এআই’র সাহায্যে বয়স্কদের ফ্যাশন র‍্যাম্পে নিয়ে এলেন নাইজেরিয়ান শিল্পী!

 


ODD বাংলা ডেস্ক: ফ্যাশন শো'তে বয়স্ক বা বৃদ্ধ ব্যক্তিদের মডেল হিসেবে উপস্থাপন খুবই বিরল ঘটনা। তার ওপর আবার ব্ল্যাক আফ্রিকান বয়স্ক মডেল নিয়ে আয়োজিত ফ্যাশন শো খুঁজে পাওয়া আরও দুষ্কর। হয়তো সে কারণেই অনেকটা 'অসম্ভবকে' সম্ভব করে দেখিয়ে বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছেন নাইজেরিয়ান ভিজুয়াল আর্টিস্ট মালিক আফেগবুয়া।  গত মাসে তিনি বয়স্কদের স্টাইলিশ, রঙবেরঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে ফ্যাশন রানওয়ে বা র‍্যাম্পে হাঁটার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই এই শিল্পীকে নিয়ে হইচই পড়ে যায়।


'দ্য এল্ডারস সিরিজ' শিরোনামের ছবিগুলো বয়স্কদের নিয়ে সমাজের গতানুগতিক ধারণা এবং একইসঙ্গে 'আফ্রিকান চেহারা ও শরীর'- যেটিকে কিনা ফ্যাশনের দুনিয়ায় একেবারে তলানিতে রাখা হয়েছে, সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।


৩৮ বছর বয়সী আফেগবুয়া বলেন, "এই সিরিজের পেছনে আমার অনুপ্রেরণা ছিল আমার মা। তিনি স্ট্রোক করেছিলেন; আমি আমার মায়ের খুব ঘনিষ্ঠ। আমার নিজেকে প্রকাশের জন্য একটা মাধ্যম দরকার ছিল, যেন আমার মা লাইফ-সাপোর্টে আছেন এমনটা সবসময় ভাবতে না হয়। আমি তাকে একটা সুন্দর পরিবেশে ভাবতে চেয়েছি।"


কিন্তু সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, আফেগবুয়ার এই ফ্যাশন শো আসলে বাস্তবে কোথাও হয়নি! ছবিগুলো দেখে সত্যিকারে ফ্যাশন ইভেন্টের মনে হলেও, এগুলো আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর সাহায্যে তৈরি।


২০ বছর আগে যখন আফেগবুয়া প্রথম একটি ক্যানন ক্যামেরা উপহার হিসেবে পান, তখন তিনি ছিলেন একজন অ্যামেচার ফটোগ্রাফার ও ভিজুয়াল আর্টিস্ট। তিনি জানান, ঐ ক্যামেরা দিয়েই তিনি ভিডিও বানাতে শুরু করেন এবং স্বশিক্ষিত চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তিনি অসংখ্য সিনেমা এবং কর্পোরেট ভিডিও বানিয়েছেন। তিনি নেটফ্লিক্সের 'মেড বাই ডিজাইন' শো-এর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সিরিজ প্রযোজনা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি নাইজেরিয়ান ডিজাইনার নাইকি ডেভিস-ওকুন্দায়েকে নিয়ে একটি বায়োপিক ডকুড্রামা নির্মাণ করেছেন।


জানা যায়, আফেগবুয়ার এআই দিয়ে তৈরি করা অন্যান্য প্রজেক্টেরই অংশ হলো 'দ্য এল্ডারস সিরিজ'। তিনি এআই প্ল্যাটফর্ম 'মিডজার্নি' ব্যবহার করেন, যেটি কিনা টেক্সট প্রম্পট অনুযায়ী ইমেজ তৈরি করে। আফেগবুয়া জানান, তিনি বাক্যাংশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ছবি পান ততক্ষণ পর্যন্ত সার্চ দেওয়া বিষয়টি পরিমার্জিত করতে থাকেন; তারপর তিনি ফটোশপে ছবিগুলো এডিট করেন। যতক্ষণ না ছবি তার মনমতো হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি এই কাজ করতে থাকেন।


এআই-এ বর্ণ ও জেন্ডার বিষয়ে পক্ষপাতীত্ব নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক রয়েছে। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের 'ফেসিয়াল রিকগনিশন' কম নিখুঁত হতে পারে এবং ত্বকের ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য এআই-এর যে সিস্টেম রয়েছে তা শুধু শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রেই কাজ করে বলে দেখা গেছে।


আফেগবুয়া জানান, তার মায়ের স্ট্রোক করার আগপর্যন্ত তিনি এআই প্ল্যাটফর্মে কৃষ্ণাঙ্গদের ছবি নিয়ে শুধু পরিক্ষা-নিরীক্ষাধর্মী কাজ করেছেন। কিন্তু তিনি দেখেন যে এআই'র তৈরি ছবিগুলো 'ততটা ভাল হয়নি'।


তিনি লক্ষ্য করেন যে, ব্ল্যাক আমেরিকানদের ছবি ব্ল্যাক আফ্রিকানদের চেয়ে ভিন্ন রকম এসেছে। "যখন আপনি 'আফ্রিকান' লিখবেন তখন তাদেরকে কম কেতাদুরস্ত লাগে এবং অতটা জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে দেখায় না", বলেন আফেগবুয়া।


এই শিল্পী জানান, টেক্সট প্রম্পটে বৈচিত্র্য এনে বারবার সার্চ দিয়ে তিনি এআইকে প্রশিক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং এআই-এ কৃষ্ণাঙ্গদের ছবি তৈরির মান উন্নত করেছেন। "এখন যেকেউ এআই-এ গিয়ে 'ফ্যাশন শো'তে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি' লিখে সার্চ দিলেই আমি যেমন ছবি পেয়েছি, তেমনই ছবি পাবে। কারণ এটা এখন এর সিস্টেমে চলে এসেছে", বলেন আফেগবুয়া।


নাইজেরিয়ান এই শিল্পী বিশ্বাস করেন, এআই শিল্পের জন্য- বিশেষ করে সিনেমা ও টেলিভিশনের জন্য একটি শক্তিশালী টুল হতে পারে। "এটা এসেছে এবং এটা থাকবে… এটা বিবর্ধিত হবে এবং দিন দিন আরও উন্নত হবে। কিন্তু এআই-ই সবকিছু নয়। এটা নিজে নিজে চিন্তা করতে পারে না, এর পেছনে সবসময়ই একজন মানুষের হাত থাকে", বলেন তিনি।


তার অন্যান্য এআই প্রজেক্টের মধ্যে রয়েছে 'এনগোকোলা' নামে একটি ফিউচারিস্টিক শহর তৈরি, যে শহরের মানুষেরা হবে বীর, সুন্দর এবং আফ্রিকান। আফেগবুয়া জানান, তিনি সবসময়ই প্রাচীন আফ্রিকান সভ্যতা ফুটিয়ে তোলে এমন একটা শহর চেয়েছিলেন।  তবে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন 'দ্য এল্ডারস সিরিজ' দিয়েই।


আফেগবুয়া জানান, ঐ সিরিজের ছবি পোস্ট করার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রাজিলে গ্যালারিতে তার কাজ প্রদর্শনের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, হলিউডের একটি সিনেমায় কাজের জন্যও চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তিনি। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় অর্জন হয়তো এটাই যে তিনি বয়স্ক ব্যক্তিদের ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.