বার্নআউট রোগ নিয়ে কিছু কথা

 


ODD বাংলা ডেস্ক: বার্নআউট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২২ সালে একে একটি আলাদা রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। একটা সময় চিকিৎসকেরা মনে করতেন, বার্নআউট মনস্তাত্ত্বিক কয়েকটি উপসর্গের একটি মিশ্রণ, কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ বেশি থাকলে এটা হতে পারে।


কিন্তু চিকিৎসকেরা এখন জানেন, বার্নআউটের অন্য কারণও আছে। যেমন- ভেনেসা অস্টারহল্ডের হয়েছে। ভেনেসা জানান, ‘আমার বার্নআউটের একটা কারণ, আমার পরিবারে মানসিকভাবে অসুস্থ কয়েকজন সদস্য আছেন। সে কারণে আমাকে অনেকটা সময় সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করতে হয়। এছাড়া আমি অনেক পার্ফেক্টশনিস্ট। চাকরি নিয়ে অনেক বেশি অসুখি ছিলাম। সবসময় মনে হত, চাকরির জগতে আমি নিজের জন্য ঠিক জায়গাটা খুঁজে পাইনি। সে কারণে অনেক কিছুর ট্রেনিং নিয়েছি, অনেক চাকরি বদলেছি।’


সাইকোথেরাপিস্ট মিরিয়াম প্রিস বার্নআউটের অনেক রোগী দেখেন। তিনিও বলছেন, বার্নআউটের অনেক কারণ থাকতে পারে।

সাইকোথেরাপিস্ট মিরিয়াম প্রিস বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত বার্নআউট মানসিক ক্লান্তির একটি শারীরিক লক্ষণ ছাড়া আর কিছু নয়। এটা ডিপ্রেশনের সাথে সংশ্লিষ্ট। অনেকদিন বার্নআউটকে রোগ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। মনে করা হতো এটা, মনস্তাত্ত্বিক কয়েকটি উপসর্গের একটি মিশ্রণ।’


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২২ সালে বার্নআউটকে রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে- তবে শুধু কাজের অনেক চাপ সংশ্লিষ্ট বার্নআউটকে।


ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষ এবং সামাজিক কাজকর্ম বা সেবা খাতে কর্মরত মানুষেরা বেশি ঝুঁকিতে আছেন।


চাকরির সময় ভেনেসাকে নিয়মিত বেশি কাজ করতে হয়েছে। মানুষ ঠিক কখন বার্নআউট অবস্থায় পৌঁছে, তা নিয়ে সাইকোলজিস্টরা অনেকদিন ধরে আলোচনা করছেন।


সাইকোথেরাপিস্ট প্রিস বলেন, ‘যারা ভুক্তভোগী তারা শুরু থেকেই বাইরে একটা পর্দা ঝুলিয়ে রাখেন। শুধুমাত্র বাইরে নয়, ভেতরেও। এর মানে হলো, তারা সতর্কতার প্রথম সংকেতটা উপেক্ষা করেন। সমস্যা হলো, যারা ভুক্তভোগী তারা তাদের ক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ করেন, কিন্তু কাউকে বুঝতে দেন না। এটা করতে গিয়ে তারা একসময় বার্নআউটের পর্যায়ে চলে যান।’


তবে ভেনেসা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- যেটা করা উচিত।


প্রিস জানান, ‘কয়েকটি উপায়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে পারেন। আউটপ্যাশেন্ট হতে পারেন, থেরাপিও নিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ইনপ্যাশেন্ট হওয়া প্রয়োজন... যেখানে আপনি নিজের কাছে ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজে পেতে পারেন, আবার ক্লান্ত হতে পারেন এমন পরিবেশ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।’


ডাক্তার ভেনেসাকে একটি ক্লিনিকে পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। সেখানকার চিকিৎসকেরা বার্নআউটের কারণ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন।


মিরিয়াম প্রিস বলেন, ‘আপনি কিভাবে বার্নআউট পর্যায়ে পৌঁছেছেন, সে সম্পর্কে সচেতন হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিজেকে দায়ী না করে, নিজের অবস্থা-পরিস্থিতি সম্পর্কে আগ্রহ দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত- হেই, এখানে কী হচ্ছে?''


ক্লিনিকে চিকিৎসা শেষে ভেনেসা নিজ শহরে ফিরে যান। সেখানে তিনি নিয়মিত গ্রুপ থেরাপিতে অংশ নেন, যেখানে অন্যদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।


৩২ বছর বয়সী ভেনেসা খোলামেলাভাবে নিজের গল্প বলেন, সামাজিক মাধ্যমে বিষয়গুলো শেয়ারও করেন। তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে আমার প্রতিদিনের জীবন সম্পর্কে বলি, বিশেষ করে বার্নআউটের সময়কার কথা। ফলে অন্য ভুক্তভোগীরা মনে করেন, তারা একা নন। এছাড়া এতে বার্নআউট নিয়ে সচেতনতাও তৈরি হয়।’


ভেনেসা বলছেন, বার্নআউট এড়াতে পারলে ভালো হতো অবশ্যই... তবে জীবনের জন্য আসলে কী গুরুত্বপূর্ণ, বার্নআউট তাকে সেটা দেখিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.