সেলফোন-মনিটর-প্রিন্টার-টেলিভিশন, আপনার এসব ইলেকট্রনিক বর্জ্যের কী গতি হবে?

 


ODD বাংলা ডেস্ক: আপনি কি কখনো স্বর্ণ ফেলে দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেন? বিষয়টি অকল্পনীয় মনে হলেও, আমরা প্রায়শই এটি করে থাকি। আমরা সচরাচর যেসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফেলে দেই, সেগুলোতে প্লাস্টিকের পাশাপাশি অ্যালুমিনিয়াম, তামা, এমনকি স্বর্ণও ব্যবহৃত হয়।


বর্তমানে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যে, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের নতুন কোনো মডেল আসলেই হাতে থাকা পুরনো মডেলের ডিভাইসটি ফেলে দিচ্ছি। এছাড়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া ডিভাইসও ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এসব ডিভাইস রিসাইকেল করা কিংবা আবার ব্যবহারের কোনো উপায় খোঁজা হয়না।


গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট মনিটর (জিইএম) এর অনুমান অনুযায়ী, যে ডিভাইসগুলো ফেলে দেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি সেগুলো হলো- সেলফোন, হার্ড ড্রাইভ, সিপিইউ, মনিটর, মডেম, প্রিন্টার, কেবল এবং টেলিভিশন।


আপাতদৃষ্টিতে এসব ডিভাইস ফেলে দেওয়া বিপজ্জনক মনে না হলেও, এগুলোর রয়েছে বেশকিছু ক্ষতিকর দিক। এসব ডিভাইস তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানের মধ্যে ৭২% রিসাইকেলযোগ্য, ২৫% পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং ৩% বিপজ্জনক বর্জ্য (যেমন: ক্যাথোড-রে টিউব, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বোর্ড, রেফ্রিজারেশন গ্যাস, পিসিবি ইত্যাদি)। জিইএম জানিয়েছে, এসব উপাদানের সংমিশ্রণ থেকে পরবর্তীতে উদ্ভুত সীসার মতো বিষাক্ত উপাদান মানুষের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।


জিইএম আরো জানায়, জন্মগত সমস্যা, স্নায়বিক বিকাশের ব্যাধি, শিখন অক্ষমতা, ডিএনএ ড্যামেজ, কার্ডিওভাসকুলার এবং শ্বাসযন্ত্রেরও নানা জটিলতা তৈরি করে ই-ওয়েস্ট। একইসাথে, ই-ওয়েস্টের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)।


ইকো হাউস সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য ফেলে দেওয়া হয়। এই বর্জ্য দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হলো- ইথিওপিয়া, ঘানা, ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। আইএলও প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, ব্রাজিল (৩৫%), মেক্সিকো (২০%), কলোম্বিয়া (৮%) ও আর্জেন্টিনা (৭%) ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে সবচেয়ে বেশি বর্জ্য তৈরি করে।


জিএসএমএ অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) দ্বারা ২০১৮ সালে প্রকাশিত 'টেকনোলজি ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ইন লাতিন আমেরিকা' শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উরুগুয়েতে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ই-ওয়েস্ট তৈরি হয়। দেশটিতে বছরে জনপ্রতি ই-ওয়েস্টের পরিমাণ গড়ে ২৪.২ পাউন্ড। এক্ষেত্রে, জনপ্রতি সবচেয়ে কম ই-ওয়েস্ট তৈরি হয় নিকারাগুয়াতে; বছরে গড়ে ৪.৪ পাউন্ড।


যেভাবে কমানো যায় ই-ওয়েস্ট


আমরা যেসব ডিভাইস ফেলে দিচ্ছি, সেগুলো যে আর ব্যবহারযোগ্য থাকেনা তা কিন্তু নয়। গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট মনিটর জানায়, ইলেকট্রনিক ওয়েস্টের মাত্র ৫% পুনরুদ্ধার করা হয় বা পুনর্ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী অব্যবহৃত সেলফোনের প্রায় অর্ধেকই বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ে আছে। তাহলে ই-ওয়েস্ট কমাতে কী করা যেতে পারে?


প্রথমত, এমনসব ইলেকট্রিকাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য কিনতে হবে যেগুলোর নির্দিষ্ট অংশ পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব। তাছাড়া, একটি ডিভাইস সর্বোচ্চ যতদিন ব্যবহার করা সম্ভব, ততদিন ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ, লেটেস্ট মডেলের পেছনে না ছুটে, নিজের ব্যবহার্য ডিভাইসটাই বেশিদিন ব্যবহার করলে কমবে ই-ওয়েস্ট।


এছাড়া, কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফেলে না দিয়ে রিসাইকেলিং নিয়ে কাজ করা কোনো সংগঠন, ফাউন্ডেশন বা প্রোগ্রামে সেগুলো দিয়ে আসা বেশি যুক্তিযুক্ত। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে আপনি আসলে কী কী রিসাইকেল করতে পারেন। মূলত- কম্পিউটার, নোটবুক, মনিটর, কিবোর্ড, মাউস, ডিকোডার, মডেম, প্রিন্টার, ল্যান্ডলাইন ফোন, সেল ফোন, ফ্যাক্স মেশিন, স্টেরিও, ভিএইচএস প্লেয়ার, ডিভিডি প্লেয়ার, টেলিভিশন ইত্যাদি রিসাইকেল করা সম্ভব।


ই-ওয়েস্ট মোকাবেলায় বিকল্প ও সৃজনশীল উপায় খুঁজছে বেশকিছু সংস্থা। এর উদাহরণ হলো- আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসের 'এসকুইনাজো রেসিক্লা' নামক একটি সিভিল অ্যাসোসিয়েশন। ছোট্ট ইয়ারফোন থেকে শুরু করে রেফ্রিজারেটর পর্যন্ত- যেকোনো কিছু রিসাইকেল করে তারা। এসব ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রাংশ দিয়ে মোনা লিসা কিংবা ডার্থ ভেডার, প্রতীকীস্বরূপ নানা স্থাপত্যও নির্মাণ করে তারা।


প্রযুক্তি যত এগিয়ে যাচ্ছে, ই-ওয়েস্টও সেভাবে বাড়ছেই। অনুমান করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে বিশ্বে ই-ওয়েস্টের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি হবে। তাই যখনই আপনি কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করছেন, তখনই ভাবা উচিত, সেসব ডিভাইস ব্যবহার শেষে ঠিক কী উপায়ে সেগুলো রিসাইকেল করা যায় যাতে অর্থনীতি ও সর্বোপরি এ গ্রহ- দুটোরই উপকার হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.