এক অদেখা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার



 ODD বাংলা ডেস্ক: আমাজন বনের গভীরে সীপ্লেন ল্যান্ড করার আগে জেমস ক্যামেরন তার সিনেমার নায়ক ও তার বন্ধু আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে সতর্ক করে বলেছিলেন, "আর্নল্ড, তোমাকের শুধু মনে করিয়ে দিচ্ছি যে ওখানে গিয়ে তোমার অহমে যেন আঁচড় না লাগে, কারণ ঐ জায়গায় কেউ তোমাকে চিনবে না। এটা আমি তোমাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।" সম্প্রতি এভাবেই ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণ করলেন হলিউডের একসময়ের দাপুটে অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার।


সময়টা ছিল ২০১১ সাল। 'টার্মিনেটর ২' সিনেমা পরিচালনা করার ২০ বছর পর জেমস ক্যামেরন ও শোয়ার্জনেগার পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ব্রাজিলে গিয়েছিলেন এবং ক্যামেরন নিশ্চিত ছিলেন যে স্থানীয় আদিবাসীরা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে চিনবে না।


কিন্তু ক্যামেরনের ধারণা ভুল ছিল।


"আমরা বিমান থেকে নামলাম এবং এক মিনিটের মধ্যে আশেপাশে মানুষজন জড়ো হয়ে 'আর্নল্ড, আর্নল্ড!' বলে  চিৎকার করতে লাগলো। তারপর তারা আমাকে একটা কুরেঘরে নিয়ে গেল যেখানে আমার একটা পোস্টার তারা টানিয়ে রেখেছে", বলেন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার।



অস্ট্রিয়ায় জন্ম নেওয়া এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে এসে থিতু হওয়া বডিবিল্ডার ও অভিনেতা এবং পরে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হওয়া আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে চেনেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ৭৬ বছর বয়সী এই তারকা এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।


"সম্প্রতি কেউ একজন বলেছে যে আমাকে নাকি প্রেসিডেন্টের চেয়েও বেশি মানুষ চেনে। আমি জানিনা আসলে, আমি যা-ই করি না কেন, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা- যেখানেই যাই না কেন, লোকজন আমাকে ঠিক চিনে নেয়", নিজের ফটোবুক 'আর্নল্ড'-এ লিখেছেন এই অভিনেতা।



আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের এই বইটিতে উঠে এসেছে তার তারকা হয়ে ওঠা এবং জনগণের কাছে পরিচিতি-খ্যাতি পাওয়ার যাত্রা। দুই ভলিউমের এই ফটোবুকে আছে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের এমন অনেক ছবি যা আগে কেউ দেখেনি। ১৫০০ ডলার মূল্যের এই বইয়ে রয়েছে তার বডিবিল্ডার থাকাকালীন কিছু দুর্দান্ত ছবি, বিভিন্ন সিনেমার বিহাইন্ড-দ্য-সিন বা ক্যামেরার পেছনের দৃশ্য এবং শোয়ার্জনেগারের ব্যক্তিগত আর্কাইভ থেকে ছবি। এছাড়াও, সময়ের পরিক্রমায় রিচার্ড অ্যাভেডন, অ্যানি লিবোভিটজ এবং অ্যান্ডি ওয়ারহলের মতো বিখ্যাত আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায় আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের পোর্ট্রেটও তুলে ধরা হয়েছে এই ফটোবুকে।


অস্ট্রিয়ার ছোট্ট এক গ্রামে বেড়ে ওঠা আর্নল্ড শোয়ারজনেগারের খুব বেশি সুযোগ-সুবিধা ছিল না, তবে ছিল অদম্য আত্মবিশ্বাস এবং মনের জোর, যার ফলে তিনি চারবার মিস্টার ইউনিভার্স এবং সাতবার মিস্টার অলিম্পিয়া হতে পেরেছিলেন।



এখন  পর্যন্ত বডিবিল্ডিং এর ভক্তরা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে আদর্শ মানেন এবং তাকে সর্বকালের সেরা একজন হিসেবেও মানেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জিমের ভেতরে দেখা যায় আর্নল্ডের ছবি-পোস্টার।


কিন্তু আর্নল্ড শুধুমাত্র বডিবিল্ডার হয়ে থেমে থাকতে চাননি, তার লক্ষ্য ছিল আরও বড়। বইটিতে তিনি 'হারকিউলিস' তারকা রেজ পার্কের কথা উল্লেখ করেছেন, যিনি বডিবিল্ডিং থেকে এসেই অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি পার্ককে অনুসরণ করেন এবং সিনেমায় নাম লেখান।


তবে রাতারাতি সাফল্য পাননি শোয়ার্জনেগার। তার ভারি উচ্চারণের কারণে সত্তরের দশকে 'হারকিউলিস ইন নিউইয়র্ক' ছবিতে তার লাইনগুলো দাবিং করে নিতে হয়েছিল। সেই সিনেমায় তাকে আর্নল্ড স্ট্রং বলে পরিচিতি দেওয়া হয়েছি।


তবে নিজের চেষ্টায় আশি ও নব্বইয়ের দশকের দিকে বক্স অফিসে এক বিখ্যাত তারকাই হয়ে ওঠেন শোয়ার্জনেগার। 'কোনান দ্য বার্বারিয়ান' বা 'টার্মিনেটর' এর মতো শুধু অ্যাকশন সিনেমায়ই নয়, 'টুইনস' ও 'কিন্ডারগার্টেন কপ' এর মতো কমেডি সিনেমায়ও তার পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো।


তার সিনেমাগুলো বিশ্বব্যাপী ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো আয় করেছিল।


২০০৩ সালে শোয়ার্জনেগার ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হন। আগের গভর্নর গ্রে ডেভিসকে সরিয়ে দেওয়ার পর একটি বিশেষ রিকল নির্বাচনের মাধ্যমে শোয়ার্জনেগারকে নির্বাচিত করা হয়। ২০০৭ সালে তিনি আবারও নির্বাচিত হন, ফলে দুই মেয়াদে তিনি গভর্নর ছিলেন।


আর্নল্ডের ফটোবুকের সম্পাদক ডায়ান হ্যানসন বলেন, "আর্নল্ডের কাছে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হওয়াটা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।"



একসময় প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে 'কোনান দ্য রিপাবলিকিয়ান' নামে ডাকতেন। উল্লেখ্য যে, গভর্নর থাকাকালীন আর্নল্ড কোনো বেতনই নেননি।নিজের বইয়ে এই তারকা লিখেছেন, "গভর্নরের চেয়ারে বসে আমি যে জ্ঞান অর্জন করেছি, দুনিয়ার কোনো বই-ই আপনাকে সেই শিক্ষা দিতে পারবে না।"


তবে গভর্নর হিসেবে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ বজায় রেখেছেন। এছাড়াও তিনি ক্লিন এনার্জি ও ভোটের অধিকার বিষয়ে কাজ করছেন।


সম্পাদক হ্যানসন বলেন, "আমরা ভেবেছিলাম যে তার তিনটি ক্যারিয়ারের কথা লিখব- বডিবিল্ডিং, অভিনয় এবং রাজনৈতিক। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তার আরও একটি ক্যারিয়ার আছে। আর্নল্ড বলেন, "আমি কিন্তু এখনও মরে যাইনি! আমি এখনও প্রতিদিন কাজ করছি, আর আমি একটা ক্যারিয়ারকে সরিয়ে অন্যটা নেইনি- আমি শুধু ক্যারিয়ার যোগ করি।"


সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে 'ফুবার' নামের একটি অ্যাকশন-কমেডিতে দেখা গেছে আর্নল্ডকে। আর একটি নতুন ডকুসিরিজ এসেছে 'আর্নল্ড' নামে। এই ডকুসিরিজে শোয়ার্জনেগার জানিয়েছেন, তার জীবনের কিছু ব্যর্থতা যা বইয়ে উঠে আসেনি তার একটি হলো, মারিয়া শ্রিভারের সঙ্গে আলোচিত সেই ডিভোর্সের ঘটনা।


শোয়ার্জনেগারের ভাষ্যে, তিনি এই সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে চান না কারণ যখনই এ জিয়ে মুখ খোলেন, তখনই আঘাতটা আবার জেগে ওঠে।


হ্যানসন আশা করেন, আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে নিয়ে লেখা বইটি অনুরাগীদের মধ্যে এবং যারা তার জীবন সম্পর্কে পরিচিত নন, তাদের মধ্যেও সাড়া ফেলবে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.