প্রায়ই অনেককিছু ভুলে যাচ্ছেন? এই ৪ অভ্যাস স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়

 


ODD বাংলা ডেস্ক: আমাদের জীবনের একটি নির্মম সত্য হলো, দিন দিন আমাদের বয়স কমছে না বরং বেড়ে চলেছে। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির যেকোনো কিছু দেখার, শোনার অথবা চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা কমতে থাকে। আবার শুধু যে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এটি সম্পর্কিত, এমনটা নাও হতে পারে। আপনার কি কখনো এমন হয়েছে যে কোনো জায়গা বা মানুষের নামও ভুলে যাচ্ছেন? এমনকি গতকাল দুপুরে কি কি খেয়েছিলেন সেটাও ভুলে গিয়েছেন?


ইনক. ম্যাগাজিনের লেখক মার্সেল সোয়ান্তেস তার নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, তার নিজেরও প্রায়ই এমনটা হয়। বয়স ত্রিশের কোঠায় থাকার সময় যতটা ঘন ঘন কোনোকিছু ভুলে না যেতেন, তার চেয়ে বর্তমানে সমস্যাটা আরও বেশি হয়। দক্ষতার সাথে দৈনন্দিন কাজগুলো করা, চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি একটি বড় ভূমিকা রাখে। তবে ভালো খবর হলো এই যে, কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখা সম্ভব। নিম্নে তেমনই ৪টি অভ্যাসের কথা উল্লেখ করা হলো:


নিয়মিত ব্যায়াম করা


শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা মস্তিষ্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিনিয়ত শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে 'হিপোক্যাম্পাস' এর আকার বৃদ্ধি পায়, এটি মস্তিষ্কের এমন একটি অংশ যেখানে আমাদের স্মৃতি তৈরি হয়।


এছাড়া, ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, নতুন নিউরনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং 'সিনেপটিক কানেকশন' বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়ামকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি উন্নত করা যায় এবং ব্যস্ত কাজের দিনে আরও বেশি মনোযোগ ধরে রাখা যায়।


স্বাস্থ্যকর খাবার


আপনি কি খাচ্ছেন, শরীরের চাহিদা পূরণ হচ্ছে কিনা তার সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা করতে পারার সম্পর্ক রয়েছে। বেটার নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুযায়ী, প্রতিদিনের ডায়েটে মাছ এবং সবজি রাখলে, তা 'প্রায় ১৯ বছর পর্যন্ত জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার গতি কমিয়ে আনতে পারে।'


একটি গবেষণায় ৪০টি দেশের ২৭,৮৬০ জন অংশগ্রহণকারীকে পাঁচ বছর ধরে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, যারা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলেছেন তাদের জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি বাকিদের চেয়ে ২৪ শতাংশ কম ছিল। তাই আপনি যদি নিজের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার ব্যাপারে খুবই সচেতন হন, তাহলে ব্লুবেরি, নারকেল তেল, শাক এবং লো-ফ্যাট গরুর মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 


মনকে উদ্দীপিত করা 


মানসিক ব্যায়াম বলেও যে একটি ব্যাপার আছে তা হয়তো অনেকের কাছেই অজানা; কিন্তু এটিও আপনার স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞানীয় দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। পাজল সমাধান করা, বই পড়া, নতুন কোনো স্কিল অর্জন এবং কৌশলগত গেমস খেলা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং নিউরাল কানেকশন বাড়ায়। ২২টি জনসংখ্যা-ভিত্তিক গবেষণার একটি সিস্টেমেটিক রিভিউতে দেখা গেছে: বই পড়া, পাজল সমাধান বা দাবা খেলার মতো জটিল মানসিক ক্রিয়া সাত বছরের সময়কালে সার্বিকভাবে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে।


দুশ্চিন্তা কাটিয়ে ওঠা 


দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা আপনার স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে। তাই দুশ্চিন্তা কাটিয়ে ওঠার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। যেমন, ধ্যান, গভীর নিঃশ্বাস নেওয়ার সাথে সাথে ব্যায়াম, সচেতন ভাব এবং প্রশান্তিমূলক কাজে নিজেকে জড়িত রাখা স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিনকার চাপ মোকাবিলা করার একটা উপায় হলো, মস্তিষ্ককে শান্ত রাখা এবং বিরতি নেওয়া। এর আগে ইনক. এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, প্রতি ৮০-১২০ মিনিটের কাজের পর অন্তত ১০ মিনিটের বিরতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নিউরোসায়েন্স, যাতে করে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় এবং অতিরিক্ত উত্তেজিত না হয়ে পড়ে, যা কিনা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক তীক্ষ্ণতা কমিয়ে দেয়।


এছাড়াও, মন শান্ত রাখার জন্য প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট সময় নিয়ে আরও যেসব চর্চা করতে পারেন:


- মনকে সচেতন রেখে ধ্যান করা


- গান শোনা


- অন্যদের সঙ্গে মজা করা এবং প্রাণ খুলে হাসা


- প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু সময় হাঁটা

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.