৭০ বছর লোহার ফুসফুসে বন্দি থেকেও অদম্য পল আলেকজান্ডার, পড়াশুনা-প্রেম- চাকরির সঙ্গে গিনেজ বুকে নামও তুলেছেন

 


ODD বাংলা ডেস্ক: পল আলেকজান্ডার, পোলিও রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি। তাঁর জীবন কিন্তু কোনও রূপকথার গল্পের থেকে কম রোমাঞ্চকর নয়। কারণ তিনি একটি লোহার ফুসফুসে বন্দি থেকেই কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ৭০টি বসন্ত। তবে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য যে বেঁচে থাকা তা নয়, লোহার ফুসফুসে বন্দি অবস্থায় পড়াশুনা করেছেন। একের এক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বইও লিখেছেন। নাম তুলেছেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। তবে বছরে মাত্র পাঁচ মিনিট তিনি লোহার ফুসফুসের বাইরে কাটাতে পারেন।


পল বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি , যিনি কৃত্রিম লোহার ফুসফুসের মাধ্যমে বেঁচে রয়েছেন ৭০ বছর। ব্রিটেনের বাসিন্দা পল । তাঁর যখন মাত্র ৬ বছর তখনই সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। সালটা ছিল ১৯৫২। পল জানিয়েছেন, সেই ভয়ঙ্কর দিনটির কথা তাঁর এখনও মনে রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন একটি বৃষ্টিভেজা দিনে বাড়ির সামনে একটি মাঠে খেলছিলেন। সেই সময়ই প্রবল শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তাঁর মা তাঁকে দেখেই বুঝতে পারেন ছেলে অসুস্থ। পল জানিয়েছেন, প্রবল জর ছিল। আর সঙ্গে অসহ্য ঘাড়ে ব্যাথা। পলের মা বুঝতে পেরেছিলেন ছেলে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়ে দেয় পলের আর আর বাঁচার আশা নেই।


এক চিকিৎসক অবশ্য আসা ছাড়ৃতে নারাজ। সেই চিকিৎসকই পলকে তাঁর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তৎক্ষণএ পক্ষাঘাতে পলের ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত অশাড় হয়ে গেছে। তবে হাল ছাড়তে নারাজ চিকিৎসক। দ্রুত পলের ফুসফুসে অপারেশন করেন। ফুসফুস থেকে ভাইরাস বার করে দেন। তারপর থেকেই পল বন্দি তাঁর তৈরি লোহার ফুসফুসে। আর সেই ফুসফুসেই কাটিয়ে দিচ্ছেন জীবনের বাকি দিনগুলি।


কিন্তু পলের লড়াই ততটা সহজ ছিল না। কারণ তিন থেকে চার দিন পরে পলের যখন জ্ঞান ফেরে সে তখন দেখতে পায় একটি ঘরে বন্দি সে। সেখানে তারই মত আরও প্রচুর শিশু লোহার ফুসফুসে রয়েছে। তবে দিন যত যেতে থাকে ততই সহযাত্রীদের বিদায় ঘণ্টা বেজে ওটে। একে একে মৃত্যু হয় পলের সমবসয়ী অসুস্থ শিশুদের। তবে এরই মধ্যে পল বাড়ি ফেরে। তারপর শুরু হয় পড়াশুনা।


আলেকজান্ডার ছিলেন ডালাস ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুল ডিস্ট্রিক্টের প্রথম হোমস্কুল ছাত্রদের একজন। তিনি নোট নেওয়ার পরিবর্তে মুখস্থ করতে শিখেছিলেন। ২১ বছর বয়সে, তিনি W.W. থেকে তার ক্লাসে দ্বিতীয় স্নাতক হন। ১৯৬৭ সালে স্যামুয়েল হাই, শারীরিকভাবে ক্লাস না করেই ডালাস হাই স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার প্রথম ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। আইনেরও ডিগ্রি রয়েছে পলের। তিনি অস্টিন ট্রেড স্কুলে কোর্টের স্টেনোগ্রাফারদের আইনি পরিভাষা শেখানোর চাকরি পান। বর্ণময় জীবন পলের। প্রেমও এসেছিল নাকি তাঁর জীবনে। বছর বয়সে উচ্চ বিদ্যালয়ে স্নাতক হওয়ার পর ডালাসের সাউদার্ন মেথডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এই সময়েই তিনি ক্লেয়ার নামে একজন মহিলার প্রেমে পড়েন। তবে মহিলার মা তাঁদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে তারপর আর বিয়ে করার চিন্তা কোনও দিনও করেননি বলে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন আলোকজান্ডার।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.