ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরেছে? ঘরোয়া পদ্ধতিতেই মিলবে মুক্তি

ODD বাংলা ডেস্ক: আমাদের দেশের জলবায়ুগত কারণে নোনা ধরা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এতে দেয়ালের সৌন্দর্য ও কাঠিন্য দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবার আগে জেনে নিন নোনা ধরে কেন?

স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া,ঝড়বৃষ্টি, ড্যাম্প হওয়া বা দেয়ালের গাঁথনিতে জমা জল বেশিরভাগ নোনা ধরার কারণ। হাইড্রোজেন গ্যাস এর আয়নিত অবস্থার সক্রিয়তা এই কাজে সহায়ক হয়ে থাকে। বাড়ি নির্মাণে যেসব দ্রব্য ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে যদি সোডিয়াম সালফেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, ও ক্লোরাইড, নাইট্রেট ইত্যাদি লবণের আধিক্যের ফলে দেয়ালে সাদা নুনের অধঃক্ষেপ পড়ে।

এছাড়াও উপযুক্ত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা, কাঁচা ইঁটের ব্যবহার, গৃহনির্মাণ সামগ্রীর ত্রুটির ফলে নোনা লেগে প্লাস্টার খসে পড়ে।

প্রতিকারঃ
১. সঠিক ভেন্টিলেশন- বাড়ির যথোপযুক্ত আলোবাতাস চলাচলের পথ সুনিশ্চিত করুন নাহলে এর কারণে দেয়ালে ড্যাম্প হয়ে নোনার প্রকোপ হতে পারে। জানালা ও দরজার অবস্থান যাতে মুখোমুখি হয় সেটা দেখুন। এর ফলে সব দেয়ালে সমান রোদ ও বাতাস যেতে পারবে। যদি বৃষ্টির কারণে পর্দা ভিজে যায় তবে সেটা নিয়মিত পরিবর্তন করবেন। চেষ্টা করুন ফেব্রিক এর কৃত্রিম পর্দা ইউজ করতে।

২. রঙ-বাড়ির রং নির্ধারণ করে যে তার ভবিষ্যৎ কেমন হবে। অনেকের মধ্যেই বাড়ির অন্দর ও বাইর চুনকাম করার প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলে আরো বেশি করে নোনা ধরে। তাই চেষ্টা করুন এক্রিলিক ইমালশন দিয়ে প্লাস্টিক পেন্ট করাতে বাড়ির দেয়ালে। রঙ করানোর সময় তার মেয়াদ দেখে নিন। বাইরের রোদ, জল ও নোনা ধরার আনুষঙ্গিক কারণ গুলি এতে করে নির্মূল তো হবেই হবে, সাথে উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা ও ধরে রাখবে বহুদিন।

৩. কাঠামো- যদি ইতিমধ্যেই আপনার বাড়ির দেয়ালে নোনা ধরে গিয়ে থাকে তবে বাড়ির কাঠামোর রিমডেলিং করানো খুব জরুরি। পুরোনো প্লাস্টার ছাড়িয়ে নতুন প্লাস্টার এ নোনা রেজিস্টেন্ট রাসায়নিক ব্যবহার করুন। চাইলে পেইন্ট করানোর আগে এন্টি ফাঙ্গাল সল্যুশন লাগিয়ে নিতে পারেন এতে দেয়াল এর স্থায়িত্ব ও শক্তি বাড়ে নোনা প্রতিরোধ করতে।

৪. শীতলপাটি- গরমকালে শীতলপাটি তে ঘুম দেয়নি এরকম মানুষ পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই শীতলপাটি উত্তম শোষক রূপেও কাজ করে থাকে। তাই দেয়ালে আসা অতিরিক্ত আর্দ্রতা এটি এবসর্ব করে নিতে সক্ষম। কাঠের ফ্রেমে আটকে দিতে পারেন দেয়ালে। ইন্টেরিয়র ডিজাইন এ প্লাই ও ইউজ করতে পারেন। এতে বাড়ির বৈচিত্র্য ও সুরক্ষা দুটোই অটুট থাকে।

৫. কিউরিং- কংক্রিটের প্লাস্টার শুকোনোর পর তাকে নিয়মিত সিক্ত রাখা দরকার। যেটা আমরা শুরুতেই অবহেলা করি। প্লাস্টার হবার অন্তত ২০দিন পর তাতে রং চড়ান নইলে নোনা ধরার চান্স ১০০%। রং করবার আগে দেয়াল স্যান্ডপেপার দিয়ে ভালো করে ঘষে ঘষে মাজুন তারপর তাতে প্রাইমার দিন যাতে প্লাস্টার ও রঙের মধ্যে একটা সংযোগ স্থাপন হয়। রং করার সময় রোলার ব্যবহার করুন। এইভাবে দেয়ালের জল শোষণ ক্ষমতা কমে যাবে ও নোনা ও কম লাগবে। এবার যাতে ফাটল না ধরে তার জন্য এনামেল পুট্টি খুব ভালো অপশন।

৬. বুনিয়াদি কৌশল-কাঠামো দৃঢ় হলে তবেই ভবন পোক্ত হয়। দেওয়ালে বাইরের পাশ ও ভেতরের অংশ দুটোতেই আর্দ্রতা রোধ করতে ইঁটের জোড়ের ফাঁকে মোম বা সিলিকেট দ্রবণ লাগান। বিটুমিন শিট, মেটাল বা এসফল্ট শিট ও লাগিয়ে দেখুন খুবই কার্যকরী। বাড়ি বানানোর সময় সিমেন্টের সাথে পামিক বা স্টিয়ারিক এসিড জাতীয় জিনিস মেশান , এগুলো নোনার সাথে মোকাবিলা করতে সমর্থ।

এছাড়াও, 
  • বাড়ির জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক রাখুন। ড্রেনিং, রেনপাইপ ঠিকঠাক আছে কিনা কাজ করছে কিনা সেগুলোর দিকে নজর দিন।
  • ইঁটের ফাঁকের মাঝে ফ্লাশ পয়েন্টিং করাতে ভুলবেন না। বৃষ্টির জল যাতে ছাদে না দাঁড়াতে পারে তার জন্য ঢাল ঠিক রাখুন ও জানলায় সানশেড নির্মাণ অবশ্যই করুন।
  • হাফ কেজি তেঁতুল ও আড়াইশো গ্রাম রসুন এর নির্যাস নিয়ে তা একদিন মতো ফেলে রাখুন। দেয়াল ব্রাশ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে এই মিশ্রণ লাগিয়ে দিন ও তারপর পেইন্ট করান। দেখবেন নোনা ধারে কাছে ঘেঁষবে না।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.