্বশেষ প্রতিবেদন। 


ডায়েট কোক ছাড়াও কাশির ওষুধ, টুথপেস্টসহ প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি পণ্যে ব্যবহার হয় অ্যাসপার্টাম। তাহলে এটি নিয়ে আসলেই একজন ভোক্তাকে কতটা চিন্তিত হওয়া উচিত? 


পণ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকিকে চারটি স্তরে ভাগ করেছে আইএআরসি। সেখানে তৃতীয় স্তরে রাখা হয়েছে অ্যাসপার্টামকে। প্রথম ও সবচেয়ে গুরুতর স্তর হলো- ডেফিনিট কার্সিনোজেনিক বা নিশ্চিতভাবে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। যেমন, ধুমপান। দ্বিতীয় স্তর হলো প্রবাবল কার্সিনোজেনিক। এসব পণ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। তৃতীয় স্তর হলো পসিবল কার্সিনোজেনিক। এসব পণ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে, তবে অনেক কম।  


যদিও আইএআরসি অ্যাসপার্টামকে সম্ভাব্য ঝুঁকির তালিকায় রেখেছে, তার মানে এই নয় যে দৈনন্দিন জীবনে গ্রহণ করা মাত্রা নিয়ে ভয়ের কিছু আছে। 


জাতিসংঘ ও ডব্লিউএইচওর সহায়তায় কাজ করা, খাদ্য সংযোজনের প্রকৃত ঝুঁকি মূল্যায়ন করা আরেকটি সংস্থা জানায়, পরীক্ষামূলক প্রাণী বা মানুষের তথ্য থেকে অ্যাসপার্টাম গ্রহণের পর কোনো বিরূপ প্রভাবের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ মেলেনি। 


সংস্থাটির নির্দেশিকায় বলা হয়, শরীরের প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে ৪০ মিলিগ্রাম অ্যাসপার্টাম গ্রহণ নিরাপদ। অর্থাৎ ৬০ কেজি ওজনের কোন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন ১২ ক্যানের বেশি ডায়েট কোক পান করেন তখন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হবে। 


কিছু কোম্পানি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যাসপার্টামের পরিবর্তে অন্য কৃত্রিম মিষ্টিজাত উপাদান যোগ করছেন। পেপসিকো ২০১৫ সালে তাদের কম ক্যালোরিযুক্ত পানীয়তে অ্যাসপার্টাম ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। ২০২০ সালে পুনরায় বন্ধ করার আগে মাঝে কিছুদিন ব্যবহার করা হয়েছিল। 


তবে কোম্পানিগুলোর জন্য চিন্তার বিষয় হলো- কৃত্রিম মিষ্টি তৈরি করা সব পণ্য একরকম নয়। কোম্পানিগুলোকে ভাবতে হয়, কোনটি প্রক্রিয়াকরণ করা সহজ হবে। কোনটায় দাম কম পড়বে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় স্বাদ ঠিক রাখা। কেননা গ্রাহকরা স্বাদে হেরফের পছন্দ করেন না।


১৯৮৫ সালে কোকা কোলা কোম্পানি তাদের মূল পানীয়র রেসিপিতে পরিবর্তন আনে। তখন তারা ৪০ হাজারে বেশি কল ও চিঠি পান। যেখানে ভোক্তারা স্বাদ নিয়ে অভিযোগ করেন। গ্রাহকদের মনোভাব বুঝতে হটলাইনে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বসায় কোকা কোলা। তিনি বলেন, গ্রাহকরা এমনভাবে অভিযোগ করছে যেন পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যু নিয়ে তারা আলোচনা করছে। 


তবে নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশের পর বলা যায়, কোম্পানিগুলো অ্যাসপার্টাম ব্যবহারেই মনস্থির করতে পারে। কারণ ভোক্তাদের উদ্বিগ্ন করতে পারে এমন কিছুই অ্যাসপার্টামে পাওয়া যায়নি। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.