নারীরা সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ঘুরে বেরাতে পারবেন সমুদ্রের পাড়ে, ফিনল্যান্ডের এই দ্বীপে পুরুষ-প্রবেশ নিষিদ্ধ
ODD বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীর বুকে এ এক আশ্চর্য দ্বীপ, যার সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত পুরুষ প্রজাতি। এমন বঞ্চনা বোধহয় শুধুমাত্র নারীদের কঠোর নিরাপত্তার কারণেই। সম্পূর্ণ পুরুষবিহীন সেই দ্বীপের নাম ‘সুপারশি আইল্যান্ড’ (SuperShe Island)। ছোট থেকে বড়, সমস্ত বয়সের নারীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেরাতে পারেন নীল বাল্টিক সমুদ্রে।
পুরুষের নজর নেই বলে এই দ্বীপে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ থাকতে পারেন মহিলারা। ব্যক্তিগত আনন্দের মুহূর্তে জামাকাপড় নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ারও প্রয়োজন নেই মেয়েদের। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের পুরুষদের প্রবেশই এখানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
একেবারে সামান্য পরিচ্ছদে বা, কোনও পোশাকআশাক ছাড়াই, একেবারে নগ্ন হয়ে সমুদ্রের বুকে ভ্রমণে মেতে উঠতে পারেন মহিলারা। দোলনা চড়া, বই পড়া, গান গাওয়া, স্পা অথবা পার্লার ব্যবহার করা, যোগব্যায়াম বা ধ্যান করা, স্নান করা অথবা কিছুই না করে চুপচাপ বসে থাকতেও কোনও বাধা নেই এখানে। নিবিড় অরণ্যে নির্ভয়ে হেঁটেচলে বেরানোর পাশাপাশি এখানে রয়েছে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থাও।
পুরুষতান্ত্রিক বাতাবরণের চেয়ে অনেক দূরে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বাল্টিক সাগরের উপকূলে অবস্থিত ফিনল্যান্ড দেশের সুপারশি আইল্যান্ড। সবুজ অরণ্য আর অসংখ্য হ্রদের সমষ্টি এই দ্বীপে।
হেলসিংকি হল ফিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। হেলসিংকিকে বলা হয় বাল্টিক সাগরের মুক্তো। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাল্টিক সাগর। সেই সাগরের ঠান্ডা নীল-সবুজ জলরাশির উপকূলে রয়েছে সবুজে ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ। নাম তার ‘সুপার-শি’ (SuperShe)। এই দ্বীপের মালিক একজন আমেরিকান মহিলা, নাম ক্রিস্টিনা রথ।
একবার আমেরিকার একটি রিসর্টে ছুটি কাটাতে গিয়ে ক্রিস্টিনা রথের বেশ খারাপ অভিজ্ঞতা হয়। তিনি বুঝতে পারেন যে, নারী পর্যটকদের প্রতি পুরুষ ভ্রমণকারীদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই স্বাভাবিক নয়। বহু পুরুষই ভ্রমণরত মহিলাদের লালসার চোখে দেখেন। অপরদিকে, নারীরাও অবশ্যই কম যান না। তাঁরাও কোনও পছন্দের পুরুষকে দেখতে পেলে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ থেকে সরে গিয়ে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার দিকে বা পুরুষটির কাছে ভাবমূর্তি তৈরি করার লক্ষ্যে লেগে পড়েন ।
তখন থেকেই ক্রিস্টিনা লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলেন যে, শুধুমাত্র নারীদের জন্যই তিনি একটি দ্বীপ রাখবেন, যেখানে নারীরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিরাপদে বাঁচবেন, আর নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। এরপর তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় ফিনল্যান্ডের এক যুবকের। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব তৈরি হয় এবং সেই বন্ধুত্ব প্রেম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সেই প্রেমিকের সঙ্গে ফিনল্যান্ড দেখতে গিয়ে খুব ভালো লেগে যায় ক্রিস্টিনার। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, আমেরিকায় নয়, তাঁর নারী-দ্বীপ থাকবে তাঁর প্রেমিকের মাতৃভূমি ফিনল্যান্ডেই।
দ্বীপ-বহুল দেশের আট দশমিক চার একরের সমুদ্রবেষ্টিত একটি মনোরম দ্বীপ কিনে নিয়ে ক্রিস্টিনা তার নাম রেখেছিলেন ‘সুপার-শি’। বিলাসবহুল অবসরের কেন্দ্র হিসেবে একে গড়ে তোলার জন্য তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন। তাঁর নিজস্ব একটি সংস্থা ছিল, যার নাম ছিল ‘Tech Consulting Company Matisia Consultants’। ২০১৬ সালে ক্রিস্টিনা সেই কোম্পানিটি বিক্রি করে দেন ৬৫ মিলিয়ন ডলারে। সেই টাকা দিয়ে ২০১৭ সালে তিনি এই দ্বীপটি কিনে নেন। ২০১৮ সালের ২৩ জুন থেকে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য খুলে দেওয়া হয় SuperShe দ্বীপ।
‘সুপারশি’ দ্বীপে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল কেবিন। রয়েছে বেশ কিছু ক্যাফে এবং বিলাসবহুল হোটেলও। এই দ্বীপে এক সপ্তাহ সময় কাটাতে খরচ হতে পাড়ে ৩৫০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা)। তবে, শুধু টাকা থাকলেই হবে না, নারী পর্যটকদের নতুন কিছু শেখা ও জানার আগ্রহও থাকতে হবে। ভ্রমণে ইচ্ছুক মহিলাদের প্রথমে অনলাইন আবেদন করতে হবে। তারপর সেই আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে ক্রিস্টিনা রথ নিজে ভিডিও কল করে ইন্টারভিউ নেন এবং তিনি পর্যটকদের নির্বাচিত করেন। এখানে ঘুরতে চাওয়ার জন্য কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ে, সব তথ্য যাচাই করে মাত্র ১০-১২ জন নারীকে নির্বাচন করেন ক্রিস্টিনা।
তবে, পুরুষদের প্রতি কোনও শত্রুতা নেই। কখনও হয়তো, মহিলাদের বিশেষ অতিথি হয়ে পুরুষরাও এই দ্বীপে আসার অনুমতি পাবেন। তবে আপাতত সেই সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন ক্রিস্টিনা রথ।
Post a Comment