উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কার্যকর দুটি ব্যায়াম

 


ODD বাংলা ডেস্ক: উচ্চ রক্তচাপ কমাতে দুটি ব্যায়াম খুবই কার্যকর বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সব ধরনের ব্যায়াম নয়, নির্দিষ্ট দুই ধরনের ব্যায়ামের কথা বলছেন গবেষকেরা। ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনের এক গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।


গবেষকেরা বলছেন, প্লাঙ্ক ও স্কোয়াটের (বা দেয়ালে ঘেঁষে বসা) মতো ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাবে। এই ধরনের ব্যায়ামকে আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে পুরো সময় নির্দিষ্ট পেশি বা পেশিগুচ্ছকে একই অবস্থায় ধরে রাখতে হয়। এই দুটি ব্যায়াম রক্তচাপ কমানোর জন্য সবচেয়ে সহায়ক।


ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনের গবেষণায় ১৫ হাজার মানুষ অংশ নেয়। দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ২৭০ বার ব্যায়াম দুটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। আইসোমেট্রিক ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমানো ছাড়াও দেহের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনে। এই ব্যায়ামের সুফলগুলো হলো–


১. হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখে

গবেষণায় দেখা যায়, যারা সপ্তাহে তিনবার এই ব্যায়াম করছেন তাদের উচ্চ রক্তচাপ কমেছে। ব্যায়ামের প্রতি সেশন ২-৩ মিনিটের হয়ে থাকে। প্রতিটি সেশনের পর ১ থেকে ৪ মিনিট বিরতি থাকে। এই ব্যায়ামে ফলে উচ্চ–রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণকারীদের চেয়ে অন্য অংশগ্রহণকারীদের রক্তচাপ কমতে দেখা যায়। 


আইসোমেট্রিক ব্যায়াম হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকারিতা, গঠন ও মেকানিকের উন্নয়ন ঘটায়। সেই সঙ্গে সংবহনতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রেরও সক্ষমতা বাড়ায়। পেশিকে একই অবস্থায় ধরে রাখার জন্য সম্ভবত আইসোমেট্রিক ব্যায়াম হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। ব্যায়ামটি পেশিকে ধরে রাখার ফলে এটি রক্তনালিকে চেপে রাখে। আবার ছেড়ে দিলে ওই স্থানে রক্ত সরবরাহ হয়। 


২. হাড়ের সংযোগের উন্নয়ন ঘটায়

হাড়ের নড়াচড়ার জন্য লিগামেন্ট সাহায্য করে থাকে। দুর্ঘটনার কবলে পড়লে লিগামেন্টে উপর বেশি চাপ পড়ে। দেহের পেশিগুলো লিগামেন্টের উপর চাপ কমিয়ে হাড়ের সংযোগকে স্থিতিশীল করতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, আইসোমেট্রিক ব্যায়ামে নির্দিষ্ট পেশিগুচ্ছকে প্রশিক্ষণ দিয়ে লিগামেন্টের উপর চাপ কমানো যায়। 


৩. পেশির ভারসাম্য রক্ষা করে

কারো দেহের এক পেশি থেকে আরেক পেশি শক্তিশালী হতে পারে। একে ‘লিম্ব ডোমিন্যান্স’ বলে। শরীর এক পাশের পেশি ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিলে এরকম হয়। ফুটবল, বাস্কেটবল ও ভলিবলের মতো খেলার জন্যও এই অভ্যস্ততা হতে পারে। 

যদিও এক পাশের পেশি ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। তবে দীর্ঘদিন একই পেশি ব্যবহার করলে ইনজুরির সম্ভাবনা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে খেলোয়াড়দের পারদর্শিতায় ঘাটতি দেখা দিতে পারে। পেশিকে লক্ষ্য করে প্ল্যাংক ও স্কোয়াট করলে বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে শক্তির তারতাম্য কমানো যাবে। 


৪. কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি 

আইসোমেট্রিক ব্যায়ামগুলো দেহের নির্দিষ্ট স্থানের শক্তি বাড়ানোর জন্য কার্যকরী। কারণ ব্যায়ামগুলো পেশি বা পেশিগুচ্ছকে সক্রিয় করতে পারে। আইসোমেট্রিক ব্যায়ামে দেহকে প্রায়ই চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে রাখতে হয়। এই ব্যায়াম শরীরের উপর চাপ সহ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি দৈনন্দিন জীবনে অ্যাথলেটিক কর্মক্ষমতা বা শারীরিক কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে। 


৫. ব্যায়ামগুলো সহজ 

আইসোমেট্রিক ব্যায়ামগুলো ফিজিওথেরাপি ও স্পোর্টস থেরাপিতে ব্যবহার করা হয়। পেশিতে আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন প্রোগ্রামে এই ব্যায়াম ব্যবহার করা হয়। আইসোমেট্রিকে ব্যায়ামে কম নড়াচড়ার প্রয়োজন তাই এই ব্যায়াম করতে কষ্টও কম। আবার যাদের কোমর নড়াতে সমস্যা রয়েছে তারা দেয়ালের সাহায্য নিয়ে স্কোয়াট করতে পারবেন। 


৬. কম সময়ে করা যায় 

এই ব্যায়ামগুলোর প্রতি সেশন মাত্র ৮ মিনিটে করা যায়। এই সময়ে ৪ সেট ব্যায়াম করা যাবে। প্রতি সেট করতে ২ মিনিট সময় লাগবে। সেটের মাঝে ১ থেকে ৪ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া যাবে। ভালো ফলাফল পেতে এই ব্যায়াম প্রতি সপ্তাহে তিনবার করতে হবে। তাই যেকোনো ব্যস্ত মানুষও এই ব্যায়াম করতে পারবে। 


যেভাবে শুরু করবেন

আইসোমেট্রিক ব্যায়ামগুলো যেকোনো জায়গায় করা যাবে। নিজের ওজন দিয়েই পেশিকে খাটানো যাবে। 

স্কোয়াট (চেয়ারে বসার মতো করে দেয়ালে পিঠ ঠেকানো) ও প্ল্যাংকের (হাত ও পায়ের ওপর ভর করে পেট সমান করে মাটি থেকে নিজেকে উপরে রাখা) মতো ব্যায়াম দিয়ে আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ শুরু করা যাবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.