আগেভাগে অবসরে যেতে চান? তারপরের সময় মনমতো নাও হতে পারে: বলছে গবেষণা



 ODD বাংলা ডেস্ক: নিজেদের গোষ্ঠীর উন্নতির জন্য, জীবনে আরও নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য কিংবা নিজের ভালো লাগা থেকে অনেকেই ব্যবসা আরম্ভ করেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই যা চান তা হলো, কারো অধীনে চাকরি বা কারো সহায়তা ছাড়াই প্রচুর টাকা, যা দিয়ে নিজের ইচ্ছামতো জীবনধারণ করা যাবে এবং কারো আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে হবে না। এ ধরনের অর্থকে 'এফইউ মানি' বলে অভিহিত করা হয়। 


আসলে আইডিয়াটা হচ্ছে ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকা, যেন নিজের খেয়াল-খুশিমতো সবকিছু করা যায়; আর এমন অবস্থানে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষা প্রায় সব মানুষেরই থাকে। কোনো বস এসে কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করবে না, ক্রেতারা এসে নানা দাবি করবে না এবং 'রাশ আওয়ারের' ঝামেলা পোহাতে হবে না... এমন স্বপ্নের জীবন সবারই কাম্য। যদি আপনি যথেষ্ট ধনী হন, তাহলে আপনার পছন্দের সঙ্গে মানানসই নয় এমন যেকোনো প্রস্তাব এলেই 'গেট লস্ট' বলার মতো বাহাদুরি আপনি দেখাতে পারবেন। কে-ই বা না চায় স্বাধীনভাবে বিত্তশালী হতে এবং এভাবেই 'সেমি-রিটায়ারমেন্ট'-এ যেতে! 


প্রকৃতপক্ষে, অনেকেই আসলে এভাবে অবসরে গিয়েছেন; অন্তত ফ্রান্সের ইনসিড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও তাদের সহযোগীদের নতুন একটি গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।


ইনসিড বিশ্ববিদ্যালয়ের উইনি জিয়াং এবং তার গবেষণা সহযোগী, কোচ ক্লেয়ার হার্বার আর্থিকভাবে স্বাধীন এবং প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক, এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সম্প্রতি ইনসিড নলেজ নামক পোর্টালে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন তারা। যারা এখনো মাস শেষে বেতনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তারা হয়তো এই নিবন্ধের সঙ্গে একমত হবেন না যে- ধনী হওয়াও খুব আরামের নয়; বরং এটা উদ্যোক্তাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা যে প্রচুর অর্থবিত্ত থাকলেই যে জীবনে সুখ ও শান্তি থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।


টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইভি উইলিয়ামস যেমনটা বলছেন- "প্রতিদিন স্কিইং করার চেয়ে একটা স্টার্টআপ শুরু করা বেশি মজার কাজ।" এরপরেই গবেষকরা বুঝতে পারেন যে, যেসব ধনীরা তাদেরকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তারা মনে করেন অবসর সময় কাটানো আরও বেশি কঠিন কাজ!


"এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার যে, জীবনে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী সময়টা যতটা আনন্দের হবে বলে আমাদের ধারণা, এটা আসলে ততটা নয়", লিখেছেন গবেষকরা। "নতুন পরিচয় খোঁজা, নেতিবাচক আবেগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং জীবনের পরবর্তী লক্ষ্যস্থির করার মতো চ্যালেঞ্জগুলো তখন সামনে চলে আসে। যেহেতু খুব কম আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবই এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে, তাই এসময় নিজেকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হওয়াও কঠিন নয়। সাক্ষাৎকারদাতারা জানিয়েছেন, তারা এই নতুন জীবনের অর্থ খুঁজে বেড়ান; কিভাবে অর্থবহ উপায়ে সময় কাটানো যাবে এবং বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে-সেই সিদ্ধান্ত নিতেও হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের।


যেহেতু সক্রিয় কর্মজীবনে তারা বেশ সফল ছিলেন, তাই অবসরে যাওয়ার পরেও কোনো না কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থতার ভয় অনেককে ঘিরে ধরে। গবেষকরা লিখেছেন, "এই উদ্যোক্তারা আগেপরে অনেক সফলতা দেখিয়েছেন এবং তারা জানেন যে, তাদের এই সফলতার পেছনে আংশিকভাবে হলেও ভাগ্যের হাত রয়েছে। তাই পরবর্তী যে কাজে জড়াচ্ছেন সেখানেও সফল হবেন কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ তাদের থেকেই যায়। সেই উদ্বেগ থেকেই তারা পরবর্তী পদক্ষেপটা সহযে নিতে পারেন না, অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন।"


কিন্তু তবুও ধনী হওয়ার ইচ্ছা আপনার থাকতেই পারে, কিন্তু...


উপরে যা যা বলা হলো, এগুলো অবশ্য উন্নত দেশের সমস্যা। কে-ই বা যাবে মিলিয়নিয়ার ও বিলিয়নিয়ারদের জন্য চোখের জল ফেলতে! কারণ আমাদের আশেপাশে আরও অনেক মানুষ দুঃখ-দুর্দশায় রয়েছে, যাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো উচিত, যাদের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। আর প্রচুর সম্পদের মালিক হওয়ার পর অবসর কাটাতে গিয়ে কি কি সমস্যায় পড়বেন, সেকথা ভেবে কারো ধনী হওয়ার স্বপ্নও থেমে থাকবে না।


কিন্তু গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন যে, উদ্যোক্তা এবং যারাই আর্থিকভাবে স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখেন- তাদের উচিত এ গবেষণাটির দিকে নজর দেওয়া। কারণ তাদেরও চিন্তা করা উচিত, যখন জীবনে কোনো আর্থিক অসচ্ছলতা থাকবে না তখনকার সময়টা তারা কিভাবে কাটাবেন।


"এখনও এটা চিন্তার সময় চলে যায়নি যে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের পর আপনি কী করবেন? আপনার কাছে থাকা টাকা ও সময় দিয়ে আপনি কী করবেন? যদি সত্যিই আপনি বড় কোনো উদ্দেশ্য পূরণ এবং প্রভাব রাখতে চান, তাহলে কী ধরনের প্রভাব রাখতে চান তা ভেবে রাখুন। অন্যদিকে, আপনি যদি স্রেফ আনন্দ ও মজার জন্য কিছু করতে চান, তাহলে সে অনুযায়ী কি কি কাজ করা যায় তা নিয়ে ভাবুন", বলেন গবেষকরা।


আর যারা এখনও ওই পর্যায়ের সম্পদশালী হতে অনেকটা পথ পিছিয়ে, তারা স্বপ্ন দেখতে থাকুন যে কবে সেই দিন আসবে যখন টাকার জন্য চিন্তা না করে শুধুই সুইমিং পুলের ধারে বা গলফের মাঠে গিয়ে সময় কাটানো যাবে। তবে মুশকিল হচ্ছে, যারা অতি ধনী, তাদের জন্য এ ধরনের অবকাশযাপন নিতান্ত নগণ্য।


মানুষের যত টাকাই থাকুক না কেন, মানুষ সবসময় জীবনের অর্থ খোঁজে। তাই কর্মজীবন শেষে অলস সমুদ্রের তীরে বিলাসী উপায়ে সময় কাটালেই যে জীবন আনন্দের হবে সেই দিবাস্বপ্ন না দেখাই ভালো। তার চেয়ে বরং সময় নিয়ে, গভীরভাবে চিন্তা করুন কিভাবে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের পরেও জীবনে পূর্ণতা নিয়ে আসা যায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.