জগৎ সংসারের স্রষ্টা বিশ্বকর্মার আরাধনা কেন করা উচিত

ODD বাংলা ডেস্ক: এই জগৎ সংসারের স্রষ্টা কে? কোনও একজন দেবতাকে যদি জগতের সৃষ্টিকর্তা রূপে চিহ্নিত করতে হয়, সেক্ষেত্রে বিশ্বকর্মার নামই বলতে হয়। কারণ, বেদে বিশ্বকর্মাকে বিশ্বস্রষ্টা বলা হয়েছে। পুরাণে অবশ্য বিশ্বকর্মার মূল পরিচয় তিনি দেবশিল্পী।

বিশ্বকর্মা অলংকার ও ভূষণ প্রস্তুতকারক। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য বিশারদ। তাঁর স্থাপত্য বিদ্যার উল্লেখযোগ্য কাজ— কুবেরের  অলকাপুরী, লঙ্কার প্রাসাদ, কৃষ্ণের দ্বারকাপুরী প্রভৃতি। এমনকি স্বর্গলোকও নাকি তাঁরই হাতের জাদুতে গড়া। হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ তাঁরই পরিকল্পনা। তাছাড়া মৎস্য পুরাণের মতে কূপ ও জলাশয় খনন, প্রতিমা নির্মাণ, বাড়ি ও বাগানের পরিকল্পনা এইসব কাজ ও শিল্পের উদ্ভাবক হচ্ছেন বিশ্বকর্মা।

বিশ্বকর্মার জন্ম নিয়ে নানা পুরাণে নানা রকম কাহিনি রয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে ব্রহ্মার নাভিদেশ থেকে বিশ্বকর্মার জন্ম। ভবিষ্যপুরাণ মতে, অষ্টবসুর অন্যতম প্রবাসের ঔরসে এবং বৃহস্পতির ভগিনী বরবর্ণিনীর গর্ভে বিশ্বকর্মার জন্ম। স্কন্দপুরাণে বিশ্বকর্মার পাঁচটি মুখ ও দশটি হাত।

এখন বিশ্বকর্মার যে মূর্তি সর্বত্র পূজিত হচ্ছে, সেই মূর্তির উদ্ভাবক হচ্ছেন কর্মকার সম্প্রদায়ের প্রবক্তা হরষিত কেশরী রায়। অষ্টাদশ শতকে তিনিই প্রথম কলকাতায় এই মূর্তির পুজো প্রচলন করেন।

বিশ্বকর্মা কেবল নিজেই একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি অনেক শিল্পীরও স্রষ্টা। শ্রীরামচন্দ্রের লঙ্কা অভিযানে সমুদ্রগর্ভে যে বিশাল সেতু নির্মাণ হয়েছিল সেই সেতুর নির্মাতা হলেন বিশ্বকর্মার পুত্র। পদ্মপুরাণ অনুসারে দৈত্যশিল্পী ময় বিশ্বকর্মার পুত্র। বিষ্ণুপুরাণ অনুসারে শিল্পী ত্বষ্টাও বিশ্বকর্মার পুত্র। বেদে এই ত্বষ্টাকে দেবশিল্পী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে সমস্ত পুজো তিথি মেনে হলেও একমাত্র বিশ্বকর্মা পুজো সূর্যের স্থান পরিবর্তন অনুযায়ী হয়। এদিন ভাদ্র-সংক্রান্তির দিন সূর্য সিংহ লগ্ন থেকে কন্যা লগ্নে প্রবেশ করে। বৃহৎসংহিতা গ্রন্থ মতে, গ্রীষ্মান্তে যে সূর্য মেঘ রচনা করে বর্ষণের মাধ্যমে কৃষিকর্ম সংরক্ষণ করেন তিনিই বিশ্বকর্মা। বিশ্বকর্মা কৃষিরও দেবতা। তাই তাঁর বাহন হাতি। এদিন কোনও কোনও স্থানে যে ‘রান্নাপুজো’ প্রচলিত রয়েছে, সেও সম্ভবত ওই প্রাচীন শস্যোৎসবের স্মৃতিবাহী।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.