সময় বেশিই দ্রুত কাটছে বলে মনে হচ্ছে? যে ৪ উপায়ে সময়কে থমকে দিতে পারেন

 


ODD বাংলা ডেস্ক: কোনো একটা কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে? ব্যস, তারপরই মনে হতো থাকল, সময় বুঝি অন্যসময়ের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত যাচ্ছে। আপনার যদি এরকম অনুভূতি হয়, তাহলে এক্ষেত্রে আপনি একা নন।


যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণগত বিজ্ঞানী জেনিফার আকারের ভাষ্যে, 'আজকাল দৈনন্দিন জীবনের গতি অবিশ্বাস্যরকম বেশি।'


বয়স বাড়লে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, সময় বুঝি দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সববয়সী মানুষের কাছেই মনে হচ্ছে — সময় আগের চেয়ে দ্রুত এগোচ্ছে।


মানুষ সময়কে কীভাবে দেখে, অনুভব করে; এসব বিষয় নিয়েও গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করছেন, করোনা মহামারির সময় মানুষ অলস সময় কাটিয়েছিল। তখন দিন যেন সহজে পার হতো না। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মানুষের মাঝে ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে। ফলে মানুষ এখন অনুভব করছে, সময় আগের তুলনায় বেশি দ্রুত কেটে যাচ্ছে।


আবার কোনো কাজ শেষ করার আমাদের যে তাড়না, তাও সময় নিয়ে এ অনুভূতির একটি কারণ বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। কারণ এরকম পরিস্থিতিতে আমরা অলস অপচয় করা সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাই। ফলে নিজেদের জন্য খুবই কঠিন একটি কর্মপরিবেশ তৈরি করি।


অবশ্য ঘড়ির কাঁটার যে সময়, তার দ্রুতি আগের মতোই আছে। কেবল আমরা সময়কে কীভাবে অনুভব করছি, যেভাবে দেখছি — তার পরিবর্তন হয়েছে।


সময়ের অনুভূতি প্রায়ই আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আনন্দ, অভিভূতির মুহূর্তে আমাদের মনে হয়, সময় দ্রুত কেটে যাচ্ছে। আবার দুঃখের সময় সহজেই যেন কাটতে চায় না। একঘেয়ে কোনো লেকচার বা জুম ক্লাসে অংশ নিতে গিয়ে অনেকেই এ ধরনের অনুভূতি কড়ায় গন্ডায় টের পান।


গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যখন কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য তুমুল অনুপ্রেরণা নিয়ে কাজ শুরু করে, তখন তার কাছে মনে হয় সময় অনেক দ্রুত চলে যাচ্ছে।


একটি গবেষণায় গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদেরকে কেক আর পাথরের ছবি দেখিয়ে তারা ওই ছবিগুলো মোট কতক্ষণ ধরে দেখেছে তা অনুমান করতে বলেছিলেন। দেখা গেল, কেকের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীরা বাস্তবে যতক্ষণ ধরে খাবারটির ছবির দিকে তাকিয়েছিলেন, তার চেয়ে কম সময় অনুমান করেছেন।


ইউনিভার্সটি অভ ডেলওয়ারের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফিলিপ গেবলের মতে, কোনো লক্ষ্য অর্জনে কঠিন পরিশ্রম করার বেলায় সময় দ্রুত চলে যাওয়ার অনুভূতি আদতে কাজে সহায়তা করে।


আজকাল অনেকে সময়ের অনুভূতির লাগাম টেনে ধরতে বেশকিছু পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কম ব্যবহার করা, সন্তানদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, বন্ধুদের সঙ্গে পদব্রজে দীর্ঘভ্রমণ ইত্যাদি।


দিনের রুটিন

অনেকেই চান, পরদিন থেকে রুটিন অনুযায়ী দিন কাটাবেন, অকারণে অলস সময় কাটাবেন না। কিন্তু সেই পরদিন চলে এলেও তা আর করা হয়ে উঠে না।


ইউনিভার্সিটি অভ সালজবার্গের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক জোকিম হানসেন বলেন, দিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করলে সময় নিয়ে আমাদেরকে আর সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় না, কারণ তখন আমরা বুঝতে পারি কোন কাজটা কতক্ষণ ধরে করব বা কয়টা নাগাদ শেষ করব।


বড় পরিসরে চিন্তা

আমরা প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে অনেক সময় ব্যয় করি। যেমন, বাচ্চাকে যথাসময়ে স্কুলে দিয়ে আসা, কাজের ডেডলাইনের শেষ ঘণ্টাটা, রান্না শেষ করা ইত্যাদি। এভাবে কাজকে 'টানেল ভিশনে' দেখলে মনে হতে পারে, সময় যেন উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে।


তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বড় দৃশ্যপট নিয়ে চিন্তা করতে হবে, লক্ষ্য অর্জনের বৃহত্তর উদ্দেশ্যে মনোযোগ দিতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি কোথাও ছুটিতে বেড়াতে যাবেন। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা করার সময় আপনি যদি ছোট-ছোট কাজগুলোর ওপর বেশি মনোযোগ দেন, তাহলে আপনি মানসিকভাবে বেশি চাপ অনুভব করবেন।


কিন্তু যদি আপনি আরও বড় পরিসরে চিন্তা করেন যে, আপনার সার্বিক ভ্রমণটি কতটা আনন্দময় হবে, তাহলে আপনার ভেতরের অনুভূতির ঘড়িটিও তুলনামূলক ধীরে চলবে।


কিছু সময় দান করুন

ব্যাপারটা শুনতে সময় অপচয় করার মতো মনে হলেও, গবেষণা বলছে, অন্যকে সময় দিলে আমাদের কাছে মনে হয়, হাতে আরও অনেক সময় আছে। এর ফলে আমাদের আত্মপ্রত্যয় ও কর্মদক্ষতা বাড়ে বলে জানান স্ট্যানফোর্ডের জেনিফার আকার।


কারও জন্য কোনো কিছু করলে আপনার মাথা থেকে নিজের চিন্তা কিছুটা সময়ের জন্য সরে যাবে। আর নিজেকে নিয়ে সবসময় চিন্তা করাটাই আমাদের অনেক সমস্যার অন্যতম উৎস।


তাই মাঝেমধ্যে নিজের কথা না ভেবে অন্য কাউকে একটু সময় দিতেই পারেন। বিশেষ করে যার কথা শোনার কেউ নেই, যার দুটো আন্তরিক কথা শোনা ওই মুহূর্তে ভীষণ জরুরি — তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। আর বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে নিয়মিত টেলিফোনে কথা বলার পরামর্শও দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা।


বিস্মিত হতে শিখুন

আমরা সবাই নিজেদের মতো করে পৃথিবীটাকে দেখি। কিন্তু কোনো বিষয় যদি আমাদের এ দর্শনানুভূতিকে হুট করে বাড়িয়ে তোলে, তখন আমরা অবাক বা অভিভূত হওয়ার অনুভূতি লাভ করি।


এ অনুভূতি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। অবাক হওয়ার মুহূর্তে আমাদের কাছে সময়ের প্রাচুর্যের অনুভূতি তৈরি হয়।


অভিভূত হওয়ার নানা উপায় আছে: প্রকৃতি, সঙ্গীত, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। ঘরের জানালার পাশের গাছটিতে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি বর্ষণ দেখেও বিভোর হতে পারেন, যদি একটু মনোযোগ দিয়ে দেখেন।


ড. জেনিফার আকার চারপাশের সাধারণ বিষয়গুলো থেকে বিস্ময় খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন। 'একটু থমকে দাঁড়ানো, সৌন্দর্যটুকু প্রত্যক্ষ করা, তারপর সেটাকে অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া আমার জীবনের ওপর বড় প্রভাব তৈরি করেছে,' বলেন এ আচরণবিশেষজ্ঞ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.