ভ্রমণে চূড়ান্ত বিলাসিতা চাইলে, বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরে চালু হচ্ছে ‘ব্যক্তিগত টার্মিনাল’

 


ODD বাংলা ডেস্ক: একবার ভাবুন তো, আপনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন, কিন্তু লোকজনের কোলাহলে পরিপূর্ণ কোনো টার্মিনালে পা রাখতে হচ্ছে না; বরং আপনি বিমানে উঠবেন ব্যক্তিগত একটি টার্মিনাল থেকে।


আপনার কাছে যদি যথেষ্ট টাকা থাকে তাহলে এটাও সম্ভব। আর তার জন্য বিষয়টা শুধু কল্পনা করারও প্রয়োজন নেই, বাস্তবেই আসছে এমন সুবিধা- যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত দুটি প্রধান বিমানবন্দরে থাকবে এই ব্যবস্থা।


বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ভ্রমণেচ্ছুদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হচ্ছে একটি নতুন, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত টার্মিনাল। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে পিএস। এটি পিএস-এর অধীনে দ্বিতীয় এ ধরনের টার্মিনাল। ইতোমধ্যেই ২০১৭ সাল থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস বিমানবন্দরে একই রকম আরেকটি ব্যক্তিগত টার্মিনাল চালু রয়েছে।


পিএস-এর সিইও আমিনা পোর্টার বলেন, "আমেরিকার সবচেয়ে ব্যস্ততম একটি বিমানবন্দরে পিএস এর দ্বিতীয় ব্যক্তিগত টার্মিনাল চালু করার মাধ্যমে আমরা অগণিত ভ্রমণকারীদের আরামদায়ক ও বিলাসবহুলভাবে ভ্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছি, আর এই দুটি বিষয়ের সাথে পিএস ব্র্যান্ডের নাম এখন একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়। আমাদের এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করার পেছনে আটলান্টা ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাভিয়েশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং আমরা আশা করি, অন্যান্য বিমানবন্দরও আমাদের পথ অনুসরণ করবে।"


দুবাই, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরেও ব্যক্তিগত ভিআইপি টার্মিনাল রয়েছে। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রেও এটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। পিএস ২০২৪ সালের বসন্তে ডালাস ফোর্ট ওর্থ-এ এবং ২০২৫ সালে মায়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরও দুটি ব্যক্তিগত টার্মিনাল যোগ করবে বলে জানায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।


কী আছে পিএস টার্মিনালে?


২০১৭ সালে প্রথম 'প্রাইভেট স্যুইট' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় পিএস। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের এই টার্মিনাল 'বিচক্ষণ ও তুখোড় ভ্রমণপ্রেমীদের এক ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতা দিবে বিমানবন্দরে।' বাস্তব দিক থেকে চিন্তা করলে, পিএস টার্মিনাল ব্যবহারকারীরা বিলাসবহুল, ভিআইপি স্থানে অপেক্ষা করবেন বিমানের জন্য এবং ভিড়ের মধ্যে নিজেদের মালামাল নিয়ে ছোটাছুটি করার ঝামেলা তাদের পোহাতে হবে না।


আরও যেসব সুবিধা তারা পাবেন: ব্যক্তিগত টিএসএ স্ক্রিনিং এবং টার্মিনালেই অনসাইট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া। আবার পিএস-এর একজন হোস্টই ব্যাগ-লাগেজ বা মালপত্র বিমানে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে। যখন বিমানের দিকে যাওয়ার সময় হবে, তখন বিএমডব্লিউতে করে একজন ব্যক্তিগত চালক যাত্রীকে পৌঁছে দেবে বিমান পর্যন্ত। এক্ষেত্রে কেউ চাইলে সবার আগে অথবা সবার পরের ব্যাচে বিমানে উঠতে পারবে।


আর টার্মিনালে অপেক্ষার সময়েও চারপাশে শুধুই বিলাসিতার উপকরণ ছড়িয়ে থাকবে ভিআইপি যাত্রীদের জন্য। আপনি চাইলে স্যালন লাউঞ্জ করতে পারেন কিংবা প্রাইভেট স্যুইট নিতে পারেন, যেখানে থাকবে বিনোদনের সেন্টার, জলখাবার, পানীয় এবং একটি আলাদা বাথরুম। পিএস-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্যুইটে সর্বোচ্চ ছয়জন ব্যক্তি ভ্রমণ করতে পারবেন এবং সেখানে শিশুদের বা পোষা প্রাণীদের আরামে নেওয়ার জন্য কাস্টমাইজ করার সুবিধা থাকবে।


ম্যাসাজ এবং দেশীয় সংস্কৃতি


যেহেতু ব্যক্তিগত টার্মিনালের জন্য মোটা অংকের টাকা খরচ করবেনই, সেক্ষেত্রে গ্রাহকের আরও কিছু পাওয়ার চাহিদা থাকতেই পারে। তাই বিশেষ সুযোগ-সুবিধার কমতি রাখেনি পিএস। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, অতিথিরা চাইলে খুবই এক্সক্লুসিভ খাবার, ককটেল এবং বিশেষ শেফদের তৈরি খাবার উপভোগ করতে পারবেন। সেইসঙ্গে ম্যাসাজ, স্পা, মেনিকিউর-পেডিকিউওর, চুল কাটাসহ সৌন্দর্য্য বিষয়ক নানা সেবা গ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে টার্মিনালেই।


এছাড়াও, আটলান্টা টার্মিনালে দেশীয় সংস্কৃতি সংক্রান্ত নানা বিষয় তুলে ধরা হবে এবং কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীদের বিশেষ কিছু শিল্পকর্মও থাকবে। বিমানে ওঠার সময় যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে, বিমান থেকে এই নামার সময়ও ব্যক্তিগত টার্মিনালে সেই একই সুবিধাসমূহ পাওয়া যাবে।


বিমানের দরজা থেকেই পিএস-এর একজন এজেন্ট যাত্রীকে অভিবাদন জানিয়ে নিয়ে টার্মিনালে নিয়ে যাবে এবং সেখানে গিয়েই নিজের মালামাল বুঝে পাবেন যাত্রী।


আবার পিএস ডাইরেক্ট নামক আরেকটি সেবাও নেওয়া যাবে। এর আওতায় সরাসরি একজন চালক আপনাকে বিমানবন্দর থেকে বিএমডব্লিউতে সেডানে করে বাড়িতে পৌঁছে দেবে।


লস অ্যাঞ্জেলেস টার্মিনালের মতো আটলান্টা টার্মিনালেরও বিভিন্ন পথ ও পার্কিং ব্যবহার করার অনুমতি নেওয়া থাকবে।


কত টাকা ব্যয় করতে হবে?


ব্যক্তিগত টার্মিনাল ব্যবহার এবং এত এত বিলাসিতার মূল্য যে কম নয় তা ইতোমধ্যেই অনুমান করা যায়। পিএস আটলান্টার জন্য এরই মধ্যে রিজার্ভেশন নেওয়া হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে আছে বার্ষিক মেম্বারশিপ, যা নিলে খরচ কমে আসবে। কিন্তু গ্রাহকেরা চাইলে ওয়ান-টাইম প্যাকেজও কিনতে পারবেন। প্যাকেজগুলো ওয়ান-ওয়ে অথবা রাউন্ড-ট্রিপ হিসেবে কেনা যাবে।


আপনি যদি এই ব্যক্তিগত টার্মিনাল ব্যবহার করে দেখতে চান, তাহলে সর্বনিম্ন খরচ পড়বে ওয়ান-টাইম স্যালন ব্যবহারের জন্য ১০৯৫ ডলার। আর যদি সর্বোচ্চ সেবা নিতে চান, তাহলে এক বছরের জন্য সকল সুবিধাসহ মেম্বারশিপ প্যাকেজের খরচ পড়বে ৪৮৫০ ডলার। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.