বাগান সবুজ ও সতেজ রাখার ঘরোয়া উপায়

 


ODD বাংলা ডেস্ক: আপনার বাড়িকে প্রাণবন্ত করে সাজিয়ে তুলতে একখণ্ড বাগানই যথেষ্ট। জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান সময়ে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সময়ে বাগান করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া বেশ আশাজাগানিয়া। একটা সময় ছিল যখন শৌখিন মানুষ বাগান করতেন।


তবে বর্তমানে অনেকেরই বাড়িতে বাগান করার শখ দেখা যায়। গ্রামে অনেক খোলামেলা জায়গায় বড় পরিসরে বাগান করার সুযোগ রয়েছে। তবে শহরে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে বাসার বারান্দা বা ছাদই ভরসা। বাগান যেমন অক্সিজেনের চাহিদা মেটায়, তেমনই মনকে দেয় প্রকৃতির নির্মল প্রশান্তি।

বর্ষা গাছের খুব প্রিয় সময়। বৃষ্টির জলে কলের জলের থেকে বেশি পুষ্টি থাকায় এ সময় গাছ বেশি বাড়ে এবং সতেজ হয়ে ওঠে। এমনকি নতুন গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়ও এটি। 


বর্ষা যেমন গাছের জন্য উপকারী, তেমনি বর্ষায় অতিরিক্ত জল গাছের ক্ষতিও করতে পারে।


তাই এ সময় গাছের বিশেষ কিছু যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই শহুরে জীবনের ছোট ছোট বাগানগুলো হয়ে উঠবে সবুজ ও সতেজ।

১. জলের নিষ্কাশনব্যবস্থা : গাছের পাত্রে সঠিক নিষ্কাশনব্যবস্থা থাকতে হবে। পাত্রটি রাখার প্লেট ও তার আশপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে নিষ্কাশনব্যবস্থা বাধা না পায়। মাঝে মাঝে মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে।


তাহলে সহজেই জল শুকিয়ে যাবে। জল জমে গাছ মারা যাবে না। বর্ষায় টানা বৃষ্টির কারণে গাছ সবচেয়ে বেশি জল পায়। তাই এ সময় জল নিষ্কাশনের প্রতি সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে।

২. গাছের পাত্রে সঠিক পরিমাণে মাটি দেওয়া : গাছের জন্য মাটি তৈরির সময় দুই ভাগ মাটি এবং এক ভাগ গোবর নিতে হবে। বর্ষায় গাছকে অতিবৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে পাত্র পুরোটা ভরাট করে মাটি দিতে হবে। পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে জল নিষ্কাশনের স্থান যেন থাকে।


৩. ছত্রাকনাশক ব্যবহার : বর্ষায় গাছে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। তাই ১০-১৫ দিনে একবার করে গাছে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে নিমতেল ছত্রাকনাশক হিসেবে খুবই কার্যকর। নিমতেল গাছের পাতায় স্প্রে করলে ছত্রাকের আক্রমণ এড়ানো যায়।


৪. ছাঁটাই : গাছের ডালপালা ছাঁটাইয়ের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। এ সময় গাছের ডালপালা ছাঁটাই করলে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন পাতা গজায়। গাছ ছাঁটাই করলে গাছ দ্রুত স্বাস্থ্যকরভাবে বৃদ্ধি হয়।


৫. অতিরিক্ত জল ব্যবহার নয় : টানা বৃষ্টির কারণে বর্ষায় গাছ প্রাকৃতিকভাবেই জল পায়। তাই এ সময় আলাদা করে গাছে জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। অতিরিক্ত জল দেওয়ার ফলে গাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।


৬. রোদযুক্ত স্থানে রাখা : গাছের জন্য জল যেমন প্রয়োজন, তেমনি রোদও প্রয়োজন। বর্ষাকালে রোদ খুব একটা পাওয়া যায় না। তাই সপ্তাহে দুই-তিনবার রোদযুক্ত স্থানে গাছগুলো রাখতে হবে। বিশেষ করে সাকুলেন্ট ও ক্যাকটাস জাতীয় গাছের জন্য রোদ খুব দরকার। কারণ এরা বেশি জল সহ্য করতে পারে না।


৭. সরাসরি বৃষ্টিপাত এড়িয়ে চলা : বৃষ্টির জল উপকারী হলেও সরাসরি বৃষ্টির জল মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। তাই গাছের মাটির ওপর এ সময় একটি আবরণ বিছিয়ে দেওয়া ভালো। এ ছাড়া ঝড়ের সময় গাছগুলোকে নিরাপদ জায়গায় না রাখলে জল ও বাতাসের ঝাপটায় গাছের কাণ্ড ভেঙে যেতে পারে। বাগানের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।


৮. রিপটিং : রিপটিং করার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। এ সময় মাটি ভেজা থাকে। তাই সহজেই গাছের শিকড় মাটিতে প্রবেশ করে এবং গাছ মাটিতে লেগে যায়। তাই এ সময় গাছ বড় পাত্রে স্থানান্তরিত করার সঠিক সময়।


৯. কেঁচো সার : কেঁচো গাছের জন্য প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে। বর্ষায় মাটি ভেজা থাকার কারণে গাছের গোড়ায় কেঁচো বেশি জন্মায়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একটি টবে বেশি কেঁচো হলে সেগুলোকে উঠিয়ে অন্য টবেও দিতে পারেন। এটি গাছের জন্য উপকারী প্রাকৃতিক সার। 


১০. গাছের খাবার : ১৫ দিনের ব্যবধানে এক চামচ হাড়ের গুঁড়া, নিমখৈল ও গোবর মিশিয়ে গাছে দিতে হবে। এই মিশ্রণটি গাছের খাবার হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া কলার খোসা, বাড়িতে তৈরি সবজির কম্পোস্ট গাছের খাবারের আদর্শ উৎস।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.