প্লাটিলেট বাড়ায় যেসব খাবার

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বর্ষাকাল চলছে। এ সময় ডেঙ্গু এক আতঙ্কের নাম। আগে এই রোগ ঢাকা-ভিত্তিক হলেও এখন সারাদেশে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। এ রোগে আক্রান্ত হলে রক্তে অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমে যায়। যাতে করে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।  


প্লাটিলেট কি?

মানুষের রক্তে তিন ধরনের ক্ষুদ্র রক্তকণিকার মধ্যে সবচেয়ে ছোটটি প্লাটিলেট। যাকে বাংলায় অণুচক্রিকা বলা হয়। অণুচক্রিকার উৎপাদন হয় অস্থিমজ্জায়। প্লাটিলেট রক্তের জমাট বাঁধাতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। একজন সুস্থ মানুষের প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ দেড় থেকে চার লাখ থাকা উচিত। ডেঙ্গু হলে এই মাত্রা দ্রুত কমে গিয়ে দেহে রক্তক্ষরণ ও নানা স্বাস্থ্য-ঝুঁকি দেখা দেয়। রক্তে যদি এর পরিমাণ ২০ হাজারের নিচে নেমে যায় তাহলে কোন প্রকার আঘাত ছাড়াই দেহে রক্তক্ষরণ হতে পারে এমনকি হেমারেজিক শকের কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য ডেঙ্গু হলে রোগীকে দ্রুত প্লাটিলেট বৃদ্ধিকারী খাবার খেতে দেওয়া উচিত।


প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ


শরীরের যেকোনো স্থান থেকে সূক্ষ্ম রক্তপাত, যা পিনপয়েন্টের আকারে দেখা দেয়। ত্বকে বেগুনি রঙের চিহ্ন দেখা যায়। কারণ ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়।

পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।

মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।

প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্তপাত।

শরীরের কোথাও কাটলে অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত।


পেঁপে ও পেঁপের পাতা

মালয়েশিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইন্সিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজিতে করা একটি রিচাস এ দেখা গেছে যে পেঁপে পাতার রসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমাণ খুব দ্রুত বাড়াতে পারে। এজন্য ডেঙ্গুর কারণে কারও রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে তাকে তাজা পেঁপে পাতার রস ও পাশাপাশি পাকা পেঁপের জুসও খেতে দিতে পারেন।


ডালিম

ডালিম পুষ্টি ও খনিজ সমৃদ্ধ ফল। এটি শরীরের ক্লান্তিভাব কমায়। ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা রক্তের জন্য উপকারী। এ ছাড়াও ডালিম প্লাটিলেট কাউন্ট বজায় রাখতে সাহায্য করে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এছাড়া ডালিমের রসে থাকা ভিটামিন শরীর দুর্বলতা দূরীকরণেও কাজ করে। তাই রোগীর রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে তাঁকে প্রত্যেকদিন ১৫০ মিলিলিটার পরিমাণ ডালিমের জুস খেতে দিন এবং এভাবে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চালু রাখুন।


অ্যালোভেরার রস

অ্যালোভেরায় রয়েছে রক্তকে বিশুদ্ধ করার ক্ষমতা। এছাড়া রক্তে যেকোনো জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করতেও অ্যালোভেরা কার্যকরী। টাই ডেঙ্গু রোগীর রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে তাঁকে নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করাতে পারেন।


ডাবের জল

ডেঙ্গু জ্বরের কারণে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দেয়। তাই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে ডাবের জল পান করলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ডাবের জলে রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।


কমলা

কমলা ও অন্যান্য ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল ডেঙ্গু জ্বরে অত্যন্ত উপকারী। কমলায় ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাহায্য করে।


লেবুর রস

লেবুর রসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে খুবই সহায়ক।এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি রক্তে প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে ও রোগ প্রতিরোধেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর লেবুর শরবত খাওয়ানো উচিৎ।


আমলকি

আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই যদি ডেঙ্গু রোগীরা নিয়মিত আমলকি খান তাহলে তাদের রক্তের প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষাসহ দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।


জল ও তরল খাবার

কারও ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার জল পান করা উচিত। জ্বরের কারণে রোগীর শুধুমাত্র জল পান করতে ইচ্ছা করে না। তাই দেহে জলের চাহিদা পূরণে রোগীকে বাড়িতে বানানো ফলের জুস ও ডাবের জল পান করতে দিন।


বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি

বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাকসবজি যেমন গাজর, শস্য, টমেটো ইত্যাদি মিশিয়ে সবজি করে রোগীকে খাওয়ানো যেতে পারে। এসব সবজিতে জলের পরিমাণ বেশি থাকায় দেহে জলের অভাব দুর করতে সাহায্য করে। অন্যান্য সবজির মধ্যে ব্রকলি অন্যতম কারণ এতে ভিটামিন কে প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই প্রচুর পরিমাণে ব্রকলি খেলে তা ডেঙ্গুজনিত রক্তপাতের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।


এবার দেশে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বেশি হচ্ছে। আর এ রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্তে বেশির ভাগ সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত কমে যায়। তাই রোগীর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ানো যায় এমন খাবার দাবারের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। নানা ধরনের ভাইরাস জ্বরের কারণেও প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ দেখা দেয়া মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন। প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তার খাবার দাবারে বিশেষ সচেতন হতে হবে ও তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হবে। এছাড়া নিয়মিত মশারি টানান, মশার প্রজনন স্থলগুলো ধ্বংস করা ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগটির বিস্তার রোধ করা সম্ভব।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.