পকেট ক্যালকুলেটর যেভাবে ডিজিটাল যুগের পথ তৈরি করেছে

 


ODD বাংলা ডেস্ক: সর্বশেষ কবে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করেছেন? ছোট ব্যবসায়ীরা ছাড়া অন্যান্য মানুষের উত্তর সম্ভবত হবে 'অনেক আগে' বা হয়তো 'মনে নেই'। কারণ কম্পিউটার ও মোবাইলের গণনা করার ব্যবস্থা থাকায় এক সময়ের বহুল ব্যবহৃত যন্ত্র ক্যালকুলেটর এখন হয় ডেস্কেই পড়ে থাকে কিংবা প্রয়োজনই হয় না। তবে গবেষক কিথ হিউস্টন তার 'এম্পায়ার অব দ্য সাম:  দ্য রাইজ এন্ড দ্যে রেইন অব দ্য পকেট ক্যালকুলেটর'- এ ক্যালকুলেটরকে ডিজিটাল যুগের প্রাথমিক ধাপের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ক্যালকুলেটরই সর্বব্যাপী কম্পিউটিং জগত তৈরিতে সাহায্য করেছে। 


গণনার শুরু প্রায় ৪২ হাজার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায়, ট্যালি স্টিকের হাত ধরে। এরপর আঙুল গণনা এবং পরে আসে অ্যাবেকাস এবং স্লাইড-রুল। তবে হিউস্টন বিবেচনায় নিয়েছেন ১৭ শতকে ঘড়ির কাঁটা গণনা করার ডিভাইসের আবির্ভাবের বিষয়টি। কারণ এটিই পরবর্তীতে আরো ছোট এবং আরো কার্যকর বৈদ্যুতিক যন্ত্রের পথ তৈরি করেছে। 


বর্তমান ব্যবহৃত পরিভাষাগুলোরও অতীতের গণনা পদ্ধতির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে। যেমন 'ডিজিট' এবং 'ডিজিটাল' স্মরণ করায় আঙুল গণনা পদ্ধতিতে। 'ক্যালকুলি' ছিল রোমানদের কর্তৃক গণনার জন্য ব্যবহৃত অ্যাবেকাসের মত যন্ত্রের নুড়ি। আর 'কার্সর' হলো স্লাইড-রুলিংয়ের স্লাইডিং সূচক। আর কম্পিউটার হলো মানুষ, বিশেষ করে নারীরা। তারাই মূলত গণনার কাজ করতেন, অনেক সময় দলবদ্ধ হয়ে। এদেরকে বলা যেতে পারে মানব কম্পিউটার। অর্থাৎ ডিজিটাল যুগের কাজগুলো বা পরিভাষাগুলোর সঙ্গে অতীতের যোগসূত্র আছে। 


এমনকি ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি এক কমিটি কম্পিউটিং শক্তির একক হিসেবে 'কিলোগার্ল' শব্দটি ব্যবহার করেছে।  


হিউস্টন বলছেন. মানব কম্পিউটার হিসেবে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে মার্কিন নভোচারী জন গ্লেনের। তিনি  ইলেক্ট্রো-মেকানিকাল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে মহাকাশযানের গতিপথ পরীক্ষা করার পথ বের করেন। পরে অরবিটাল মেকানিক্স ক্যাথরিন জনসন তা প্রয়োগ করেন। এই ক্যাথরিন জনসনই নভোচারীসহ চাঁদে যাওয়া প্রথম মহাকাশযান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। 


প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ক্যালকুলেটর ক্যাসিও ১৪-এ ছিল বিশাল আকারের। পরে আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপানের কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে ক্যালকুলেটরের ছোট ও সস্তা মডেল বাজারে আসে। এই ছোট আকারের পকেটে এঁটে যাওয়া ক্যালকুলেটর কম্পিউটারের সূচনা ঘটায়। প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর 'ইন্টেল ৪০০৪' তৈরি করা হয়েছিল জাপানি কোম্পানি বুসিকমের এক ক্যালকুটরের জন্য। ১৯৭২ সালে বাজারে আসে এইচপি-৩৫ ক্যালকুলেটর। যা ছিল বাজারে শোরগোল ফেলে দেওয়া এক ইলেকট্রনিক পণ্য। এই  ক্যালকুলেটরগুলোই কম্পিউটিং প্রযুক্তিকে ছোট আকার দেয় এবং মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। 


এরপর আসে গণনার অ্যাপ 'ভিসিক্যালক'। প্রথম স্প্রিডশিট প্রোগ্রামের মাধ্যমেই ব্যক্তিগত কম্পিউটার তৈরির পথ মসৃণ হয়। আর এখন যে ক্যালকুলেটর না খুঁজে দ্রুত কোন গাণিতিক সমাধানের জন্য মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার হয়, তার কৃতিত্বও 'ভিসিক্যালক'-এর।  


ক্যালকুলেটর তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে হিউস্টন তার গবেষণার সমাপনীতে বলেন, 'ক্যালেকুলেটর এখন সর্বত্র আবার একই সাথে কোথাও নেই।'

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.