শঙ্কার ছায়া ভারতের চিতা প্রকল্পে



 ODD বাংলা ডেস্ক: সুরক্ষাবেষ্টনীতে ঘেরা ছোট্ট একটা জায়গায় থাকত চিতাটি। বেশ গালভরা একটা নাম ছিল তার — দক্ষ! দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এ বছর ভারতে নিয়ে আসা ১২টি চিতার একটি সে। আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসার পরে মাসখানেকের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় তাকে। কোয়ারেন্টিনের পর সাময়িকভাবে রাখা হয় পাঁচ বর্গকিলোমিটারের বিশাল বেষ্টনীর অভ্যন্তরে একটি কমপার্টমেন্টে। মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানের ছাড়ার আগে চিতাটি যেন প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সে জন্যই ছিল এমন বন্দোবস্ত। একই ব্যবস্থা করা হয়েছিল তার সঙ্গে ভারতে আনা বাকি চিতাগুলোর জন্যও।


দুটি বিপরীতলিঙ্গের প্রাণী পরস্পরকে মিলনে প্ররোচিত করবে, এমন আশায় ৩০ এপ্রিল ভারত এবং আফ্রিকার বন্যপ্রাণী কর্মকর্তারা এক বৈঠকে দক্ষকে দুটি পুরুষ চিতার সঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাই ৬ মে দক্ষ আর অন্য দুটি পুরুষ চিতার কমপার্টমেন্টের মধ্যবর্তী দরজা খুলে দেওয়া হয়। এর মাত্র তিনদিনের মাথায় দক্ষকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, আর তারপর দুই ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে।


কী কারণ ছিল দক্ষের এমন করুণ পরিণতির পেছনে? পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে পুরুষ চিতার সঙ্গে দক্ষের মিলনকে দায়ী করা হয় । তবে বন কর্মকর্তারা এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে করছেন। তাদের ভাষ্যমতে, সবসময় এমনটা হয় না। দক্ষের মতোই আরেক নারী চিতা সিয়ায়াও পুরুষ চিতা ফ্রেডির সঙ্গে মিলনে লিপ্ত হয়েছিল, কিন্তু সিয়ায়া তো সুস্থ শরীরেই বেঁচেবর্তে আছে!


চিতা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ বন কর্মকর্তা বলেন, 'সিয়ায়া যখন মিলনে লিপ্ত হয়েছিল, তখন সে কোনো রকম জখমের শিকার হয়নি। এমনকি সে বন্দি থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে প্রসব করতেও সক্ষম হয়েছিল।'


দক্ষের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দক্ষের মিলনের সময় সহিংস আচরণ প্রতিরোধে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা 'বাস্তবিকভাবে অসম্ভব' হতো।


এদিকে কুনো জাতীয় পার্কে কর্মরত পরিবেশ সংরক্ষণ জীববিজ্ঞানী দেবব্রত পাওয়ার দক্ষের মৃত্যুর পেছনের একটি কারণ দাঁড় করান । তিনি বলেন, 'হয়তো দক্ষের মধ্যে তখন কোনো যৌন উদ্দীপনা কাজ করেনি।' আর সেই সঙ্গে ছিল বন্দি অবস্থা — এ দুইয়ের কারণে হয়তো দক্ষের মৃত্যু হতে পারে বলে জানান তিনি।


সাধারণত বুনো পরিবেশে স্ত্রী ও পুরুষ চিতা মিলনের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় খুব কমই একে অপরের ছায়া মাড়ায়। যখন কোনো স্ত্রী চিতার মধ্যে উদ্দীপনা কাজ করে তখন সে অনেকগুলো পুরুষ চিতার সঙ্গে মিলনে লিপ্ত হয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এক্ষেত্রে তারা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন চিতাদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। জীববিজ্ঞানীদের ধারণা, এমন আচরণই শাবকদের জিনগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে এবং তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।


অনেক সময় বন্দি পুরুষ চিতাদের সঙ্গে মিলনে আগ্রহ বোধ নাও করতে পারে নারী চিতারা। সেরকম পরিস্থিতিতে যদি তাদেরকে জোরপূর্বক মিলনে বাধ্য করা হয়, তার পরিণাম সাংঘাতিক হতে পারে। তাদের আহত হওয়ার সম্ভাবনাও বহুগুণে বেড়ে যায়।


তাই বন্দি অবস্থায় চিতাদের এমন মিলনের পক্ষে নন কোনো জীববিজ্ঞানীই। দেবব্রত পাওয়ার জানান, 'বন্য অঞ্চলেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু তাতে নারী চিতার পালিয়ে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করার একটা সুযোগ থাকে যা বন্দি অবস্থায় থাকে না। তাই বন্দি অবস্থায় যেকোনো ধরনের মিলন পরিহার করা উচিত।'


দক্ষই একমাত্র চিতা নয় যে ভারতে নিয়ে আসার এক মাসের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। এই তালিকায় আছে আরও দুটি চিতা, যাদের মার্চ ও মে মাসে মৃত্যু হয়। তাদের একজনের নাম সাশা, আর অন্যজন উদয়।


সাশার মৃত্যু হয় কিডনির অসুস্থতাজনিত কারণে । কিন্তু এ ব্যাপারে অবগত থাকার পরও কোনো মন্তব্য করতে চাননি জ্যেষ্ঠ বন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'আমার দায়িত্ব ছিল ভারতে চিতাগুলোকে নিয়ে আসা পর্যন্ত, নামিবিয়ায় থাকাকালীন তাদের পরিস্থিতি কেমন ছিল সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।'


তবে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অনেক জীববিজ্ঞানী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদের একজন হলেন ড. রবি চেল্লাম। তিনি বলেন, 'যদি ভারতের কাছে চিতাদের অসুস্থতার ব্যাপারে তথ্য ছিল, তবে কেন অসুস্থ চিতাদের এতদূর উড়িয়ে নিয়ে এসে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি পরিবেশের সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে?' আর যদি নামিবিয়া এই তথ্য ভারতকে না জানিয়ে থাকে তবে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী আসলে কে, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।


সাশার মৃত্যুর পরে তৃতীয় চিতা উদয়ও মারা যায়। কোয়ারেন্টিন শেষ করার এক সপ্তাহ পরেই, এপ্রিল মাসে উদয়ের মৃত্যু হয়। উদয়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কার্ডিও-পালমোনারিজনিত সমস্যাকে চিহ্নিত করেন বন কর্মকর্তারা। উদয়ের পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও সম্ভাব্য রক্তক্ষরণের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়।


এদিকে কুনো উদ্যানে বন্দি অবস্থায় সিয়ায়ার গর্ভ থেকে যে চারটি শাবক জন্মগ্রহণ করে তার মধ্যে তিনটিই ইতোমধ্যে মারা গেছে। জলশূন্যতা এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রাই তাদের মৃত্যুর কারণ বলে জানান জ্যেষ্ঠ বন কর্মকর্তা।


এ ব্যাপারে জীববিজ্ঞানী ড. চেল্লাম বলেন, কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে ভালোমতো জানাশোনা উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, 'সিয়ায়া মিলনে লিপ্ত হয়েছিল জেনেও তারা কেন আগেই ধারণা করতে পারেননি যে, সে গ্রীষ্মেই বাচ্চা প্রসব করবে এবং বাচ্চাগুলো অতিরিক্ত তাপ এবং জলশুন্যতার সম্মুখীন হবে?'


তবে এই ব্যাপারে বন কর্মকর্তারা দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের মতে, এই শাবকদের মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। এমনকি বন্য অঞ্চলে শাবকদের বেঁচে থাকার হার কেবল পাঁচ শতাংশ বলেও উল্লেখ করেন তারা।


কিন্তু এ প্রসঙ্গে চেল্লাম আরও একটি বিষয় সামনে নিয়ে আসেন। তিনি ১৯৭৫-২০০৫ সালে পরিচালিত হওয়া একটি গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করে বলেন, কুনো উদ্যানের মৃত্যুর ঘটনাগুলো বন্দি অবস্থায় হলেও এই গবেষণায় দেখা যায় বন্দি থাকা অবস্থায় এক থেকে বারো মাস বয়সী শাবকের বেঁচে থাকার হার ছিলো ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ। চেল্লামের মতে যদিও গবেষণাটি বন্দি অবস্থায় প্রজনন সুবিধায় পরিচালনা করা হয় যেখানে কুনোর পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন ছিল. তবুও শাবকের এমন উচ্চ মৃত্যুহার অনেক বেশি উদ্বেগজনক বলে জানান তিনি।


চিতাদের মৃত্যুসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও বন কর্মকর্তারা অন্যান্য অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। দুটি চিতা উদ্যানের সীমার বাইরে চলে গিয়েছিল এবং পরবর্তীসময়ে তাদেরকে ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করে ধরে আনতে হয়েছিল। অন্য দুটি চিতা এলাকা নিয়ে লড়াইয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য পশুচিকিংসা কেন্দ্রে নিতে হয়।


এসব সমস্যা ভারত সরকারের জন্যও যথেষ্ট বিব্রতকর। গত বছর সেপ্টেম্বরে নিজের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নামিবিয়া থেকে নিয়ে আসা আটটি চিতা কুনো উদ্যানে ছেড়ে দেন। ফেব্রুয়ারিতে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরও ১২টি প্রাপ্তবয়স্ক চিতা আনা হয়। চিতাগুলোর মধ্যে এখন মাত্র ১৬টি চিতা বেঁচে আছে। চিতাগুলো ছিল বৃহৎ মাংসাশী প্রাণীর বিশ্বের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় পুনঃপ্রবর্তনের অংশ।


বন বিভাগের পক্ষ থেকে মৃত্যুর প্রভাব যথাসাধ্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও, চেল্লামের মতো জীববিজ্ঞানীরা মনে করেন দুর্বল সিদ্ধান্ত এবং অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির কারণেই চিতাগুলো মারা গেছে। তবে প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেননি মধ্যপ্রদেশ বন বিভাগ এবং চিতা প্রকল্প পরিচালনা কমিটির প্রধান।


এই প্রকল্পের সূত্র ধরে কুনোর স্থানীয় বাসিন্দারাও বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন। কুনোতে যারা এতদিন বসবাস করে আসছেন, তাদের কাছ থেকে টোলও আদায় করা হচ্ছে। চিতাদের রক্ষণাবেক্ষণের কথা মাথায় রেখেই কুনো বনের অনেকাংশই ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যা তারা কয়েক দশক ধরে ব্যবহার করে আসছেন।


প্রকল্পটি নিয়ে মধ্যপ্রদেশের বন বিভাগের কর্মীরা এবং প্রকল্পের প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থা বেশ চাপের মুখে রয়েছে। 'আফ্রিকাতে সীমানাহীন জঙ্গলে চিতাদের পুনরায় প্রবর্তনের জন্য ১৫ বার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, কিন্তু তার সবগুলোই ব্যর্থ হয়েছে,' বলেন এক জ্যেষ্ঠ বন কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, এই ধরনের স্থানান্তর প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ঝুঁকি সম্পর্কে তারা অবগত ছিলেন বলেই বনকর্মীরা চিতাদের পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে প্রতিদিনই শিখছেন।


'আজকাল আমাদের সমস্ত দৃষ্টিই থাকে চিতার দিকে,' জুনের মাঝামাঝি সময়ে কুনো উদ্যানের এক প্রহরী এমনটাই জানান। শুধু প্রহরীই নন, ডেপুটি রেঞ্জারের ভাষ্যমতেও তাদের জীবন এখন সন্ন্যাস জীবনে রূপ নিয়েছে। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর তিনি কেবল একদিনের জন্য একবার বাড়ি যেতে পেরেছিলেন।


মার্চ মাস থেকে কুনোর জঙ্গলে চিতা ছাড়ার প্রক্রিয়া যখন শুরু হয় তখন চিতাগুলো অবাধে চলাফেরা করতে শুরু করে। তারা বনের বাফার জোনেও প্রবেশ করতে শুরু করে। অনেক সময় চিতাগুলোকে ট্র্যাক করতে গিয়ে বনবিভাগের পর্যবেক্ষণ দলের সদস্যদের স্থানীয়দের হাতে ডাকাত সন্দেহে মার খাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।


চিতাদের এমনভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে তাতে আরও ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ওবান নামক একটি পুরুষ চিতা কুনোর মূল সীমানা থেকে বের হয়ে ৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে একটি প্রাণীকে হত্যা করেছিল। তারপর টানা আট ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটায় সে। ঘুম ভাঙার আগ পর্যন্ত ওবানের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল বন কর্মকর্তাদের।


সঞ্জয় কুশ্ব নামক এক কর্মচারী বলেন, 'যেখানেই চিতা যায়, সেখানেই আমরা অনুসরণ করি।'


বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, স্থানের স্বল্পতার কারণে চিতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে এবং একইসাথে তাদের জাতীয় উদ্যান থেকে সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাদের এমন সতর্কবার্তা পর বন বিভাগও স্থান স্বল্পতার বিষয়টিকে আঁচ করতে পারে এবং তারা জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে চিতাদের জন্য বিকল্প আবাসের অনুরোধ করে।


কুনো জাতীয় উদ্যানের পুরো আয়তন ৭৫০ বর্গ কিলোমিটার। এই আয়তনের ভেতরে প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে তিনটি চিতা রাখার পরিকল্পনা করা হয়, যেখানে বিজ্ঞানীদের মতানুসারে প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে চিতার জনসংখ্যার ঘনত্ব একটিরও কম হওয়া উচিত।


এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কার্নাশিয়ালস গ্লোবাল নামক একটি পরামর্শকসংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী অর্জুন এম গোপালস্বামী বলেন, 'আফ্রিকার সম্পূর্ণভাবে অরক্ষিত এলাকায় চিতার ঘনত্ব প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে একটির বেশি অতিক্রম করেনি।' তিনি কেনিয়ার মাসাই মারাতে চিতা গবেষণার একটি প্রকল্পের সাথেও যুক্ত ছিলেন যেখানে তিনি প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে চিতার ঘনত্ব ১.১ এর বেশি ছিল না বলে জানান।


গোপালস্বামীসহ আরও ছয়জন বিজ্ঞানী ২০২২ সালে এই সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যেখানে তারা উল্লেখ করেন, চিতা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য যে কর্মপরিকল্পনাটি গ্রহণ করা হয়েছে, তা কুনোর ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তারা আরও বলেন,  নামিবিয়ায় পরিচালিত হওয়া একটি পুরোনো গবেষণার ফলাফলের সূত্র ধরে ভারতেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নামিবিয়ায় পরিচালিত গবেষণার ক্ষেত্রের আয়তন ছিলো ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার।


বন কর্মকর্তার অনেকেই যখন স্থান স্বল্পতার বিষয়টি নজরে আনেন তখন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিজ্ঞানীদের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে বলেছিরেন, চিতার জন্য অতিরিক্ত কোনো জায়গা দরকার আছে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি জানান, 'যে বিজ্ঞানীরা কর্মপরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে বিজ্ঞানীরা সবাই চিতা নিয়ে পড়াশোনা করেছে কেবল আফ্রিকায়। ভারতে যে চিতাগুলো এসেছে তাদের সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা বেশি। তারা ভারতীয় পরিবেশে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় সে অনুসারে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।'


সাম্প্রতিককালে চিতার সুরক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে কঠিন পর্যবেক্ষণ পদক্ষেপ। এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে বনে যারা বসবাস করত তাদেরকেও নিযুক্ত করা হয়েছে 'চিতা মিত্র' বা চিতাদের বন্ধু হিসেবে। আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।


বনে প্রবেশ করতে না পারা স্থানীয় বাসিন্দা ভারতী আক্ষেপ করে বলেন, 'আমরা আর বনের ভেতরে ঢুকতে পারি না। বনের বাইরে থেকেই আমরা কাঠ সংগ্রহ করি, যা শুকাতে অনেক মাস সময় লেগে যায়।' স্থানীয়দের ওপর কঠোর নজরদারি নিয়ে আরেক বাসিন্দা আশা বলেন, 'আগে কেবল একজন বনরক্ষী ছিল। কিন্তু চিতা প্রকল্প শুরু হওয়ার পর তার সঙ্গে আরও দুইজন চৌকিদার যুক্ত হয়েছে।'


সবমিলিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চালিয়ে যাওয়া জীবিকায় নানা ধরনের অযাচিত বিধিনিষেধ আরোপের কারণে স্থানীয় এলাকাবাসীদেরকে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.