সূর্যগ্রহণকে ঘিরে সমাজের নানা কুসংস্কার, বিজ্ঞান বলছে কী?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: চলতি সাল অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম সূর্যগ্রহণটি হয়েছিল ২০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার)। এবার দ্বিতীয় সূর্যগ্রহণের পালা। আর এটিই হচ্ছে চলতি বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ।

চলতি সালের (২০২৩) দ্বিতীয় সূর্যগ্রহণটি হবে আগামী ১৪ অক্টোবর (শনিবার)।


তবে সূর্যগ্রহণকে ঘিরে আমাদের সমাজে নানা কুসংস্কার আছে। যদিও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এগুলো অন্ধভাবে মানা হচ্ছে। জানুন সূর্যগ্রহণ নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কারগুলো-


> গ্রহণের সময় গর্ভবতী মায়েরা কোনো কিছু খেলে সন্তান পেটুক হয়।


> এ সময় কিছু কাটলে, বিশেষ করে মাছ কাটলে ঠোঁট কাটা, কান কাটা বা নাক কাটা সন্তানের জন্ম হয়।


> মনে করা হয়, সূর্যগ্রহণের সময় গাছের ডাল ভাঙলে বা বাঁকানোর চেষ্টা করলে হাত-পা বাঁকানো (পোলিও) সন্তানের জন্ম হয়। গ্রহণের সময় খেতে নেই, তৈরি করা খাবার ফেলে দিতে হয়।


এগুলো নিছক কুসংস্কার। বিজ্ঞান বলছে, সূর্যগ্রহণের সঙ্গে এগুলোর ভিত্তি নেই।


এমনকি গ্রহণ দেখাও নিষেধ অনেকের কাছে। হয়ত রাহু বা ড্রাগনের সূর্যকে গিলে ফেলার ভয়ে, ছায়া লহরীর সাপদের এড়াতেই এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতো।


এখন আমরা জানি, সূর্য আর পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ এসে যাওয়ার কারণেই গ্রহণ হয়। তাই ক্ষতিকারক কোনো জীবাণুর জন্ম, কোনো বিশেষ রশ্মির প্রভাব ইত্যাদি অবান্তর।


সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী কোথা থেকে এলো?


খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দেরও আগে ব্যাবিলনীয়রা পঞ্জিকা ব্যবহার করত। তারা আবিষ্কার করে, ৬৫৮৫ দিনে বা ১৮ বছর ১১ দিন ও একটি দিনের তিন ভাগের একভাগ দিনের ব্যবধানে সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়। সূর্যগ্রহণের এই পর্যায়কালকে ‘সারনিক পর্যায়কাল’ বা সংক্ষেপে ‘সারোস’ বলা হয়।


ধারণা করা হয়, ব্যাবিলনীয়দের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে গ্রীক বিজ্ঞানী থ্যালেস সূর্যগ্রহণ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারতেন।


জ্যোতির্বিদ্যার আদি ইতিহাস থেকে জানা যায়, অ্যারিস্টার্কাস খ্রিস্টপূর্ব ৩১০-৩২০ অব্দে সূর্যকে কেন্দ্রে স্থাপন করে পৃথিবীকে সূর্যের চারিদিকে পরিভ্রমণরত কল্পনা করেন এবং অন্যান্য গ্রহদের বৃত্তাকাল গতিও সূর্যকেন্দ্রিক বলে ধারণা করেন।


পরবর্তী সময়ে প্লেটো, অ্যারিস্টটল-এর অধ্যাত্মবাদী দর্শন এবং চার্চ-এর আধিপত্যের কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। মানুষ দীর্ঘদিন জেনে এসেছিল, তাদের প্রিয় আবাস পৃথিবী সৌরজগতের কেন্দ্রস্থলে।


এই চিন্তাধারায় আঘাত করে নিকোলাস কোপার্নিকাস সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বের মডেল বা প্রকল্প হাজির করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনা, গ্রহের গতি, ক্রান্তিবিন্দুর অয়ন-চলন, ঋতু পরিবর্তনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেন।


পরবর্তী সময়ে টাইকো ব্রাহে, জোহান কেপলার, জিওর্দানো ব্রুনো, গ্যালিলিওসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের নানা আবিষ্কার এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্ব বা সৌরজগতের ধারণা।


সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের তত্ত্ব সমর্থন ও প্রচার করার জন্য জিওর্দানো ব্রুনো (১৫৪৮-১৬০০)-কে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, গ্যালিলও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২)-কে নিক্ষেপ করা হয় অন্ধকার কারাগারে।


সূর্যগ্রহণ দেখায় সতর্কতা


খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখতে নিষেধ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কোনো এক্সরে প্লেট নিয়ে বা বিশেষ চশমা পরে সূর্যগ্রহণ পরামর্শ দিয়েছেন তারা।  কেননা, খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখলে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.