কতবার মলত্যাগ করছেন? কোষ্ঠকাঠিন্যে কমতে পারে বোধক্ষমতা: গবেষণা

 


ODD বাংলা ডেস্ক: দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে বোধ বা অবধারণক্ষমতার সম্পর্ক পেয়েছেন গবেষকরা। অবধারণ বা বোধ বলতে চিন্তা, অভিজ্ঞতা এবং ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের মানসিক প্রক্রিয়াকে বোঝায়। গবেষকরা বলছেন, যারা কম মলত্যাগ করেন তাদের বোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।  


গবেষণাটি পরিচালনা করেছে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এবং ব্রিগহাম অ্যান্ড উইম্যান হসপিটাল । গবেষণায় রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন ইউনিভার্সিটি অভ ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস-এর সহযোগী অধ্যাপক চাওরান মা। জ্যেষ্ঠ গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ড. ডং ওয়াং।


চাওরান বলেন, গবেষণাটি অন্ত্রের অস্বাভাবিক কার্যকারিতার সঙ্গে বোধক্ষমতা পতনের সম্পর্ক থাকার 'প্রাথমিক প্রমাণ।' 


কম মলত্যাগ বোধক্ষমতা হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত


চাওরান বলেন, ব্যক্তি কতবার মলত্যাগ করে তার সঙ্গে বোধক্ষমতার সম্পর্ক থাকার বিষয়টি প্রথম আমাদের গবেষণাতে উঠে আসে। আগের তিনটি গবেষণার ১ লাখ ১২ হাজার ৭৫৩ জন নারী-পুরুষের তথ্য অধ্যয়ন করেছেন চাওরান ও তার দল। 


২০১২ এবং ২০১৩ সালের মধ্যে সংগৃহিত; প্রতি ব্যক্তি দিনে কতবার মলত্যাগ করেন সে তথ্য, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তাদের বোধক্ষমতার স্ব-মূল্যায়ন ও ২০১৮ সালের মধ্যে গবেষক কর্তৃক বোধক্ষমতার মূল্যায়ন নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন গবেষকরা।  


তিন বছরের অবধারণগত পার্থক্য


প্রতি তিন দিনে বা তারচেয়ে বেশি সময় পর একবার মলত্যাগ হওয়া এবং প্রতিদিন একবার মলত্যাগ হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেওয়া তথ্য তুলনা করেছেন গবেষকরা। 


চাওরান বলেন, কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত অংশগ্রহণকারীরা, যারা তিনদিন বা তারচেয়ে বেশি সময় পর মলত্যাগ করেন তাদের বোধক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে। যা তিন বছরের বেশি জ্ঞানীয় পার্থক্যের সমান। আর যারা দিনে দুইবারের বেশি মলত্যাগ করেন তাদের বোধক্ষমতায় 'সামান্য বৃদ্ধি' দেখতে পাওয়া গেছে। 


চাওরান বলেন, বোধক্ষমতা বিবেচনায় ব্যক্তির শেখা ও কাজের ক্ষেত্রে স্মৃতির স্কোর্, পাশাপাশি মনোযোগ ও সাইকোমোটর স্পিড পরীক্ষা হয়েছে। সাইমোটর বলতে বোঝায় ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গের একসঙ্গে কাজ করাকে। যেমন গাড়ি চালানো। একই সাথে চোখ ও হাতের ব্যবহার যেমন সেলাই করা। বল ছুড়ে মারা বা ধরা। কম্পিউটারে টাইপ করা। 


গবেষকরা চারটি বিষয় যাচাই করেছেন এভাবে-


১. সাধারণ স্মৃতি: সাম্প্রতিক ঘটনা বা কোন তালিকা মনে রাখা;


২. প্রায়োগিক ক্ষমতা: কোন কিছু বোধগম্য করা। মৌখিক কোনো নির্দেশনা অনুসরণ অথবা টিভি অনুষ্ঠানের মূল বিষয়বস্তু স্মরনে রাখা;


৩. মনোযোগ: এই মুহুর্তে শোনা কোনো কিছু এক সেকেন্ড পর মনে রাখা;


৪. শনাক্তকরণ দক্ষতা:  একই ধরনের রাস্তার মধ্যে যথার্থটি খুঁজে বের করা। 


গবেষকরা দেখতে পান, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকে এই চারটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগেছেন। 


মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার সাথে অন্ত্রের সম্পর্ক 


গবেষকরা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার সাথে অন্ত্র তথা নাড়িভুঁড়ির সম্পর্ক কি, সে বিষয়ও যাচাই করেছেন। 


হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, শরীরের জন্য ভালো ও মন্দ উভয় প্রকার জীবাণু দিয়ে  মাইক্রোবায়োম গঠিত। প্রায়শই সমস্যা ছাড়াই দুই ধরনের জীবাণু একই সময় দেহতে থাকতে পারে।  


তবে সংক্রামক রোগ, ডায়েট বা অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া-ধ্বংসকারী ওষুধের বর্ধিত ব্যবহার কখনও কখনও শরীরকে রোগের জন্য আরও সংবেদনশীল করতে পারে। 


মাইক্রোবায়োটা দূষিত পানীয় বা খাবারের মতো শরীরে প্রবেশকারী জীব থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে। মানুষের অন্ত্রে পাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রিভোটেলা, রুমিনোকোকাস, ব্যাকটেরয়েডস এবং ফার্মিক্যুটস। 


৫১৫ জন নারী-পুরুষের মধ্যে করা অন্ত্রের গবেষণায় চাওরান দেখেছেন, কতবার মলত্যাগ করে এবং বোধক্ষমতার সাথে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম এবং নির্দিষ্ট মাইক্রোবায়াল প্রজাতির সামগ্রিত পরিবর্তনের সাথে সম্পর্ক আছে। 


এই গবেষক বলেন, আমাদের মাইক্রোবায়োম গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের হজম ক্ষমতা কমায় এমন জীবাণুর উপস্থিতির কারণে মলত্যাগ কম হয় এবং বোধক্ষমতা হ্রাস পায়। 


গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও জানান চাওরান। ইউএসএ টুডেকে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মলত্যাগের সাথে অন্ত্রের মাইক্রোবায়ামের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। তবে গবেষণাটি অন্ত্র, মলত্যাগ ও বোধক্ষমতায় যাচাইয়ের জন্য পরিচালিত হয়নি। তাই এই তিনটির কার্যকারণ সম্পর্ক নিয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে আরো গবেষণা প্রয়োজন। 


অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন


গবেষকরা জনসাধারণকে অন্ত্রের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নিতে উৎসাহিত করেন। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ওয়াং বলেন, এই ফলাফলগুলো বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদেরকে অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। 


প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করা এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করার পাশাপাশি ফলমূল, শাকসবজির মতো স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.