যে ১৩ দৃশ্য ধারণের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন টম ক্রুজ
ODD বাংলা ডেস্ক: জুলাইয়ের ৩ তারিখ ৬১ বছর বয়স পূর্ণ করলেন টম ক্রুজ। তবে তার কাজকারবার দেখে মনে হবার জো নেই তিনি বুড়ো বয়সের কোঠায় পা দিয়েছেন। সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যগুলোর জন্য টম ক্রুজ ইতোমধ্যে কিংবদন্তিতুল্য হয়ে উঠেছেন। পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যাককোয়ারি খোদ জানিয়েছেন, টম ক্রুজ তার সিনেমার শ্যুটিংয়ের মারদাঙ্গা দৃশ্যগুলোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নেন। ম্যাককোয়ারির দাবি অমূলক ভাবার অবকাশ নেই, কারণ তিনি তিনটে মিশন: ইম্পসিবল সিনেমা পরিচালনা করেছেন।
বলা বাহুল্য, সিমোর সেটে এ ধরনের কাজ করার জন্য অনেক লোক আর বিশেষজ্ঞরা থাকেন — কিন্তু লাফানো, লড়াই করা, দৌড়ানো, গোলাগুলি ইত্যাদি দৃশ্য হলেই টম ক্রুজ প্রায়ই যেচে গিয়ে সেগুলো নিজেই করার জন্য প্রস্তাব দেন। এসব দৃশ্য শ্যুটিংয়ের সময় অবশ্যই যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, কিন্তু তা-তেও দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কিছুটা থেকে যায়। আর সেরকম ঘটেছিলও বেশ কয়েকবার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টম ক্রুজ-এর অ্যাকশন দৃশ্যের শ্যুটিংয়ের এরকম ১০টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হলো।
বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভবনে চড়া — মিশন: ইম্পসিবল – গোস্ট প্রটোকল (২০১১)
২০০৪ সাল থেকেই দুবাইয়ের ৮৩০ মিটার উঁচু বুর্জ খলিফা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা স্কাইক্র্যাপারের খেতাব ধরে রেখেছে। ২০১১ সালে ইথান হান্ট তথা টম ক্রুজ ওই ভবনে চড়ে বসেন, কয়েকটা জানালা ভাঙেন, ভবনের গা থেকে দড়ি ধরে ঝোলেন। সবই করেছেন কেবল সিনেমার স্বার্থে। এ দৃশ্যের শ্যুটিংয়ের আগের দিন টম ক্রুজ পরিচালক ব্র্যাড বার্ডকে বলেছিলেন তিনি কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই ভবনটির শীর্ষে উঠতে চান। সিনেমার প্রমোশনের জন্য তোলা ওই ছবি দেখলেই অনেকের হয়তো ভয়ে বুক কাঁপবে।
ছুরির লড়াই — মিশন: ইম্পসিবল ২ (২০১০)
সিনেমায় টম ক্রুজ ও ভিলেইন চরিত্রে অভিনয় করা ডোগ্রে স্কটের মধ্যে একটি চূড়ান্ত লড়াই হয়। তাদের মারামারির ওই দৃশ্যে স্কটকে একটি ছুরি নিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া ক্রুজের চোখের মধ্যে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। সত্যিকারের ছুরি ব্যবহার করা হয়েছিল এ দৃশ্যের জন্য। টম ক্রুজ স্কটকে বলেছিলেন স্কট যেন সর্বশক্তি দিয়ে ছুরিটা ক্রুজের চোখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও ছুরিটা একটা তারের সঙ্গে লাগানো ছিল, তাও সেটির ফলা ক্রুজের চোখ থেকে কেবল এক ইঞ্চি দূরে ছিল। একটু ভুল হলেই আজকে হয়তো টম ক্রুজকে আমরা এক চোখে আইপ্যাচ পরতে দেখতাম।
সাংহাইয়ের ভবনের ছাদে লাফ — মিশন: ইম্পসিবল ৩ (২০০৬)
ইথান হান্টের স্ত্রীকে একটি ভবনে আটকে রেখেছে ভিলেইন। সেখানে ঢোকার উপায় খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে ঠিক করলেন ভবনের ঢালু হয়ে থাকা ছাদে লাফ দেবেন তিনি। অবশ্য দৃশ্যটি ধারণ করা হয়েছিল একটি হ্যাংগারের ভেতরে, গ্রিন স্ক্রিনসহ। একটি ক্রেনের সঙ্গে ঝুলে থাকা টম ৬৫ ফুট উঁচু থেকে পর্দার সামনে পড়েন। তার মাথা মেঝে থেকে স্রেফ ২০ ইঞ্চি ওপরে ছিল। ক্রেনের কেবলে একটু গণ্ডগোল হলেই আর দেখতে হতো না।
অ্যাকোয়ারিয়ামে বিস্ফোরণ — মিশন: ইম্পসিবল (১৯৯৬)
দৃশ্যটিতে দেখা যায়, ইথান হান্ট ভিলেনের উপস্থিতিতে একটি রেস্তোরাঁ থেকে পালানোর সময় বিশাল এক অ্যাকোয়ারিয়ামে বিস্ফোরণ ঘটান। কারণ এমন দক্ষযজ্ঞ না বাধানো ছাড়া তার সামনে তখন আর কোনো উপায় ছিল না। এ দৃশ্যের জন্য পরিচালক ব্রায়ান ডে পালমা স্টান্ট ডাবল ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষতক তা মনঃপূত হচ্ছিল না পরিচালকের। তখন টম ক্রুজকে তিনি প্রস্তাব দেন স্টান্টের বদলে অভিনয় করতে। ওই অ্যাকোয়ারিয়ামে ১৬ টন জল ছিল। সেই জলের ধাক্কা, সঙ্গে চারপাশে ছড়িয়ে পড়া ভাঙা কাচের টুকরা — বড় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত।
অনেক উঁচু থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফ — মিশন: ইম্পসিবল – ফলআউট (২০১৮)
আকাশে অনেক উঁচুতে বিমান থেকে লাফ। এরপর বেশকিছু সময় মুক্তপতন। তারপর প্যারাসুট খুলে মাটিতে নেমে আসা। হাই অ্যাল্টিটিউড লো ওপেনিং বা হালো জাম্প বলা হয় এটিকে। প্রথম অভিনেতা হিসেবে টম ক্রুজই সিনেমার জন্য হালো জাম্প করেন ফলআউট-এ। এ দমবন্ধ করা দৃশ্যের জন্য প্রায় এক বছর প্রস্তুতি নিয়েছেন টম ক্রুজ। আকাশের পাঁচ মাইলেরও বেশি উঁচু থেকে লাফ দিয়েছিলেন তিনি। বিশেষভাবে তৈরি হেলমেটে অক্সিজেন আর ক্যামেরার বন্দোবস্ত ছিল। মাঝ আকাশে প্যারাসুট না খুললে…
গাড়ি ও ক্রুজ — জ্যাক রিচার (২০১২)
জ্যাক রিচার ফ্র্যাঞ্চাইজের প্রথম দুটি সিনেমার পরিচালকও ছিলেন ম্যাককোয়ারি। এ সিনেমার একটি দৃশ্যে রোজামন্ড পাইককে পার্কিং লট থেকে একটি গাড়ি পেছনের দিকে নিতে দেখা যায়। এরপর তিনি যখন গাড়ি সামনের দিকে চালানো শুরু করেন, তখন সামনে হঠাৎ করে টম ক্রুজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। রোজামন্ড পাইক একজন অভিনয়শিল্পী, পেশাদার কোনো চালক নন। তিনি ব্রেকের বদলে অন্য কোনো প্যাডেলে ভুলে চাপ দিলে বা দূরত্বের হিসাবে গরমিল করলে টম ক্রুজ গাড়ির ধাক্কায় মারাত্মকভাবে আহত হতে পারতেন।
চলন্ত বিমানে ঝুলন্ত ক্রুজ — মিশন: ইম্পসিবল – রোগ নেশন (২০১৫)
একটি রাশিয়ান এ৪০০ কার্গো বিমান টেকঅফ করছে, আর টম ক্রুজ বিমানটির বাইরে দরজার কাছে ঝুলছেন। 'বেঞ্জি, দরজাটা খোলো,' তাকে চিৎকার দিতে শোনা যায়। ক্রুজের গায়ে একটি হার্নেস লাগানো হয়েছিল এ দৃশ্য ধারণ করার জন্য। তবে টেকঅফের সময় উড়ে আসা কোনো পাথরের ধাক্কা বা বিমানটি আকাশে ওড়ার সময় পাখির সঙ্গে সংঘর্ষ হলে ক্রুজ মারাত্মকভাবে আহত গতে পারতেন। মিশন: ইম্পসিবল সাগা'র অন্যতম আইকনিক এ দৃশ্য গ্রহণের জন্য প্রায় আধডজনবার চেষ্টা করতে হয়েছিল টম ক্রুজকে।
ভাঙা গোড়ালি, লন্ডনের ছাদ — মিশন: ইম্পসিবল – ফলআউট (২০১৮)
মিশন: ইম্পসিবল সিনেমাগুলোর আরেকটি ট্রেডমার্ক হলো টম ক্রুজের দৌড়ানো। এরকম একটি দৌড়ের দৃশ্যে লন্ডনের কয়েকটি ভবনের ছাদের ওপর দৌড়াচ্ছিলেন টম ক্রুজ। এক ছাদ থেকে লাফ দিয়ে অন্য ছাদে যাওয়ার সময় পা দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেলে গোড়ালি ভেঙে ফেলেন ক্রুজ। নয় সপ্তাহের জন্য শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যায়। আর এ দেরির ফলে স্টুডিওকে প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার বাড়তি খরচ করতে হয়েছিল।
জলের তলায় সাড়ে ছয় মিনিট — মিশন: ইম্পসিবল – রোগ নেশন (২০১৫)
প্রায় সাড়ে ছয় মিনিট জলের নিচে দৃশ্য ধারণ করেছিলেন টম ক্রুজ। এজন্য হৃৎস্পন্দন কমানোর জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি, যাতে অক্সিজেন খরচ কমাতে পারেন। দ্য গ্রাহাম নর্টন শোতে একবার তিনি জানিয়েছিলেন, ওই দৃশ্য ধারণ করার পর তার শরীর অচেতনভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন বাধ্য হয়ে যন্ত্রের সাহায্যে নিশ্বাস নিতে হয়েছিল তাকে।
মিশন: ইম্পসিবল – ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান (২০২৩)
এ বছরের বহুল প্রত্যাশিত সিনেমাগুলোর একটি এটি। এ সিনেমার একটি দৃশ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে লাফ দেন টম ক্রুজ। তবে পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যাককোয়ারি জানিয়েছেন, এ সিনেমার প্রমোশনে ব্যবহার করা ওই লাফানোর দৃশ্যের চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল প্যারাসুট দিয়ে ঘুরে ঘুরে দ্রুতবেগে নামার দৃশ্যটি। পাহাড়ের গায়ে একটি পাটাতন থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে লাফ দেন ক্রুজ, এরপর মোটরসাইকেল ফেলে দিয়ে শূন্যে প্রায় ছয় সেকেন্ড ভাসেন। তারপর প্যারাসুট খুলে নেমে আসেন। দৃশ্যটিকে মনমতো ধারণ করতে ছয়বার লাফ দিয়েছিলেন টম ক্রুজ।
Post a Comment