‘চিন্তার বাইসাইকেল’ কম্পিউটার, আর এআই হলো ‘রকেট’



 ODD বাংলা ডেস্ক: ১৯৮৪ সালে নিউজউইককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে স্টিভ জবস কম্পিউটারকে 'বাইসাইকেল ফর দ্য মাইন্ড' বা মনের (চিন্তার) বাইসাইকেল হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। সে সময়ে তার এই মন্তব্যটি বেশ সাড়া ফেলেছিল প্রযুক্তি জগতে। 


স্টিভ জবসের মতে, সাইকেলে করে কোনো জায়গা থেকে যেমন সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে আসা যায়, ঠিক তেমনি কম্পিউটারও আমাদের চিন্তার জগতকে সহজ করে দেয়; আরও স্পষ্ট এবং সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে এই যন্ত্র। তাই কম্পিউটার ছাড়া আমাদের বর্তমান সমাজকে কল্পনাই করা যায় না বলে উল্লেখ করেছিলেন জবস।


আশির দশকে করা তার সেই মন্তব্য আজ প্রায় চার দশক পরে এসেও সত্য। একইসঙ্গে, বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই'র সম্ভাবনাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং স্টিভ জবসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এআইকে 'রকেট শিপ ফর মাইন্ড' বা চিন্তার রকেট বলাই যেতে পারে।


এআই এমন এক ধরনের প্রযুক্তি যা কম্পিউটারের মাধ্যমে শিখতে এবং চিন্তা করতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে এখন আমরা এমন সব কাজ করতে পারি যা এক সময় ছিল অসম্ভব। যেমন- বাস্তবসম্মত শিল্প তৈরি কিংবা সৃজনশীল লিখন অথবা ভাষা অনুবাদ- এ সবই এখন এআই'র মাধ্যমে সম্ভব।


ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি, গুগল বার্ড এবং মিডজার্নি- এগুলো বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। চ্যাটজিপিটি এবং গুগল বার্ড হচ্ছে টেক্সট জেনারেটর, যা বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু যেমন- কবিতা, কোড কিংবা স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে পারে। মিডজার্নি হল একটি জেনারেটিভ এআই টুল, যা মূলত বাস্তবধর্মী সুন্দর চিত্র তৈরি করতে পারে।


মানুষের বাস্তব জীবনে আজ এআই'র অবদান কতটুকু তার কিছু উদাহরণ হলো— 


চ্যাটজিপিটি: ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক পর্যায়ে যেকোনো কিছু তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। যেমন- ড্রিফ্ট কোম্পানি চ্যাটবট তৈরিতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছে। আর এই চ্যাটবট গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর দিতে, সমস্যা সমাধান করতে এবং এমনকি বিক্রিও করতে পারে।


বার্ড: কবিতা, কোড, স্ক্রিপ্ট, মিউজিক, ইমেল, চিঠি ইত্যাদির মতো ক্রিয়েটিভ টেক্সট বা সৃজনশীল লেখার ফরমেট তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় বার্ড। কোনো ছবি বা চিত্রকে বিশদভাবে বর্ণনা করতেও এটি ব্যবহার করা হয়।


মিডজার্নি: বাস্তবধর্মী সুন্দর ছবি তৈরিতে আর্টিস্ট এবং ডিজাইনাররা এটি ব্যবহার করে থাকেন। 


মানুষের জীবনে এআই'র অবদান আসলে কতখানি তার অল্প কিছু উদাহরণ ছিল এগুলো। সময়ের সাথে সাথে আরও বিকাশ ঘটছে এআই'র। তাই এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করার আশা রাখাই যায়।


মানুষ আরও কী কী ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করছে তার কিছু উদাহরণ হলো— 


শিক্ষা: শিক্ষার্থীদের শেখাতে এআইয়ের অবদান ব্যাপক। প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো কিছু শিখতে পারে এআইয়ের সাহায্য নিয়ে। এটি শিক্ষার্থীদের আরও কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সাথে শিখতে সাহায্য করতে পারে। 


সৃজনশীলতা: মানুষকে আরও সৃজনশীল হতে সাহায্য করে এআই। উদাহরণস্বরূপ, জেনারেটিভ আর্টস কোম্পানি একটি নতুন ধরনের আর্ট তৈরি করতে এআই ব্যবহার করছে। কোম্পানির এআই সিস্টেম এমন ছবি তৈরি করতে পারে, যা বাস্তব-জগতের ছবির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হলেও সৃজনশীল উপায়ে এতে আনা হয় পরিবর্তন।


সমস্যা-সমাধান: আগে যেসব সমস্যার সমাধান অনেক কঠিন বা প্রায় অসম্ভব ছিল, বর্তমানে সেসব সমস্যার সমাধান সহজ হয়েছে এআইয়ের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, আইবিএম ওয়াটসন কোম্পানির কথা বলা যেতে পারে। এআই ব্যবহার করে যেন ডাক্তারদের রোগ নির্ণয় সহজ হয়, সে ব্যাপারে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং প্যাটার্ন শনাক্ত করতে পারে ওয়াটসন, যা সাধারণত কোনো মানুষের পক্ষে করা বেশ কঠিন।


যোগাযোগ: মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে এআইয়ের ব্যবহার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। উদাহরণ হিসেবে গুগল ট্রান্সলেট কোম্পানির কথা বলা যেতে পারে। এই প্রতিষ্ঠান আরো সঠিকভাবে ও দক্ষতার সাথে ভাষা অনুবাদ করতে এআই ব্যবহার করছে। এখন ১০০টিরও বেশি ভাষায় গুগল অনুবাদ করা যায় এবং দিন দিন এটি আরও উন্নত হচ্ছে।


সুতরাং, সম্ভাবনা সবসময়ই সীমাহীন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.