ডিম-মাছের মতো প্রাণিজ প্রোটিন নাকি সোয়াবিনের মতো উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, কোনটা বেশি উপকারী?



 ODD বাংলা ডেস্ক: এদেশের অধিকাংশ বাসিন্দাই মনে করেন শুধুমাত্র পেশির জোর বাড়ানোর কাজেই প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। তবে এই ধারণার কিন্তু কোনও সারবত্তা নেই। বরং মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই সকলের মনই প্রোটিন সম্পর্কে এমন একমুখী ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে এমন ধারণা মনে পুষে রাখা অত্যন্ত ক্ষতিকর!


বিশেষজ্ঞদের কথায়, প্রোটিন হল শরীরের বিল্ডিং ব্লক। এক্ষেত্রে পেশি তৈরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসেচক এবং হরমোন তৈরির কাজেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এমনকী দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চাঙ্গা রাখতেও সাহায্য করে প্রোটিন। তাহলে বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়ই, মাসল ডেভলপমেন্ট ছাড়াও দেহের একাধিক জরুরি কাজে এই উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই দেহে প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে একাধিক সমস্যা পিছু নেওয়াটাই স্বাভাবিক। আর সেই কারণেই প্রতিদিন প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়ার পক্ষে সওয়াল করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।


তবে প্রশ্ন হল, ডিম, মাছ, মাংসের মতো প্রাণীজ প্রোটিন নাকি সোয়াবিন, ডালের মতো উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেলে মিলবে বেশি উপকার? আপনার মনের এই জরুরি প্রশ্ন নিয়েই আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শ্রাবণী মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তিনিই এই বিষয়ে আমাদের বিশদে জানালেন।


১. প্রাণিজ প্রোটিন  অত্যন্ত উপকারী

প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পড়ে। আর এই সকল খাবারের প্রোটিনের মান কিন্তু অত্যন্ত ভালো। আসলে এই ধরনের খাবারে উপস্থিত প্রোটিনে প্রায় সব ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিডই উপস্থিত রয়েছে। তাই এই ধরনের প্রোটিনের বায়োলজিক্যাল ভ্যালু খুব বেশি। ফলে শরীর এই প্রোটিনকে সহজেই গ্রহণ করে নেয় বলে জানালেন শ্রাবণী মুখোপাধ্যায়।


২. উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের আবার অন্য গুণ রয়েছে​

ডাল, সোয়াবিন, ছাতু, ভুট্টা, ছোলা সহ একাধিক উদ্ভিজ্জ খাবারে রয়েছে প্রোটিনের ভাণ্ডার। তাই নিরামিশাষীরা এই ধরনের খাবার খেয়েই দেহের প্রোটিনের ঘাটতি মিটিয়ে ফেলতে পারবেন। আর এই ধরনের খাবারের আরও একটি সুবিধা রয়েছে। আসলে এই ধরনের খাবার খেলে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও মিলবে। আর এই সমস্ত উপাদানই শরীর সুস্থ রাখার কারিগর।


​৩. প্রাণিজ না উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বেশি উপকারী?​

এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রাবণী মুখোপাধ্যায় জানালেন, আগেই বলেছি প্রাণিজ প্রোটিনের বায়োলজিক্যাল ভ্যালু অনেকটাই বেশি। অর্থাৎ এই প্রোটিনে শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত অ্যামাইনো অ্যাসিডই উপস্থিত থাকে। অপরদিকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে অ্যামাইনো অ্যাসিডের মাত্রা তুলনায় থাকে কম। ফলে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের তুলনায় প্রাণিজ প্রোটিনের গুণগত মান অনেকটাই ভালো।


তবে তিনি সতর্ক করে জানিয়ে রেখেছেন যে, এইসব কথা শুনে শুধুমাত্র প্রাণিজ প্রোটিনের খাওয়া শুরু করলে বড়সড় বিপদে পড়তে পারেন। কিন্তু কেন?


৪. প্রাণিজ প্রোটিন বেশি খেলেই চিত্তির!​

মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সহ যে কোনও ধরনের প্রাণিজ প্রোটিন যুক্ত খাবারের সঙ্গে দেহে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট প্রবেশ করে। আর এই সকল খাবারে কিন্তু ফাইবারের পরিমাণও প্রায় নেই বললেই চলে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন বেশি পরিমাণে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, ক্যানসার সহ একাধিক জটিল অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।


সেই দিক থেকে দেখতে গেলে উদ্ভিজ্জ খাবার অত্যন্ত উপকারী। আসলে এই খাবারগুলি থেকে প্রোটিনের পাশাপাশি জরুরি ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেয়ে যাবেন যা কিনা রোগ-বিরেত দূরে রাখে। তাই নিরামিষ প্রোটিন ডায়েটে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।


​৫. মেনে চলতে হবে ৫০-৫০ রুল​

শ্রাবণী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, সারাদিনের মোট ক্যালোরির ১৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে আসা দরকার। আর এই প্রোটিনের মধ্যে ৫০-৫০ ভাগ রাখতে হবে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে আর ৫০ শতাংশ গ্রহণ করতে হবে প্রাণিজ প্রোটিন সোর্স থেকে। তাহলেই প্রোটিনের ঘাটতিও মিটবে, আর সুস্থ থাকার পথও হবে প্রশস্থ।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.