উদ্বেগ কী? জেনে নিন নিয়ন্ত্রণের উপায়

 


ODD বাংলা ডেস্ক: মানুষিক গবেষণা অনুযায়ী, সমাজের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই দিন পার করছে উদ্বেগ নিয়ে। তবে আপনি যদি উদ্বেগকে নিত্যদিনের সঙ্গী বানান তাহলেই বিপদ! কারণ, অনিয়ন্ত্রিত উদ্বেগ আপনার জীবনের মানকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তবে আমাদের জানতে হবে, সাধারণ উদ্বেগ এবং উদ্বেগজনিত রোগের মধ্যে পার্থক্য কী? চলুন তবে জেনে নিই সে সম্পর্কে-


নিত্য নতুন যেকোনো কিছু সম্পর্কে উদ্বেগ কাজ করা এক বিষয় আর সব বিষয় নিয়ে যখন আপনি প্রতিনিয়ত উদ্বিগ্ন হবেন, সেটি অন্য বিষয়। অর্থাৎ, উদ্বেগ যখন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় এবং আপনার জীবনযাত্রায় একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তখন এটি একটি রোগে পরিণত হয়।


যদিও সব উদ্বেগ খারাপ নয়। কিছু উদ্বেগ আপনাকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সচেতন করবে।


এখন প্রশ্ন তাহলে উদ্বেগ কী?


উদ্বেগ হলো মানসিক চাপ থেকে সৃষ্ট শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এটি একটি অনুভূতি যা বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণের ঘটতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী জেনেটিক্স কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের ফলে এটি সংঘটিত হয়।


উদ্বেগের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-


হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে যাওয়া

দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া

অস্থিরতা বোধ করা

যেকোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারা।


তাই চলুন জেনে নিই উদ্বেগ দূর করার উপায় সম্পর্কে-


> সক্রিয় থাকা: নিত্যদিনের সব কাজের পাশাপাশি সক্রিয় থাকতে আপনি ব্যায়াম করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী।


আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ) অনুসারে, নিয়মিত ব্যায়াম কর্মস্পৃহা বাড়ায়, যা আমাদের সক্রিয় থাকতে সহায়তা করে।


২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্যে উদ্বেগজনিত রোগগুলো কম লক্ষ করা যায়। তাই আপনি চাইলে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ব্যয়াম করতে পারেন। তবে হাঁটা বা দৌড়ানো এর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া ইয়োগা হতে পারে আরেকটি ফলপ্রদ ব্যয়াম।


> পর্যাপ্ত ঘুম: একজন ব্যক্তির যদি প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুম না হয়, তাহলে যেকোনো ধরনের মানসিক রোগ হতে পারে। ঘুম না হলে আপনার মাথায় বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা আসতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে রোগ হিসেবে আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।


এ জন্য আপনাকে প্রতিদিন রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার পর ফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না। শোবার ঘর অন্ধকার এবং ঠান্ডা রাখতে হবে।


> সুষম খাদ্য গ্রহণ: অনেক সময় আমাদের খাওয়ার পর উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস যাচাই করুন। কেননা, রক্তে শর্করার মাত্রা কম বা বেশি হলে কিংবা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে আপনার মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে। তাই নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং জটিল কার্বোহাইড্রেট, ফল ও শাকসবজি এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।


> ক্যাফেইন বর্জন: আপনার যদি দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ থাকে তবে ক্যাফেইন আপনার বন্ধু নয়। ক্যাফেইন নার্ভাসনেসের কারণ হতে পারে, যা থেকে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ক্যাফেইন মস্তিষ্কের রাসায়নিক অ্যাডেনোসিনকে ব্লক করে দেয়। যা আপনাকে ক্লান্ত বোধ করায় সঙ্গে এটি অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণকেও ট্রিগার করে যা উদ্বেগকে উৎসাহিত করে। তাই আস্তে আস্তে ক্যাফেইন গ্রহণের অভ্যাস পরিহার করুন। এর বিকল্প হিসেবে আপনি দুধ, বাদাম শরবত ইত্যাদি খেতে পারেন।


অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা: মদ্যপান নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা শরীরকে উদ্বেগের নির্দিষ্ট লক্ষণগুলোর দিকে নিয়ে যায়। অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকার জন্য বিকল্প হিসেবে ফলের রস, লেবু জল খাওয়া যেতে পারে।


ধূমপান না করা: ধূমপায়ীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিন্তায় থাকলে সিগারেট খায়। এ অবস্থায় সিগারেট খাওয়াকে আপনার প্রশান্তির মনে হলেও এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগ বাড়ায়।


গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি জীবনে যত তাড়াতাড়ি ধূমপান শুরু করবেন, পরবর্তী সময়ে আপনার উদ্বেগজনিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি তত বেশি। সিগারেটের ধোঁয়ার নিকোটিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থগুলো উদ্বেগের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা মস্তিষ্কের সাধারণ কাজকে ব্যাহত করে।


তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া কিছু সময়ের জন্য ধূমপানের বিকল্প হিসেবে স্মোকিং কুইট চকলেট বা চুইংগাম খেতে পারেন।


অ্যারোমা থেরাপি: অ্যারোমা থেরাপি হলো একটি প্রচলিত চিকিৎসা যা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ব্যবহার করে আসছে। এ থেরাপির মাধ্যমে আপনার শরীর, মন এবং আত্মার মঙ্গল সাধন হবে। কেননা, এ থেরাপিতে প্রাকৃতিক উদ্ভিদের নির্যাস এবং এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা হয়।


প্রাকৃতিক উদ্ভিদের নির্যাস দ্বারা তৈরি এসেনশিয়াল অয়েল সরাসরি শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করা যায়। আবার এই তেল উষ্ণস্নান (হট শাওয়ার) বা ডিফিউজারে যোগ করে থেরাপি নেয়া যেতে পারে।


মূলত অ্যারোমা থেরাপি আপনার মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া ভালো ঘুম হতে এবং আপনার মেজাজকে ফুরফুরে রাখবে।


ক্যামোমাইল চা: গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যামোমাইল সাধারণ উদ্বেগবেষগের (GAD) বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী নিরাময় হিসেবে কাজ করে। ক্যামোমাইল চা হলো একটি সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার যা আপনার স্নায়ুকে শান্ত করে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করবে।


ক্যামোমাইল চা তৈরি করতে আপনার ক্যামোমাইল ফুল লাগবে। যা গরম জলে ফুটিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ক্যামোমাইল চা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.