অপব্যাখ্যা করেছেন ইসকনের সাধু, রামকৃষ্ণদেবের 'যত মত তত পথ' নিয়ে কী ভাবতেন সারদা মা?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: সম্প্রতি প্রবল বিতর্ক দেখা দিয়েছে ইসকনের সন্ন্যাসী অমোঘ লীলা দাস প্রভুর একটি মন্তব্য ঘিরে। যেখানে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বিখ্যাত বাণী যত মত তত পথের অপব্যাখ্যা করতে দেখা গিয়েছে ইসকন দ্বারকা মন্দিরের ভাইস প্রেসিডেন্ট অমোঘ লীলা প্রভুকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্ম চর্চা সম্পর্কিত তাঁর একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তিনি রামকৃষ্ণের মতাদর্শকে আক্রমণ করার পাশাপাশি, যে অঙ্গভঙ্গী করে কথাগুলি বলেছেন তাও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। রামকৃষ্ণের পাশাপাশি বিবেকানন্দের আমিষ ভক্ষণ নিয়েও সমালোচনা করেছেন তিনি। অমোঘ লীলা প্রভুর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ইসকন।


এই পরিস্থিতিতে দেখে নেওয়া যাক রামকৃষ্ণ ঠাকুরের যত মত তত পথ উক্তি প্রসঙ্গে কী বক্তব্য ছিল সারদা মায়ের।


সারদা মা স্বামী ঈশানানন্দকে একবার বলেছিলেন, 'তিনি সমন্বয় ভাব প্রচার করার উদ্দেশ্যে সব ধর্মমত সাধন করেছিলেন, তা আমার মনে হয়নি। তিনি সর্বদা ভগবদ্ভাবেই বিভোর হয়ে থাকতেন। খ্রিস্টান, মুসলমান, বৈষ্ণব - যে যে ভাবে তাঁকে সাধনা করে, তিনি সেই সব ভাবে সাধনা করে নানা লীলা আস্বাদন করতেন। দিনরাত কোথা দিয়ে কেটে যেত, কোনও হুঁশ থাকত না।'


রামকৃষ্ণদেবের মতে সব ধর্মের লক্ষ্য এক, শুধু তাদের পথটিই আলাদা। রামকৃষ্ণদেবের মতাদর্শে মূল কথা ছিল ঈশ্বর লাভ। তাই তাঁর যত মত তত পথ বাণীর মধ্যে দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে আমরা যে পথ দিয়ে যাই না কেন, বা যে মত অনুসরণ করি না কেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ঈশ্বর দর্শন। এই বিষয়ে উপমা দিয়ে বোঝান, 'একটি পুকুরের জল বিভিন্ন জন বালতি করে নিয়ে যায়। একজন ব্যক্তি একটি পুকুর থেকে বালতি করে জল নিয়ে যায়। কিন্তু আরও একজন বালতিতে করে জল নিয়ে যায় সে বলছে পানি, আবার আর এক জন বলছে ওয়াটার। নাম বদলে যাচ্ছে বারবার, কিন্তু বস্তুটা একই আছে।' আমাদের শাস্ত্রে আছে সত্যি বস্তু বা পরম তত্ত্ব সেটা হল এক নানা ভাবে তার বর্ণনা করা হয়।


রামকৃষ্ণদেব নিজে পরম কালীভক্ত হলেও তিনি শুধু হিন্দুধর্মমতে নিজের সাধনাকে আবদ্ধ রাখেনননি। মুসলমান ও খ্রিস্টান মতেও সাধনা করেছেন তিনি। নিজের জীবনেই যত মত তথ পথের ধারা অনুসরণ করেছেন রামকৃষ্ণ ঠাকুর। শ্রীরামকৃষ্ণদেব ছিলেন লোকগুরু, ধর্মের কঠিন তত্ত্বকে তিনি সহজ করে সবার সামনে তুলে ধরতেন। তিনি বলতেন ঈশ্বর সকল জীবের মধ্যে রয়েছেন, তাই জীবসেবাই ঈশ্বরসেবা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.